স্নায়ুতন্ত্রের রোগ ও স্টেম সেল নিউট্রিশান থেরাপী------
ড. শিবেন্দ্র কর্মকার
স্টেম সেল নিউট্রিশন থেরাপিষ্ট
Doctorate & Ph.D in Natural Medicine,USA
স্টেম সেল নিউট্রিশন থেরাপিষ্ট
Doctorate & Ph.D in Natural Medicine,USA
দেহের ¯স্নায়ু তন্ত্র ¯ স্নায়ু কোষ বা নিউরন দিয়ে তৈরি। একটি ¯স্নায়ু কোষের গঠন অন্যান্য দেহ কোষের অনুরুপ। খাদ্য গ্রহন ও খাদ্যকে শক্তিতে রুপান্তর (ক্রেবস সাইকেল) , প্রয়োজনীয়
প্রোটিন সংশ্লেষন (নিউরোট্রান্সমিটার) এই প্রধান কার্য গুলির প্রানরাসায়নিক প্রক্রিয়া একই ধরনের।
স্নায়ু কোষ গুলোর প্রধান কাজ ; বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরির মাধ্যমে সংশ্লেষিত প্রোটিন (নিউরোট্রান্সমিটার) গুলিকে কাজে লাগিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন কোষের মধ্যে সংযোগ সাধন,সংকেত আদান প্রদান এবং এর মাধ্যমে সকল কোষ,টিস্যু ও অঙ্গগুলির কার্য ক্রমের সম্বনয় সাধন করা। তাপ,চাপ,শব্দ,আলো এর প্রতিক্রিয়া গ্রহন, দেহের ভিতরের পরিবেশ কে বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং যে কোন ধরনের বিপদ থেকে দেহকে সতর্ক অবস্থায় নিয়োজিত করা স্নায়ুকোষ’এর প্রধান কাজ।
স্নায়ুকোষ ১ সেকেন্ড এর ১ হাজার ভাগ এর ১ ভাগ সময়ের মধ্যে সংকেত আদান প্রদান এর মাধ্যমে দেহের ভিতর ও বাহিরের সাথে সংযোগ সাধন করে,লক্ষ লক্ষ কার্য সম্পাদন করে থাকে।
স্নায়ু কোষের এক প্রান্ত থেকে একটি সু´ তন্তু বের হয়ে অল্প বা বেশ কিছু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই লম্বা তন্তুটি কে ‘এক্সন’ বা স্নায়ুতন্তু বলে। স্নায়ুকোষ থেকে স্নায়ুবিক উত্তেজনা প্রবাহ এক্সটি দ্বারা অন্যত্র সঞ্চালিত হয়। এক্সনটি সুক্ম আবরন বিশিষ্ট একটি সরু নলের মত। এক্সন এর গাত্র আবরনটি নিষ্ক্রিয় আবরন নয়। স্নায়ুবিক উত্তেজনা সঞ্চালিত হবার কাজে গাত্র আবরনটি সক্রিয় অংশ গ্রহন করে।
অধিকাংশ
স্নায়ু তন্তুই ‘মায়েলিন’ নামক এক প্রকার চর্বিজাতীয় পদার্থের আচ্ছাদনে ঢাকা থাকে। নলাকার মায়েলিন আচ্ছাদনে কিছু দূর পর পর কতক গুলি বিরতি বা ছেদস্থান আছে। ছেদস্থান একমিলিমিটারের মত এবং এক ‘রনভীয়ারের নোড’বলা হয়। একটি স্নায়ু তন্তু বেশ কয়েক ফিট লম্বা হতে পারে। সংবেদি
স্নায়ু র এক্সন পায়ের নখাগ্র হতে মস্তিষ্ক পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। মায়েলিন ¯স্নায়ু তন্তুর জন্য অনেকটা ‘ইনস্যুলেটর’ বা বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের মত কাজ করে।
এক্সন এর বিপরীত দিকে স্নায়ুকোষের মূলদেহ থেকে আরও অনেক গুলি
সুক্ম
শাখা প্রশাখা নির্গত হয়ে নিকটবর্তী স্থানে বিস্তৃত হয়। এদের কে ‘ডেনড্রাইট’ বলে। ড্রেনড্রাইটে কোন মায়েলিন আচ্ছাদন নেই। এদের মাধ্যমে নিকটবর্তী স্নায়ুকোষ হতে উত্তেজনা স্নায়ুকোষটিতে সঞ্চালিত হয়। বহু শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট ড্রেনড্রাইট এর মাধ্যমে একটি স্নায়ুকোষ অপর অনেক গুলো স্নায়ুকোষের মূল দেহ বা এক্সন এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। একক স্নায়ু কোষ একের পর এক সংস্থাপিত হয়ে দীর্ঘ ¯স্নায়ু পথ গঠন করে। কিন্তু স্নায়ুকোষ গুলোর সংযোগ স্থলে এরা একিভূত হয় না। একটি ¯ স্নায়ুকোষের ‘এক্সন’ অন্য ¯স্নায়ু কোষের ‘ডেনড্রাইট্র’ মূলদেহের নিকটবর্তী স্থানে এসে সতন্ত্র ও বিভিন্ন ভাবে যুক্ত হয় মাত্র। দুটি ¯স্নায়ু কোষের সংযোগ স্থানে যে সুক্ম বিরতি স্থান রয়েছে তাকে ‘সীনাপস’ বলে। স্নায়ুবিক উত্তেজনার সংকেত প্রবাহ বিশেষ উপায়ে ‘সীনাপস’ অতিক্রম করতে পারে।
দেহের অধিকাংশ স্নায়ু কোষই মেরুমজ্জা ও মস্তিষ্কের নিরাপদ আশ্রয়ে স্থান লাভ করে। ওদের দীর্ঘ স্নায়ুতন্তু গুলি সম্মিলিত ভাবে ¯স্নায়ুরজ্জু গঠন করে দেহের বিভিন্ন অংশে যায়।
