মানব দেহে ভিটামিন এর প্রয়োজনীয়তা এবং অভাবজনিত রোগ সমূহ:
Dr. Shebendra karamakar
Doctorate & Ph.D in Natural Medicine
ভিটামিন-
‘এ’
ভিটামিন ‘এ’ এর প্রধান কাজ:
১/ দৈহিক বৃদ্ধি ও এপিথেলিয়াম কোষের (দেহ অঙ্গের আবরনী ও অভ্যন্তর স্তরের কোষ) পরিচর্যায় ভিটামিন ‘এ এর প্রয়োজন হয়।
২/ চোখের রড কোষের (আলো গ্রহনের কাজ করে) অংশ হিসাবে এটি চোখের দেখার প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।
৩/ হাড়ের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
৪/ ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন প্রতিহত করে দেহকে ক্ষত থেকে রক্ষা করে।
৫/ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ভিটামিন
‘এ’
এর অভাব জনিত রোগ সমূহ:
চোখের পরিবর্তন সমূহ:
রািত্র কালিন অন্ধত্ব: অল্প আলোতে দেখতে অক্ষম। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রেটিনার রড কোষ গুলোর আলোগ্রাহী ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রাত্রি কালীন অন্ধত্ব দেখা দেয়।
জেরপথ্যালামিয়া: চোখের শুষ্কতা রোগ। নিন্মের রোগগুলো চোখের ‘জেরপ-থ্যালমিয়া’ রোগের লক্ষন।
ক) কনজাংটিভাল জেরোসিস: চোখ ময়লাযুক্ত থাকে । ফলে দৃষ্টি সবসময় ঝাপসা থাকে।
খ) কর্নিয়াল জেরোসিস: কর্নিয়ার পৃষ্টদেশ শুষ্ক ও ঘোলা হয়ে যায়।
গ) ক্যারাটোমালাসিয়া: চোখের কর্নিয়ার ‘মনি’ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ন দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়।
চর্ম:
ক) চর্ম শুষ্ক ও অমসৃন হয়ে পড়ে।
খ) চুলের ফলিকল নষ্ট হয়ে চুলের বৃদ্ধি থেমে যায়। চুল পড়ে যায়।
পরিপাকতন্ত্র:
ক) স্যালিভারি গ্রন্থির কার্যকারীতা নষ্ট হয় ফলে মূখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। খাদ্য পরিপাকে ব্যাঘাত ঘটে।
খ) মিউকাস কোষ এবং অন্ত্রের এপিথেলিয়াম কোষ স্তর নষ্ট হয়ে যায় ,ফলে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
গ/ শ্বষন তন্ত্র: শ্বষন তন্ত্রের কোষ আস্তরনের (এপিথেলিয়াম কোষ স্তর) পরিবর্তন হয়। ফলে, শ্বাষনালী ও ফুসফুস এর বিভিন্ন অংশের রোগ দেখা দেয়।
ঘ/ প্রজনন ও রেচন তন্ত্র: রেনাল পেলভিস, মুত্রনালী, মুত্রথলী, যৈানাঙ্গ এর এপিথেলিয়াম কোষ স্তরের পরিবর্তন ঘটে। ডিম্বাশয়ের কোষ স্তরের পরিবর্তনের কারনে সন্তান ধারনে অক্ষমতা দেখা দেয়।
ঙ/ কঙ্কাল তন্ত্র: হাড়ের অনিয়মিত বৃদ্ধি ঘটে। মুখমন্ডল ও মেরুদন্ডের হাড়ের পরিবর্তন ঘটে।
ভিটামিন-‘এ’ এর উৎস:
১) প্রানিজ উৎস: লিভার, ডিমের কুসুম , মাখন, সম্পূর্ন দুধ , মাছ, মাছের তৈল।