দেহের
¯স্নায়ু গুলো মোটামোটি দুভাগে ভাগ করা যায়।
১/ যে সকল স্নায়ুতন্তুর সাহায্যে ইন্দ্রিয় যন্ত্র ও দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়স্থান থেকে সংবেদী বার্তা মেরুরজ্জু বা মস্তিষ্কের দিকে যায় সে সব স্নায়ুকে ‘অন্তবর্তী ¯স্নায়ু’বলে।
২/ যে সকল ¯ স্নায়ুতন্তুর সাহায্যে মেরুরজ্জু বা মস্তিষ্কের কেন্দ্রিয় নির্দেশবাহী বার্তা দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি,দেহযন্ত্র বা পেশীর নিকট প্রেরিত হয় এদের কে ‘বর্হিবাহী স্নায়ু’ বলা হয়।
মস্তিষ্কেস্নায়ু কোষ’ ছাড়া আর এক প্রকার ক্ষুদ্র জীব কোষ রয়েছে। যাদের সংখ্যা মস্তিষ্কের ‘নিউরন’ অপেক্ষা অনেক বেশী। এই কোষ ‘গ্লিয়া কোষ’ নামে পরিচিত। এই গ্লিয়া কোষের প্রকৃত কার্যাবলী এখনো অজ্ঞাত।
স্নায়ু
কোষ গুলো একে অন্যের উত্তেজনা বুদ্ধি বা অপনোদন করতে পারে। কোন কোন বিশেষ ক্ষেত্রে একটি স্নায়ু কোষ নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ সমূহের গঠন সর্বপেক্ষা জটিল । এরা বহুদিকে ও বহুস্তরে পারস্পরিক সংযোগ রক্ষা করে।
ইন্দ্রিয় স্থান ও সংবেদী গ্রাহী যন্ত্রঃ
সংবেদন কার্য সংগঠিত হবার জন্য সংবেদী গ্রাহীস্থান, সংবেদী অর্ন্তবাহী স্নায়ুপথ এবং মস্তিষ্কে স্নায়ু কেন্দ্রের কার্যগত সমন্বয় প্রয়োজন। চক্ষু,কর্ন ইত্যাদী ইন্দ্রিয় যন্ত্রগুলি সংবেদী সংস্থার অংশ বিশেষ মাত্র। দেহে সব মিলে দশ বার প্রকার বিশেষ ‘সংবেদী গ্রাহীযন্ত্র’ রয়েছে। সংবেদী গ্রাহীযন্ত্র গুলি কোথাও কোথাও সংঘবদ্ধ হয়ে বিশেষ বিশেষ ইন্দ্রিয় যন্ত্রের সৃষ্টি করেছে। কতক গুলি সংবেদী গ্রাহীযন্ত্র ত্বকের ও দেহের বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন ভাবে সংস্থাপিত হয়েছে।
স্পর্শ,চাপ,উত্তাপবোধ ও ব্যাথার জন্য ত্বকের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ বিশেষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাহীযন্ত্র রয়েছে। এ গ্রাহীযন্ত্র গুলি বিশেষ গুন সম্পন্ন ‘গ্রাহী কোষ’ দ্বারা নির্মিত। সংবেদীস্নায়ু তন্তুর এক বা একাধিক অগ্রভাগ এদের মধ্যে প্রথিত থাকে। হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ,হাতের তালুতে ,ঠোঁটে বহু স্পর্শ সংক্রান্ত গ্রাহীযন্ত্র রয়েছে।
স্বাদ ও গন্ধঃ
স্বাদ ও গন্ধ এর গ্রাহীকোষ গুলি
যথাক্রমে জিহ্বা ও নাসিকার অভ্যন্তরে অবস্থিত এবং এই দুইটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে পরস্পর নির্ভরশীলতা রয়েছে। নাক বন্ধ করলে বা ঘানেন্দ্রিয় নষ্ট হলে স্বাদের তীব্রতা ব্যহত হয়। স্বাদ ও গন্ধের ইন্দ্রিয় দুটিকে ‘রাসায়নিক ইন্দ্রিয়’ বলে। কারন এদের গ্রাহীকোষ গুলি বিশেষ বিশেষ রাসায়নিক বস্তুর প্রতি সংবেদনশীল ও বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তুর মধ্যে তারতম্য নিরুপনে সক্ষম।
জিহ্বার উপরিভাগে ছোট ছোট কূপের মতো স্থানে কুড়ির মত ‘স্বাদগ্রাহী’ কোষ গুলি অবস্থিত। কূড়ি গুলি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ও দেখতে একই প্রকার হলেও তাদের কে চার শ্রেনীতে বিভক্ত করা যায়। টক,মিষ্টি,তিতা ও লবনাক্ত এই চার মৌলিক স্বাদ অনুভূতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন চার প্রকার গ্রাহীকোষ রয়েছে। স্বাদ অনুভূতি ওদের সমন্বিত উত্তেজনার উপর নির্ভর করে।
ঘ্রানের গ্রাহীকোষ গুলি দুই মেরু বিশিষ্ট এবং এদের বর্হিভাগে সুক্ম
চুলের
মত অংশ রয়েছে । ঘ্রানের সংবেদী স্নায়ু তন্তু সমূহ মস্তিষ্কের সম্মুখ ন্নিম ভাগে অবস্থিত “অলফ্যাক্টরী লোব’ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এই লোব মস্তিষ্কের ‘লিমবিক গঠনতন্ত্রের অংশ বিশেষ।
দৃষ্টিঃ
চক্ষুর অভ্যন্তরে এবং পশ্চাৎ গাত্রে ‘রেটিনা’ স্তর অবস্থিত। দৃষ্টি ‘গ্রাহীকোষ’ গুলি এই রেটিনা স্তরেই থাকে।
কোন বস্তু থেকে নির্গত অথবা প্রতিফলিত আলোক রশ্মি গুলিকে চক্ষুর লেন্স ফোকাস করে রেটিনার পটে বস্তুটির ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি সৃষ্টি করে। প্রতিকৃতির আলোক রশ্মি গুলি রেটিনার ‘গ্রাহীকোষ’ গুলিকে বিভিন্ন মাত্রায় উত্তেজিত করে। অপটিক স্নায়ুর তন্তু বেয়ে দৃষ্টির সংবেদী স্নায়ুবিক উত্তেজনা মস্তিষ্কে গমন করে।
রেটিনার গ্রাহীকোষ গুলি বহুস্তরে বিভক্ত এবং এরা দেখতেও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। প্রথম স্তরের গ্রাহীকোষ গুলি ‘রড’ এর মত বা ‘কোন’এর মত। ‘কোন কোষ’ রং বিশ্লেষন এর জন্য দায়ী। উজ্জল আলোকে রঙ্গীন ও তীক্ষ্ম দৃষ্টির অনুভুতি ‘কোন’ এর জন্য সম্ভবপর। রড কোষ ক্ষীন আলো ও বস্তুর গতিশীলতার প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল। একটি চক্ষুতে ৭০ লক্ষ ‘কোন’কোষ ও প্রায় ১৩ কোটি ‘রড’ কোষ রয়েছে। রড ও কোন স্তরের প্রাথমিক উত্তেজনা আরও দুটি প্রধান স্তরের স্নায়ুকোষ’ পার হয়ে অপটিক স্নায়ুর স্নায়ুকোষএ যায় পরে স্নায়ুতন্তু সমূহে প্রবেশ করে। মধ্যবর্তী স্তরে স্থানীয় ভাবে যোগাযোগ ও সহযোগের জন্য বহু বৈশিষ্ট্যপূর্ন স্নায়ুকোষ’ রয়েছে।
দৃষ্টির ‘গ্রাহীকোষ’ গুলো ৪০০ মাইক্রোমিউ (m mu) থেকে ৭৬০ মাইক্রোমিউ তরঙ্গ বিশিষ্ট আলোক রশ্মির প্রতি সংবেদনশীল। ৫৫০ মাইক্রোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘের “সবুজ হলদে’ আলোকের প্রতি ‘গ্রাহীকোষ’গুলির সংবেদনশীলতা সর্বাধিক। ‘কোন’ জাতীয় দৃষ্টির গ্রাহীকোষ গুলি কার্য দিক থেকে তিনটি মৌলিক রং লাল,সবুজ ও নীল এর
প্রতি সংবেদনশীল।
শ্রবনঃ
শ্রবনের
গ্রাহীকোষ গুলি কর্নের অভ্যন্তরে ‘ককলিয়া’ অংশে অবস্থিত। শব্দের তরঙ্গ কর্নপটহকে আন্দোলিত করে। কর্নপটহ এর কম্পন প্রথমে মধ্যকর্ণের তিনটি অস্থি ও পরে অন্তঃকর্ণের তরল পদার্থে কম্পন সৃষ্টি করে।
সমগ্র ‘ককলিয়া’টি দেখতে একটি প্যাঁচানো শামুকের মত। ককলিয়ার সরু প্যাঁচানো নালীর মাঝামাঝি একটি প্যাচানো দৃঢ় পর্দা রয়েছে। এই পর্দার উপরেই শ্রবনের ‘গ্রাহীকোষ’ গুলো বা ‘কটিরযন্ত্র’ অবস্থিত। গ্রাহীকোষ গুলির অনেকেরেই উপরি ভাগে সুক্ষ্ম চুলের মত অগ্রভাগ রয়েছে। উপর দিক থেকে একটি পর্দা ‘গ্রাহীকোষ’ গুলির উপর ঢাকনার মত পড়ে থাকে। ককলিয়ার তরল পদার্থ আন্দোলিত হলে কটিরযন্ত্র এর নীচের দৃঢ় পর্দাটি কেঁপে উঠে এবং গ্রাহীকোষ আন্দোলিত হয়। এদের চুলের মত অগ্রভাগ তখন উপরের ঢাকনাটিকে কম বেশী স্পর্শ করে। নীচের পর্দার কম্পন ও উপরের পর্দার স্পর্শ ‘গ্রাহীকোষ’ গুলির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই বিক উত্তেজনা ককলিয়ার স্নায়ুর তন্তু বেয়ে মন্তিষ্কে যায়। গ্রাহীকোষ গুলো প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২০,০০০ স্পন্দন মাত্রার শব্দ অনুভব করতে পারে। ১৩০ ডেসিবল মাপের অধিক চাপ বিশিষ্ট শব্দ কানে বেদনা দায়ক চাপের সৃষ্টি করে।
ককলিয়ার নিকটেই ‘ইউট্রিকল’ ও ‘স্যাকীউল’ অংশে দেহের স্থিতি বা অবস্থান উপলব্ধি করার ‘ইন্দ্রিয় স্থান রয়েছে। নিকটবর্তী
তিনটি পরস্পর সংযুক্ত অর্ধচন্দ্রাকৃতির নালিকার মধ্যে দেহের গতীয় অবস্থান উপলব্ধি করার ‘ইন্দ্রিয়’ যন্ত্র বিদ্যমান। ‘ইউট্রিকল’ ও ‘স্যাকিউল’ এর বিভিন্ন অংশে ও ‘অর্ধচন্দ্রাকৃতি’ নালিকা গুলোর গোড়ার দিকে অবস্থান সংক্রান্ত ‘গ্রাহীকোষ’ রয়েছে। এদের অনেকরেই অগ্রভাগে চুলের মত অংশ রয়েছে। মাথা বা দেহ কোন দিকে কাত হলে অথবা ঝুঁকে পড়লে ‘ইউট্রিকল’ ও স্যাকিউল’ এর গ্রাহীকোষ এ বিশেষ প্রকার চাপ জনিত উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অস্বাভাবিক অবস্থানে উত্তেজিত হলে এরা মস্তিস্কেস্নায়ু বিক বার্তা প্রেরন করে। প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক তখন দেহের পেশী গুলোকে সক্রিয় করে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