২) উদ্ভিদ উৎস: টাটকা গাড় সবুজ পাতা সবজি, রঙিন সবজি, ফল।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
বয়স্ক: ৫০০০ আই ,ইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)।
শিশু: ২০০০ আই ,ইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)।
প্রসূতি ও দুগ্ধদানকারী মহিলা: ৬০০০-৭০০০ আই ,ইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট)।
(৫০ গ্রাম ডাটাশাক= ৫০০০আই,ইউ; ৫০গ্রাম লাল শাক=৬০০০ আই,ইউ)
ভিটামিন ‘এ’ এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
১) এটি চর্বিতে দ্রবনীয়। পানিতে অদ্রবনীয়।
২) সাধারন তাপে নষ্ট হয় না।
৩) সূর্যের আলোতে নষ্ট হয়।
৪) এর রাসায়নিক সংকেত: C20H29OH
অন্ত্রে ভিটামিন-‘এ’ এর শোষন এবং হজম প্রক্রিয়া:
ভিটামিন-‘এ’ প্যাংক্রিয়াস এনজাইম দ্বারা বিশ্লেষিত হয়ে অন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত স্রোতে প্রেরিত হয়। রক্ত স্রোতে প্রবেশের পর এটি ‘ফ্যাটি এসিড’ এর সাথে সংযুক্ত হয় এবং পোর্টাল শিরা দিয়ে লিভারে সঞ্চিত হয়। লিভার থেকে ভিটামিন-‘এ’
বিশেষ ধরনের প্রোটিন এর সংযুক্ত হয়ে রক্ত স্রোতের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের প্রয়োজন মিটায়। এ ক্ষেত্রে পিত্ত রসের উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রো-ভিটামিন (বিটা-ক্যারোটিন) শোষনের জন্য পিত্ত রস ও ফ্যাট এর উপস্থিতির প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন-‘ডি’
ভিটামিন-‘ডি’ এর প্রধান কাজ:
১) ভিটামিন-ডি অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষনে কাজ করে।
২) এটি হাড়ের ক্যালসিয়াম সঞ্চয়ে শিশু ও বয়স্ক উভয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়।
৩) এটি দাঁতের বৃদ্ধি ও সুরক্ষায় প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন-‘ডি’ অভাব জনিত রোগ সমূহ:
এটির অভাবে ‘রিকেট’ ও ‘অষ্টিও মালাসিয়া’ রোগ হয়।
রিকেট:
১) হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয়।
২) হাড় প্রশস্ত ও অনিয়মিত বৃদ্ধি পায়।
অষ্টিও মালাসিয়া:
১) হাড় নরম হয়ে যায়।
২) ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত পরিবর্তন হয়।
৩) ক্যালসিয়াম এর পরিমান কম থাকে।
ভিটামিন-‘ডি’ এর উৎস:
প্রাকৃতিক উৎস: সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে চর্মের কোলেষ্টেরল ভিটামিন-‘ডি’ তৈরি করে।