‘অর্ধাচন্দ্রকৃতি’ নালিকা গুলোর ‘গ্রাহীকোষ’ দেহের গতির দিক পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল।
ইন্দ্রিয় স্থান গুলি সংবেদী স্নায়ুতন্তুর প্রান্ত দেশে অবস্থিত। এরা পারিপার্শি¦কতা সাথে দেহের সংযোগ রক্ষার কাজে নিযুক্ত। ‘ইন্দ্রিয়’ যন্ত্র গুলোর সাধারন গুন এই যে,এরা শক্তি হস্তান্তর করতে সক্ষম। এরা বর্হি জগতের বিভিন্ন শক্তিকে
যেমন,আলো,শব্দ,চাপ,তাপ,রাসায়নিক গুন ইত্যাদী কে তাড়িত রাসায়নিক (Electro chamical) শক্তিতে রুপান্তরিত করে। এই তাড়িত
রাসায়নিক শক্তি স্নায়ুবিক’ শক্তি রুপে স্নায়ুতন্তু ’এর মধ্যে সঞ্চালিত হয়। ইন্দ্রিয় যন্ত্রের ‘গ্রাহীকোষ’ গুলো কার্যগত দিক থেকে শক্তি হস্তান্তরকারী যন্ত্র বা ‘ট্রান্সডিউসার’ বলা হয়।
স্পাইনাল কর্ড বা মেরুরজ্জু (Spinal cord):
স্পাইনাল কর্ড কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সর্ব নিন্ম বিভাগ। দেহের বহু প্রক্রিয়া মেরুরজ্জু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
মেরুরজ্জুর মধ্যবর্তী স্থানে যে ‘ধুসরাংশ’ রয়েছে সেখানে স্নায়ুকোষ’ এর মূলদেহ অবস্থিত। ধুসরাংশটি বেষ্টন করে চর্তুদিকে মেরুরজ্জুর ‘শুভ্রাংশ’ রয়েছে। শুভ্রাংশে কেবল স্নায়ুতন্তু’ই অবস্থিত। স্নায়ুতন্তু গুলি স্থানে স্থানে দলবদ্ধ হয়ে ‘স্তম্ভাকৃতি’এর রুপ লাভ করে। শুভ্রাংশের স্নায়ুস্তম্ভ বেয়ে অসংখ্য স্নায়ুতন্তু দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে ‘মস্তিষ্কে’ অথবা ‘মস্তিষ্ক’ থেকে ‘মেরুরজ্জু’তে যায়।
মেরুরজ্জুর সম্মূখ ভাগ ও পশ্চাৎ ভাগ থেকে অনেক স্নায়ুতন্তু নির্গত হয়। স্নায়ুতন্তু গুলি মেরুদন্ডের কশেরুকা অস্তিখন্ডের মধ্যবর্তী নালিকা পথে বের হয় এবং দেহের বিভিন্ন অংশে বিস্তৃত হয়। সংবেদী স্নায়ুমেরুরজ্জুর পেছনে এবং মটর স্নায়ু এর সামনে অবস্থিত। মেরুরজ্জুর বাইরে এসে এরা মিলিত হয় ও মেরুজাত স্নায়ুতন্তু গঠন করে। দেহে সর্বমোট ৩১ জোড়া মেরুজাত স্নায়ু আছে।
স্নায়ুতন্ত্রের প্রাথমিক প্রতিবর্তী ক্রিয়া মেরুরজ্জুর মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। প্রতিবর্তী ক্রিয়ার স্নায়ু কোষ সমূহ মেরুরজ্জুতে আড়াআড়ি ভাবে বিদ্যমান। দেহের বিভিন্ন খন্ডের মধ্যে প্রতিবর্তী ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন
একক সংস্থা মেরুরজ্জুতে উপর থেকে নীচে থাকে থাকে সাজানো রয়েছে।
প্রাথমিক প্রতিবর্তী অংশগ্রহনকারী স্নায়ুকোষ সমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১/ সংবেদী স্নায়ুকোষঃ
এদের মুলদেহ ও নিউক্লিয়াস মেরুরজ্জুর কাছে পেছনের দিকে অবস্থিত। এদের স্নায়ুতন্তুর এক প্রান্ত চর্মে,পেশীতে ,অস্থি সন্ধিতে স্থিত বিভিন্ন গ্রাহীকোষ এর সাথে যুক্ত। অন্যপ্রান্ত মেরুরজ্জুতে প্রবিষ্ট হয়।
২/ মধ্যবর্তী
স্নায়ু কোষঃ
এরা মেরুরজ্জরু ধুসরাংশে অবস্থিত । সংবেদী স্নায়ুকোষ এর মেরু প্রান্ত থেকে ,মেরুরজ্জুতে অবস্থিত অন্তিম মোটরস্নায়ু কোষ’এর মুলদেহ পর্যন্ত এরা পরিব্যাপ্ত। এদের মূলদেহ ধুসরাংশের পশ্চাৎ শাখায় অবস্থিত। এরা পরিমেলকারী স্নায়ুকোষ’ এবং সেই কারনে অনেক সময় মেরুরজ্জুতে উপর নীচে প্রসারিত হয়ে বিভিন্ন খন্ডের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি করে।
৩/ অন্তিম মটর স্নায়ুকোষঃ
এদের মূলদেহ মেরুরজ্জুর ধসরাংশের সম্মূখ শাখায় অবস্থিত। এদের বর্হিবাহী এক্সন মেরুরজ্জুর পুরো মূল
থেকে নির্গত হয় এবং দেহের ঐচ্ছিক পেশি গুলির মধ্যে গমন করে। অন্তিম মোটর স্নায়ুকোষ গুলির উত্তেজনাই ঐচ্ছিক পেশি গুলির মধ্যে গতি সঞ্চালন করে।
মেরুরজ্জুর মধ্যে নিন্ম গামী স্নায়ুতন্তু সমূহ বর্হিবাহী বা মোটর জাতীয়। মেরুরজ্জুর স্নায়ুকোষ গুলোর মাধ্যমেই মস্তিষ্কের অধিকাংশ স্নায়ুবিক বার্তা ঐচ্ছিক পেশী সমূহের কাছে প্রেরিত হয়।
মেরুরজ্জুর যে স্নায়ুতন্তু উর্ধ্বগামী তারা সংবেদী সংকেতমালা মের্রুজ্জু থেকে বহন মস্তিষ্কে নিয়ে যায়। উদ্ধগামী স্নায়ুতন্তু গুলি মের্রুজ্জু অতিক্রম করার পর মস্তিষ্কের নিন্মভাগে ওদের পার্শ্ব পরিবর্তন করে।
অর্থাৎ সংবেদী স্নায়ুতন্তু গুলো দেহের যে পাশে থেকে উদ্ভূত,মস্তিষ্কে এরা অপর পাশে যায়। অনুরুপে নিন্মগামী মটর স্নায়ুতন্তু সমূহ মস্তিষ্কের যে পাশ থেকে উদ্ভূত ,পাশ পরিবর্তন করে মেরুরজ্জুর অপর প্রান্তে প্রবেশ করে।
উদ্ধগামী ও নিন্মগামী স্নায়ুতন্তু গুলি পথে দিক পরিবর্তন করে বলে ,মস্তিষ্কের বাম দিকের অংশ দেহের ডান দিকে ও মস্তিষ্কে ডান দিকের অংশ দেহের বাম দিকে নিয়ন্ত্রন করে।
স্বায়ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্র (অটোনমিক নার্ভাস সিসটেম)ঃ
স্বায়ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এর স্নায়ুগুলি দেহের বিভিন্ন আস্তর যন্ত্র, গ্রন্থি, রক্তবাহী ধমনী ও উপধমনীর কাজ নিয়ন্ত্রন করে। স্বায়ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রেও সাথে মেরুরজ্জু ও মস্তিষ্কেও বৈশিষ্ট্যপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে।
স্বায়ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রে দুটি প্রধান বিভাগঃ
১/ সিমপ্যাথেটিক :
দেহের আস্তর যন্ত্র গুলো এই উভয় জাতীয় স্বায়ত্বশাসিত মটর স্নায়ুদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এদের কোনটি আস্তর যন্ত্রকে উত্তেজিত করে,কোনটি অবদমিত করে। উত্তেজনা ও অবদমনের দ্বৈত স্নায়ুবিক শাসনের মাধ্যমে আন্তর যন্ত্র গুলোর কাজে গতিময়তার সাথে নিয়ন্ত্রিত হয়। সিমপ্যাথেটিক বিভাগের স্থানীয় গ্যাংলিয়া গুলো মেরুরজ্জুর দুই পাশে গুটিকা সম্বনিত দুটি মালার মত অবস্থিত। মেরু রজ্জুর বিভিন্ন খন্ড থেকে সিমপ্যাথেটিক মোটর স্নায়ুতন্তু গুলো প্রথমে এই ‘গ্যাংলিয়া’য় যায়,পরে গ্যাংলিয়ায় অবস্থিত স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে আন্তর যন্ত্র গুলির গায়ে জালির মত বিস্তৃতি লাভ করে।
২/ প্যারাসিমপ্যাথিটিকঃ
এই স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কের নিন্মভাগ ও মেরুরজ্জুর নিন্মবর্তী কয়েকটি খন্ড থেকে নির্গত হয়ে সরাসরি আন্তর যন্ত্রে চলে যায়। এদের স্থানীয় গ্যাংলিয়া গুলো বিভিন্ন ভাবে দেহ যন্ত্রের গায়ে বা অতি নিকটে অবস্থিত।
ভেগাসস্নায়ু প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু
গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন স্নায়ু ভেগাস স্নায়ু একাইই হৃদপিন্ড,শ্বসনালী,পাকস্থলি,অন্ত্র,যকৃৎ,অগ্ন্যাশয়,বৃক্ক,ইত্যাদী বহু আন্তর যন্ত্র নিয়ন্ত্রন এর কাজে অংশ গ্রহন করে।
মস্তিষ্কের মৌলিক গঠনঃ
সেরিব্রাল কর্টেক্স মস্তিষ্কের প্রধান ধুসরাংশ। পুরো মস্তিষ্কটির বর্হিভাগ আবৃত করে রয়েছে অসংখ্য স্নায়ুকোষ’। এই ছাড়া অসংখ্য স্নায়ুকোষ স্থানে স্থানে সংঘবদ্ধ হয়ে কতক গুলো বড় বড় স্নায়ুকেন্দ্রের সৃষ্টি করে। অন্যত্র বহু ছোট ছোট স্নায়ুকেন্দ্র ও বিচ্ছিন্ন ¯স্নায়ু কোষ রয়েছে। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে যে সব স্থানে স্নায়ুতন্তু গুলোর প্রাধান্য সেটা মস্তিষ্কের শুভ্রাংশ। সেখানেও বহু ¯স্নায়ু কোষ স্নায়ুতন্তু গুলোর মাঝে মাঝে বিছিন্ন ভাবে অবস্থান করে।
মস্তিষ্কের স্নায়ুকেন্দ্র গুলোর কোন কোনটি প্রত্যক্ষ ভাবে সংবেদী বা অথবা মোটর কাজে নিযুক্ত। বহু কেন্দ্র আছে যারা পরোক্ষ ভাবে মোটর বা সংবেদী কাজে প্রভাব বিস্তার করে। একটি স্নায়ু কেন্দ্র অন্য একটি স্নায়ু কেন্দ্রের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
মস্তিষ্কের সকল অংশ এবং স্নায়ুতন্তু সমূহের মধ্যে জটিল যোগায়াগ,জঠিল কার্যক্রম অনুধাবন সম্ভব নয় ।