প্রানিজ উৎস: কড লিভার ওয়েল, মাছের তৈল, ডিমের কুসুম ও লিভার।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
বয়স্ক: ১০০আই,ইউ
প্রসূতি ও দুগ্ধদানকারী মা: ৪০০ আই,ইউ
ভিটামিন-‘ডি’এর শোষন ও বিপাক প্রক্রিয়া:
ভিটামিন-‘ডি’ লিভারে গিয়ে পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তিত ভিটামিন লিভার থেকে রক্ত স্রোতে প্রেরিত হয় এবং কিডনিতে পৌঁছে। কিডনিতে এটি আবার পরিবর্তিত হয় এবং এই পরিবর্তিত ভিটামিন ‘ডি’ ‘প্যারাথ্যারয়েড গ্রন্থি’ কে উত্তেজিত করে হরমোন এর নিঃসরন ঘটায়। এই হরমোন অন্ত্রে উপস্থিত ‘ক্যালসিয়াম’ ও ‘ফসফরাস’ শোষনে কাজ করে। রক্তে ক্যালসিয়াম কম থাকলে এই হরমোন উত্তেজিত হয়।
সূর্যের আলোতে যখন চর্মে ভিটামিন-‘ডি’ প্রস্তুত হয় সেটি সরাসরি রক্ত স্রোতে পৌঁছে। অন্ত্রের মাধ্যমে ভিটামিন-‘ডি’ শোষনের জন্য ‘পিত্ত লবনের’ প্রয়োজন হয় । অন্ত্রে শোষিত হওয়ার পর এটি রক্তের প্লাজমা প্রোটিন ‘আলফা টু-গ্লোবিউলিন’ সাথে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে সক্রিয় হয়।
ভিটামিন-ই (আলফা-টোকোফেরল ):
ভিটামিন-‘ই’ এর কাজ:
১/ এটি একটি জারন বিরোধী এজেন্ট (এন্টিঅক্সিডেন্ট)। দেহের অপ্রোয়জনীয় জারন প্রতিরোধে এটি একটি সক্রিয় এজেন্ট।
২/ ভিটামিন-‘ই’ জারনের হাত থেকে কোষ প্রাচীর কে রক্ষা করে। কারণ কোষ প্রাচীর অসম্পৃক্ত চর্বি স্তর দিয়ে তৈরি। অসম্পৃক্ত চর্বি অক্সিজেন এর সংস্পর্শে দ্রুত জারিত হয়। ভিটামিন-‘ই’ মুক্ত অক্সিজেন (ফ্রী-রেডিক্যাল) কে গ্রহণ করে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে জারনের হাত থেকে কোষ প্রাচীর কে রক্ষা করে।
৩/ এটি চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন এ,,ডি, ই, কে এর জারন রোধ করে।
৪/ পেশীকে কার্যক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন।
৫/ প্রজনন তন্ত্র কে কার্যক্ষম রাখতে ভিটামিন ‘ই’ এর ভুমিকা রয়েছে।
ভিটামিন-‘ই’ এর অভাব জনিত রোগ:
১/ এর অভাবে বন্ধ্যাত্ব রোগ হয়।
২/ পেশির অবসাদ তৈরি হয়।
৩/ লিভারে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
৪/ লাল রক্ত ভেঙ্গে যায়।
ভিটামিন-ই এর উৎস:
উদ্ভিদ উৎস: ভেজিটেবল ওয়েল, কর্ন ওয়েল, গমের অঙ্কুরের তৈল, ফল ও শাক শবজি।
প্রানীজ উৎস: ডিমের কুসুম,মাংশ,মাছ,দুধ, মাখন,মাছের তৈল।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
বয়স্ক: ১৫ আই,ইউ
ভিটামিন-‘ই’ এর বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি চর্বিতে দ্রবনীয় এবং পানিতে দ্রবনীয়।
২/ তাপ ও এসিড মাধ্যমে স্থিতিশীল থাকে।
৩/ ক্ষারিয় মাধ্যমে ধীরে জারিত হয়।