মস্তিষ্কের প্র্রধান অংশ গুলোঃ
১/ মস্তিষ্ক কান্ড বা ব্রেইন স্টেমঃ
মেডুলা অবলংহটা,পন্স
ও
মধ্য মস্তিষ্ক নিয়ে মস্তিষ্কের এই অংশ গঠিত। মেডুলায় বেশ কয়েকটি স্নায়ুকোষ কেন্দ্র অবস্থিত এবং তা খেকে কয়েকটি মস্তিষ্ক জাতীয় স্নায়ুবের হয়। মুখ মন্ডলী, মাথার অংশের ত্বক
ও পেশী ,জিহ্বা মুখের তালু ,কন্ঠ এলাকায়
সংবেদী ও মোটর স্নায়ুগুলো মেডুলা থেকে বের হয়।
শ্বসন কাজ ও হৃদপিন্ডের কাজ নিয়স্ত্রন করার স্নায়ু গুলোও মেডুলায় অবস্থিত। মেরুরজ্জুর মত মেডুলারও পেছন ভাগ সংবেদী ও সামনের অংশে মোটর স্নায়ুগুলি অবস্থিত।
পন্স এর অধিকাংশ স্থান জুড়েই উর্দ্ধ ও নিন্মগামী স্নায়ুস্তম্ভ’ গুলি অবস্থিত। এদের মধ্যে ছোট ছোট স্নায়ুকেন্দ্র’ও আছে। সে সকল কেন্দ্র থেকে বহু ¯স্নায়ুতন্তু আড়াআড়ি ভাবে বিপরীত দিকের ‘সেরিবেলাম’ এর সাথে ‘পন্স’ কে যুক্ত করে।
২/
সেরিবেলামঃ
পনস এর পশ্চাতে অবস্থিত ‘সেরিবেলাম’ অসংখ্য ভাজ যুক্ত বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত । সেরিবেলাম এর বাইরের স্তর ধুসরাংশ ও ভিতরের স্তর শূভ্রাংশ ।
দেহের ঐচ্ছিক পেশী গুলোর সংকোচন মাত্রা ,তাল ও স্বাভাবিক টানের উপর সেরিবেলাম প্রভাব
বিস্তার করে। কর্টেক্স ও থ্যালামাসের সাথে ‘সেরিবেলাম’ এর উভয়মূখী যোগাযোগ রয়েছে। কর্টেক্স ও থ্যালামাস এর মাধ্যমেই ‘সেরিবেলাম’ ঐচ্ছিক পেশীর উপর পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে।
সেরিবেলাম আঘাত প্রাপ্ত বা ক্ষতি গ্রস্ত হলে পেশি গুলোর স্বাভাবিক টান কমে যায় এবং এদের কাজের সংগতি লোপ পায়। যার সেরিবেলাম ক্ষতি গ্রস্ত হয় তার পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর । হাঁটতে গেলে আঁকাবাঁকা ও অসংযত অগ্রসর হয়।
৩/
থ্যালামাস,হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটরী গ্ল্যান্ডঃ
মস্তিষ্কের মাঝামাঝি নিন্ম স্থান জুড়ে ‘থ্যালামাস’ অবস্থিত। নিচের ভাগ হাইপোথ্যালামাস নামে পরিচিত। থ্যালামাস মস্তিষ্কের কেন্দ্রিয় সংবেদন কাজের একটি প্রধান কেন্দ্র ও রিলে স্টেশন। অনেক মেরুজাত ও মেডুলা থেকে উদ্ভুত উর্দ্ধগামী স্নায়ুস্তম্ভ থ্যালামাসের পেছনের অংশে এসে শেষ হয়। স্পর্শ,বেদনা,তাপ সংবেদন ও অন্যান্য বহু সংবেদী কাজ নিযুক্ত স্নায়ুতন্তু ‘থ্যালামাসে’ বাঁধা পায়। থ্যালামাসের স্নায়ু কেন্দ্র গুলি থেকে
নতুন স্নায়ুতন্তুর মাধ্যমে সংবেদী সংকেত ‘কর্টেক্সে’ যায়। শ্রবন ও দৃষ্টি সংক্রান্ত স্নায়ুতন্তু গুলিও ‘থ্যালামাসে’ বাঁধা পায়।
হাইপোথ্যলামাস ও নিকটবর্তী ‘লিমবিক তন্ত্র’ সহজাত আচরন ও ভাবাবেগ নিয়ন্ত্রন করে। সহজাত আচরন ও ভাবাবেগ জনিত দেহ যন্ত্র গুলির নিয়স্ত্রন প্রধানত ‘হাইপোথ্যালামাস’ এর মাধ্যমেই সংগঠিত হয়।
দেহের উষ্ঞতা নিয়ন্ত্রন,ক্ষুধার উদ্রেক ও খাদ্য গ্রহন,তৃষ্ঞা ,জলপান,দেহে জল ভাগের ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন,যৌন আচরন নিয়ন্ত্রন
ইত্যাদী সহজ আচরন ও ভাবাবেগ মূলতঃ হাইপোথ্যালামাস
দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত। এতে বিশেষ বিশেষ আনন্দদায়ক অনুভূতি কেন্দ্রও রয়েছে।
পিটুইটরী গ্ল্যান্ডঃ
হাইপোথ্যালামাসের নীচের দিকে বৃন্তের সাহায্যে সংযুক্ত ক্ষুদ্র ফলের মত একটি অঙ্গ রয়েছে। এটাই ‘পিটুইটরী গ্ল্যান্ড’। এটির পশ্চাৎ খন্ড এর গঠন স্নায়ুবৎ এবং সম্মূখ খন্ড বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পূর্ন বৈশিষ্ট্য পূর্ন ‘হরমোন’নিঃসৃত হয়ে সরাসরি রক্তে মিশ্রিত হয়। মিশ্রিত রস রক্ত প্রবাহের সাথে দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং রাসায়নিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য নালীহীন রস নিঃসরনকারী গ্রন্থি (যথা,থাইরয়েড,অগ্ন্যাশয়,যৌন গ্রন্থি, এড্রেনাল কর্টেক্স) গুলির কাজ নিয়ন্ত্রন করে। একটি বৈশিষ্ট্য পূর্ন ‘হরমোন’দেহের গঠন ও সামগ্রীক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করে।
৪/
ব্যাসাল গ্যাংলিয়াঃ
থ্যালামাসের উপরি ভাগে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে এটি অবস্থিত। এর সাথে থ্যালামাস ও কর্টেক্স ্এর ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছ। ঐচ্ছিক পেশী গুলোর কাজে অধিকতর নমনীয়তা ও মসৃনতা আনয়ন করে। ব্যাসাল গ্যাংলিয়ার অকার্যতার কারনে ‘পার্কিনসন্স’রোগ হয়।
৫/
করোটিজাত স্নায়ু
মস্তিষ্ক
প্রধানত মেরুরজ্জুর মাধ্যমেই দেহের বিভিন্ন অংশের সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করে। তবে মেরুরজ্জু ব্যাতিত মস্তিষ্কের দুই অর্ধাংশের ১২টি করে স্নায়ু
রয়েছে।
৬/
লিমবিক তন্ত্রঃ
হাইপোথ্যালামাসের কিছুটা উপরে ,মস্তিষ্কের নীচের দিকে ও মাঝামাঝি নাভি স্থলে কতকটা ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে ‘লিমবিক তন্ত্র’ এর বিভিন্ন অংশ অবস্থিত। খাদ্য,আহার গ্রহন ও যৌন প্রবৃত্তি সংক্রান্ত আচরন সমূহ ‘লিমবিক তন্ত্র’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ছাড়া ও আনন্দ,দুঃখ,ভয়,আগ্রাসন,বন্ধুত্ব,পছন্দ,অপছন্দ ইত্যাদী ভাবাবেগ সংক্রান্ত শারীরিক ও আচরন গত দিক সমূহ হাইপোথ্যালামাসের সমন্বয়ে ‘লিমবিক তন্ত্র’এর মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়।
৭/
সেরিব্রামঃ
মস্তিষ্কের সমগ্র সম্মূখ,পশ্চাৎ ও উপরিভাগ জুড়ে সেরিব্রাম বা গুরুমস্তিষ্ক অবস্থিত। এর বাইরে ধুসরাংশ ও অভ্যন্তরে শুভ্রাংশ। বাইরের ধুসরাংশকেই সেরিব্রেল কর্টেক্স বলা হয়। অসংখ্য ভাজের ফলে মস্তিষ্কের সার্বিক আয়তন বৃদ্ধি না করেও কর্টেক্স এর আয়তন বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। সেরিব্রাম এর প্রায় সকল স্নায়ুকোষ দেহই কর্টেক্সে অবস্থিত। কর্টেক্সের ধুসরাংশ বিভিন্ন খানে বিভিন্ন পরিমানে গভীর। কার্যগত দিক থেকে ‘কর্টেক্স’ অনেক গুলো প্রধান এলাকায় ভাগ করা যায়।
কর্টেক্স এর মধ্যস্থ প্রধান ভাজের সম্মূখবর্তী অংশ এর প্রধান মোটর এলাকা। মেরুরজ্জুর নিন্মগামী স্নায়ুস্তম্ভ গুলির মূলদেহ এই এলাকায় অবস্থিত। প্রধান মোটর এলাকায় দেহের ঐচ্ছিক পেশী গুলোর জন্য সংক্ষিপ্ত অথচ পুঙ্খানুপুঙ্খ স্থান নির্দিষ্ট রয়েছে। মস্তিষ্কের কোন এক পাশের মোটর এলাকায় কেবল দেহের অপর পাশের পেশী গুলোর অভিক্ষেপ রয়েছে। এখানে পেশী গুলোর প্রতনিধিত্ব উপর থেকে নীচে উল্টো করে সংস্থাপিত। অর্থাৎ উপরের দিকে প্রথমে পা,তারপর দেহ,হাত এবং তারও নীচে মাথা ও মুখের প্রতিনিধিত্ব অবস্থিত।
মধ্যস্থ প্রধান ভাজের পশ্চাৎবর্তী অংশ ত্বকের প্রধান সংবেদী এলাকা। ত্বকে অবস্থিত সংবেদী গ্রাহী স্থান গুলোর এটাই উচ্চতম কেন্দ্র। দৈহিক অনুভুতি
যেমন,স্পর্শ,চাপ,ব্যথা,উত্তাপ এই এলাকায়
চেতনা লাভ করে। প্রধান মোটর এলাকার মত দেহিক সংবেদী এলাকায়ও সমস্ত দেহের (প্রধানত ত্বক) সংক্ষিপ্ত অথচ পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
মোটর এলাকার মত দৈহিক সংবেদী এলাকায়ও আঙ্গুল,হাত,মুখ ও ঠোঁটের প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলক বড় বড় এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
পাশের প্রধান ভাঁজের কাছাকাছি মস্তিষ্কের পাশের খন্ডে শ্রবনের প্রধান সংবেদী এলাকা অবস্থিত। শ্রবনের প্রধান এলাকার অংশ বিশেষ ধ্বংশ হলে বিশেষ বিশেষ স্পন্দন মাত্রার শব্দের প্রতি বধিরতা সৃষ্টি হয়। শ্রবনের প্রধান এলাকা ও মানসিক এলাকা ‘বাকশক্তি’র উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করে।
বাকশক্তিঃ