ভিটামিন-‘ই’ এর শোষন:
এটি পিত্ত লবন ও চর্বির উপস্থিতিতে অন্ত্রে শোষিত হয়। দেহের এডিপোস টিস্যুতে এটি সঞ্চিত হয়। রক্তের প্লাজমা লিপোপ্রোটিনের মাধ্যমে বাহিত হয়।
ভিটামিন-‘কে’:
ভিটামিন-‘কে’ এর কাজ:
১/ রক্ত জমাট প্রক্রিয়া কে সক্রিয় করে।
২/ এটি হাড় ও কিডনি প্রোটিনের (কার্বঅক্সিলেট) লবন তৈরি করে।
৩/ এটি সালোক সংশ্লেষন ও টিস্যু জারনে ফসফেট গ্রহণ (ফসফোরাইলেজসন) করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন-‘কে’ এর অভাব জনিত রোগ:
রক্ত জমাট না বাঁধার কারনে ,দেহের ভিতর ও বাহির এ সংগঠিত রক্তপাত বন্ধ হয় না।
ভিটামিন-কে এর উৎস:
১/ উদ্ভিজ ও প্রাণীজ উৎস: আলফালফা,বাঁধাকপি, ফুলকপি, পুঁইশাক, মাংশ, ডিমের কুসুম, টমেটো।
২/ দেহ অভ্যন্তরে বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন- ‘কে’ সংশ্লেষন করে।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
৭০-১৪০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন-‘কে’ এর কতিপয় বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি চর্বিতে দ্রবনীয় এবং তাপে স্থিতিশীল থাকে।
২/ এটির কার্যকারীতা নষ্ট হয় ,বিকিরন, ক্ষার, শক্তিশালী এসিড মাধ্যমে।
ভিটামিন-কে এর শোষন:
পিত্ত লবনের উপস্থিতিতে অন্ত্রে এটির শোষন সম্পন্ন হয়।
ভিটামিন-‘সি
ভিটামিন-‘সি’ এর কাজ:
১/ ভিটামিন-সি এর প্রধান কাজ কোষ মধ্যবর্তী
সিমেন্ট পদার্থ (কোলাজেন) তৈরি করা। এটি এমাইনোএসিড প্রোলিন ও লাইসিন কে কোষমধ্যবর্তী সিমেন্ট পদার্থ (কোলাজেন) তৈরি করতে সক্রিয় করে।
২/ ১ মৌল ভিটামিন -‘সি’ ১ মৌল শক্তি (এটিপি) তৈরি করে।
৩/ এটি এমাইনোএসিড ‘টাইরোসিন’ বিপাকে প্রয়োজন হয়।
৪/ লাল রক্ত কে পরিণত হতে ভিটামিন-‘সি’ এর প্রয়োজন হয়। ফলিক এসিড লাল রক্ত কে পরিণত করতে প্রয়োজন হয়। আর ফলিক এসিড কে সক্রিয় করার জন্য ভিটামিন-‘সি’ দরকার।
৫/ দেহের ক্ষত সাড়াতে এটি কাজ করে।
৬/ কোলষ্টেরল বিপাকে এটি কাজ করে।
ভিটামিন-‘সি’ এর অভাব জনিত রোগ:
স্কার্ভি:
এ রোগের লক্ষন সমূহ:
১/ রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
২/ অস্থিসন্ধি তে প্রদাহ হয়।
৩/ মিউকাস প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে মুখ,অন্ত্র, পেশিতে রক্তপাত ঘটে।
৪/ মুখের মাড়ি ফুলে যায়, জিহ্বায় ক্ষত হয়। শরীর দুর্বল হয় ,হাড়ে ক্যালসিয়াম সঞ্চয় কমে যায়।
ভিটামিন-সি এর উৎস:
চুকাফল: আমলকি, লেমন, টমেটো, পেয়ারা , কালোজাম , আনানস।
উদ্ভিজ উৎস: সবুজ পাতাময় সবজি , বাঁধাকপি , কাঁচামরিচ , লেটুসপাতা , ধনেপাতা।
প্রানিজ উৎস: মাংশ ও দুধ (খুব কম)।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
বয়স্ক: ৬০ মি:গ্রাম।
দুগ্ধদানকারী মা: ৮০ মি:গ্রাম।
শিশু: ৪০ মি:গ্রাম।
(১০০ গ্রাম আমলকি = ৪৬৩ মি:গ্রাম ; ১০০ গ্রাম আমরা = ৯২ মি:গ্রাম ; ১০০ গ্রাম পেয়ারা = ২০০-৪০০ মি:গ্রাম ; ১০০ গ্রাম ধনে পাতা = ১৩৫ মি:গ্রাম ; ১০০ গ্রাম কাঁচামরিচ = ১২৫ মি:গ্রাম )
ভিটামিন-‘সি’ এর বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি পানিতে দ্রবনীয় । চর্বি ও তৈলে অদ্রবনীয়।
২/ এটি দ্রুত জারিত হয়ে নষ্ট হয় ,বিশেষ করে তামার সংস্পর্শে।
৩/ এটি ক্ষারের উপস্থিতিতে দ্রুত ধ্বংশ হয়।
৪/ বাষ্পীয় রান্নায় এটি কম নষ্ট হয়।
৫/ শুষ্ক অবস্থায় ভিটামিন কমে আসে।
৬/ বরফ সংরক্ষনে এটি নষ্ট হয় না।
ভিটামিন-‘সি’ এর শোষন:
১/ এটি দ্রুত গতিতে ক্ষুদ্রান্তে , পেরিটোনিয়াম এবং সাবকিউটিনাস এ
শোষিত হয়।
২/ এটি ‘পোর্টাল শিরার মাধ্যমে লিভার এ পৌঁছে এবং লিভার থেকে রক্ত স্রোতের মাধ্যমে দেহের কোষ কলায় যায়।
ভিটামিন-বি১ (থায়ামিন):
ভিটামিন-বি১ এর কাজ:
১/ থায়ামিন প্রতিটি কোষে শর্করা বিপাকে কাজ করে।
২/ এটি গ্লুকোজ কে দ্রুত জারিত করার মাধ্যমে স্নায়ু কোষকে পুষ্টি সমৃদ্ধ করে।
৩/ এটি ক্ষুধা সৃষ্টি এবং স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন হয়।
থায়ামিন এর অভাবজনিত রোগ: এর অভাবে ‘বেরিবেরি’ রোগ হয়।
বেরিবেরি রোগের লক্ষন সমূহ:
স্নায়ুর প্রদাহ এবং পেশির অবসাদ। হৃদপিন্ডের রক্ত জালিকায় পরিবর্তন হয় এবং শরীর ফুলে যায়। রোগের শুরুতে দুর্বলতা, ফ্যাকাশে ভাব, মাথাব্যাথা, নীদ্রাহীনতা
তন্দ্রাভাব, ক্ষুধামান্দ্য এবং দ্রুত শ্বাস গ্রহন।
থায়ামিন এর উৎস:
উদ্ভিদ উৎস: সম্পূর্ন শষ্য, ডাল, লেগুমস, তৈলবীজ, বাদাম , ভেজিটেবল , চাল , গম।
প্রানিজ উৎস: লিভার , মাছ , দুধ।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
পুরুষ: ১.৫ মি;গ্রা।
মহিলা: ১মি:গ্রা।
থায়ামিন এর বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি পানিতে দ্রবনীয়।
২/ শুষ্ক তাপমাত্রায় ১০০ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রা পর্যন্ত ঠিক থাকে।
৩/ এসিড মাধ্যমে এটি নষ্ট হয় না। কিন্তু ক্ষারীয় মাধ্যমে দ্রুত ধ্বংশ হয়।
থায়ামিন এর শোষন প্রক্রিয়া:
ক্ষুদ্রান্তে থায়ামিন দ্রুত শোষিত হয় এবং ফসফেট এর সাথে দ্রুত সংযুক্তি ঘটায় এবং ‘থায়ামিন পাইরোফসফেট’ গঠন করে।
রিবোফ্লাভিন-(ভিটামিন-২):
রিবোফ্লাভিন এর কাজ;
১/ রিভোফ্লাভিন কো এনজাইম হিসাবে (ঋগঘ, ঋঅউ) কোষের শ্বষনে ইলেকট্রন পরিবহনে কাজ করে।
২/ এটি প্রোটিন, ফ্যাট, শর্করা বিপাকে কাজ করে।
ভিটামিন-বি২ এর অভাবজনিত রোগ:
১/ মুখ, জিহ্বা , ঠোটের কোণায় ক্ষত হয়।
২/ চোখ লাল , জ্বালাপোড়া , কর্নিয়ার রক্তনালী আক্রান্ত হয়।
৩/ চুল পড়ে,খুসকি যুক্ত চর্ম হয়।
ভিটামিন-বি২ এর উৎস:
প্রানিজ উৎস: দুধ , মাংশ , লিভার , কিডনি , মাছ , ও ডিম।
উদ্ভিদ উৎস: পাতাময় শাকশবজি , ফল ।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
পুরুষ: ১.৮মি:গ্রা।
স্ত্রী: ১.৪ মি:গ্রা।
ভিটামিন-বি২ এর বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি পানিতে দ্রবনীয় ।
২/ সাধারন তাপে নষ্ট হয় না ,আলোতে নষ্ট হয়।
ভিটামিন-বি২ এর শোষন:
এটি খাদ্য সহযোগে ক্ষুদ্রান্তে শোষিত হয়।
নিয়াসিন/
নিকোটিনিক এসিড:
নিকোটিনিক এসিড এর কাজ:
১/ কো-এনজাইম হিসাবে এটি হাইড্রোজেন পরিবহন বিক্রিয়ায় ‘ড্রিহাইড্রোজেনেজ এনজাইম’ হিসাবে কাজ করে। (ঘঅউ,ঘঅউচ)।
২/ চর্ম , অন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্র এর স্বাভাবিক কাজের জন্য প্রয়োজন হয়।
নিকোটিনের অভাবজনিত রোগ: পেলেগ্রা:
পেলেগ্রার লক্ষন:
১/ ডারমাটাইটিস: উজ্জল লাল রক্তের মত দাগ। রোগের শুরুতে চর্ম লাল এবং ফুলে উঠে।
২/ ডায়রিয়া: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব দেখা দেয়। রক্ত ও মিউকাস সহ পাতলা পায়খানা।
৩/ ডিমনেসিয়া: মানসিক দুর্বলতা দেখা দেয়। অবসাদ ও অমনোযোগিতা পরিলক্ষিত হয়।
নিকোটিনের এর উৎস:
প্রানিজ উৎস: মাংশ , লিভার , ফিস , ডিম।
উদ্ভিজ উৎস: শাকশবজি , গম , বাদাম , (দুধ,ডিম ও শাকশবজি তে কম থাকে)।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
বয়স্ক: ১৬-২০ মি;গ্রা।
শিশু: ৬-১৬ মি:গ্রা।
নিকোটিন এর বৈশিষ্ট্য:
১/ পানিতে দ্রবনীয়। বাতাস ও তাপে স্থিতিশীল থাকে।
২/ রান্নায় অল্প পরিমানে নষ্ট হয়।
পাইরিডক্সিন/ভিটামিন-বি৬:
পাইরিডক্সিন এর কাজ:
১/ এটি এমাইনোএসিড স্থানান্তর বিক্রিয়ায় কো-এনজাইম হিসাবে কাজ করে।
২/ এটি এমাইনো এসিডের কার্বক্সিলিক এসিড বিচ্ছিন্ন করে। এবং সালফার যুক্ত এমাইনোএসিডের বিপাক ক্রিয়ায় কাজ করে।
৩/ এমাইনোএসিড ট্রিপটোপ্যান এর স্বাভাবিক বিপাক ক্রিয়ায় প্রয়োজন হয়।
৪/ এটি কোষে এমাইনোএসিড ও পটাশিয়াম পরিবহনের হার বৃদ্ধি করে।
৫/ অসম্পৃক্ত চর্বি বিপাকে কাজ করে।
ভিটামিন-বি৬ এর অভাবজনিত রোগ:
কনভালসান , ঝিমানি ভাব , মুখে ক্ষত।
ভিটামিন-বি৬ এর উৎস:
প্রানিজ উৎস: ডিমের কুসুম , মাংশ , মাচ , দুধ।
উদ্ভিদ উৎস: সম্পূর্ন খাদ্য শস্য, বাঁধাকপি, দ্বী-বীজ শস্য
প্রতিদিন প্রয়োজন:
বয়স্ক:২.২মি:গ্রা:।
প্রসূতি মহিলা: ২.৬ মি:গ্রাম।
শিশু : .৩-১.৬ মি:গ্রাম।
বি৬ এর বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি পানিতে এবং এলকোহল এ দ্রবনীয়। চর্বিতে সামান্য দ্রবনীয়।
২/ এটি আলো , বিকিরন ও ক্ষার মাধ্যমে সক্রিয় হয়।
৩/ তাপে স্থিতিশীল থাকে।
ভিটামিন-বি৩/ প্যানটোথ্যানিক এসিড:
ভিটামিন-বি৩ এর কাজ:
এটি কোএনজাইম-এ এর অংশ বিশেষ। এই কোএনজাইম-এ শর্করা , প্রোটিন
ও চর্বি বিপাকে আব্যশক। ইহা প্রধানত ‘এসিটিল দল’ টিকে এক যৌগ হতে অন্য যৌগে বদলী করার কাজ করে। এ ছাড়া স্নায়ু তন্ত্রের প্রয়োজনীয় হরমোন ‘এসিটিলকোলিন’ গঠনেও এ ভিটামিন দরকার হয়।
অভাবজনিত রোগ:
ক্লান্তিবোধ , মাথাধরা , অনিদ্রা, বমি বমি ভাব , তলপেটে ব্যাথা , পায়ে ঝি ঝি ধরা ,মাংশপেশির খিঁচুনী।
ভিটামিন-বি৩ এর উৎস:
লিভার, কিডনি, ডিম, মটর , বাঁধাকপি, মিষ্টি আলু।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
৪-৭ মি:গ্রাম।
ফলিক এসিড:
ফলিক এসিডের কাজ:
১/ এটি কো-এনজাইম হিসাবে কার্বন একক স্থানান্তর এর জন্য অপরিহার্য। কিছু অপরিহার্য জৈব অনু যেমন, সেরিন, মেথিওনিন, কোলিন, থাইমিন, পিউরিন এবং নিউক্লিওটাইড এর সংশ্লেষন এর জন্য ফলিক এসিড এর প্রোয়জন হয়। কোষের ডি এন এ গঠনের জন্য এটি অপরিহার্য।
২/ এটি এমাইনোএসিড ‘টাইরোসিন’ বিপাকে কাজ করে।
৩/ লাল রক্ত তৈরিতে ফলিক এসিডের ভূমিকা রয়েছে।
ফলিক এসিড অভাবজনিত লক্ষন:
এটির অভাবে দেহ বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্রজনন ক্ষমতা হৃাস পায়। ম্যাক্রোসাইটিক এনিমিয়া (বৃহৎলাল রক্ত কনিকা) হয়। শরীরে অস্বাভাবিক জীব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।
ফলিক এসিডের উৎস:
যকৃৎ , ইষ্ট, পাতাবহুল শাকশবজি, ডাল, বাদাম।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
০.২৫মিলিগ্রাম।
ফলিক এসিডের বৈশিষ্ট্য:
অতিরিক্ত তাপে রান্না করলে এ ভিটামিন নষ্ট হয়। টাটকা শাকশবজি কয়েকদিন রেখে দিলে প্রায় ৭০% ভিটামিন নষ্ট হয়।
কোবালামিন/বিটামিন-বি১২:
ভিটামিন-বি১২ এর কাজ:
১/ এটি লাল রক্ত পরিণত হতে কাজে লাগে।
২/ কোষের ডি এন এ সংশ্লেষন এর জন্য প্রয়োজন হয়। আর এন এ (জঘঅ)
কে উঘঅ তে পরিণত হতে সাহায্য করে।
৩/ এটি ‘পার্নিসিয়াস এনিমিয়া’ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কাজ করে।
অভাবজনিত লক্ষন:
স্নায়ু তন্তুর বাহ্যিক আস্তরন (মায়েলিন) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্নায়বিক রোগ দেখা