একটি জটিল,ঐচ্ছিক ও মানসিক ক্রিয়া । শ্রবন ব্যতিত বৈশিষ্ট্য পূর্ন শব্দ,প্রতীক গুলো নির্মান বা তাদের স্মৃতি ধারন সম্ভব নয়। অন্যদিকে কন্ঠ,জিহ্বা,কন্ঠতালু ও ঠোঁটের পেশী গুলোর ঐচ্ছিক সঞ্চালন ব্যতিত বৈশিষ্ট্য পূর্ন শব্দ উচ্চারন করা সম্ভব নয়। প্রধান মোটর এলাকার ঠিক সামনে,মস্তিষ্কের পুরো খন্ডের পার্শ্ব স্থানীয় অংশে বাকশক্তির মোটর এলাকা অবস্থিত। বাকশক্তি জন্য মানুষের মস্তিষ্কে বিশাল এলাকা নিয়োজিত আছে। বাকশক্তি নিয়ন্ত্রনের মস্তিষ্কের অংশ ক্ষতি হলে,কথা বলার কাজে নানা জড়তা ও বিঘœ সৃষ্টি হয়।
মস্তিষ্কের মধ্যপশ্চাৎ খন্ডে দৈহিক সংবেদী এলাকার পশ্চাৎবর্তী অংশে এবং শ্রবনের প্রধান এলাকার চর্তুদিকে বাকশক্তির সংবেদী ও মানসিক এলাকা বিস্তৃত। লিখিত ভাষা পাঠ ও উপলব্ধি করার জন্য বাক কেন্দ্র গুলোর সাথে দৃষ্টি শক্তির সংযোগ অত্যাবশক।
মস্তিষ্কের পশ্চাৎ খন্ডে দৃষ্টির এলাকা অবস্থিত। থ্যালামাসের পার্শ্বস্থানীয় জেনিকুলেট অংশ থেকে দৃষ্টির সংবেদী দ্বিতীয় স্নায়ুগলো উত্থিত হয়ে কর্টেক্স দৃষ্টির প্রধান এলাকায় আসে। দৃষ্টির প্রধান এলাকায় রেটিনার পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। অর্থাৎ রেটিনার প্রতিটি বিন্দুর জন্য দৃষ্টির প্রধান এলাকায় একটি প্রতিবিন্দু রয়েছে।
দৃষ্টির প্রধান এলাকার চারিদিকে কর্টেক্স এর বিরাট এলাকা জুড়ে দৃষ্টির মানসিক এলাকা বিস্তৃত। এইসব এলাকা ধ্বংশ হলে দৃষ্টির মৌলিক অনুভুতি টিকে থাকে কিন্তু এর তীক্ষèতা অনেক কমে যায়। এ রুপ ক্ষেত্রে দৃষ্টির সাহায্যে ব্যাক্তিটি স্থান নিরুপন বা দেহের সঠিক অবস্থান নিরুপন করতে পারে না।
রেটিনা থেকে আগত সংবেদী স্নায়ুবিক বার্তা গুলো মস্তিষ্কে কী করে চেতনা যুক্ত উপলব্ধিতে পরিনত হয় তা অজ্ঞাত।
কোন বস্তুর প্রতি আমরা যে সব গুনাগুন আরোপ করি, তাদের অধিকাংশই আমাদের মস্তিষ্কের আরোপিত গুনাগুন।
একটি লাল গোলাপকে লাল গোলাপ হিসাবে চিহিৃত করার জন্য, গোলাপটিকে নির্দিষ্ট তর্গং দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট প্রতিফলিত আলোরশ্মি রেটিনায় একটি বৈশিষ্ট্য পূর্ন ¯œায়বিক বার্তার সৃষ্টি করে এবং তা পরে মস্তিষ্কের দৃষ্টি এলাকায় একটি ¯œায়ুবিক উত্তেজনার নকসা নির্মান করে। এই নকশার সাথে মস্তিষ্ক পূর্ব পরিচিত নকশা গুলো মিলিয়ে নমুনা ও রং এর বৈশিষ্ট্য অবধারন করন। পুরাতন নকশা গুলোর প্রতিক বা ভাষা প্রতিক ব্যবহার করে মস্তিষ্ক উপলব্ধি করে এটি ‘লালগোলাপ’। এই নকশার পুর্ব পরিচিত নকশা গুলো মিলিয়ে মস্তিষ্ক নমুনা ও রং এর বৈশিষ্ট্য অবধারন করে। নকশা থেকে নকশার প্রতিক ও পরে বিশ্লেষন । তা থেকে শব্দ প্রতিক বা ভাষা প্রতিক ,ওদের স্মৃতি ও সর্বপরি অবধারন। অতপর বর্তমান অভিজ্ঞতার সাথে অতীত অভিজ্ঞতার সংমিশ্রন ও তুলনা,স্মৃতি উদ্ধার ইত্যাদী সব কিছু মিলে সংবাদ প্রদান করে যে,বস্তুটি একটি ‘লালগোলাপ’।
স্নায়ু বিক বার্তা চেতনায় অভিক্ষেপ সৃষ্টি করে। চেতনা শক্তির বৈশিষ্ট্য এই যে, তা এই অভিক্ষেপটি গ্রহন করতে পারে, ধারন করতে পারে এবং এটিকে একটি বৈশিষ্ট্য পূর্ন মানসিক অস্তিত্ব প্রদান করতে পারে।
স্নায়ুবিক উত্তেজনা কিভাবে সংগঠিত হয়ঃ
স্নায়ুবিক উত্তেজনা সহজেই স্নায়ুতন্তুর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রবাহিত হয়। স্নায়ুবিক উত্তেজনা অনেকটা বিদ্যুৎ প্রবাহের মত। কিন্তু স্নায়ুগুলো ধাতব তার নয়
এবং স্নায়ুবিক উত্তেজনা একটি সাধারন তড়িৎ প্রবাহ হয়।
স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর মধ্যে সংঘঠিত কতকগুলি বৈশিষ্ট্য পূর্ন রাসায়নিক ক্রিয়া জড়িত। ক্রিয়া গুলো প্রানরাসায়নিক, কিন্তু ওদের প্রকাশ ও ফলাফল অনেকাংশে সাধারন বৈদ্যুতিক শক্তির রূপ গ্রহন করে। এই জন্য স্নায়ুবিক
উত্তেজনার ক্রিয়াটিকে একটি বিশেষ প্রকার ‘তাড়িৎ রাসায়নিক কিয়া’ বলা হয়।
Continue-----------------------------------------------------------------------------------
Continue-----------------------------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment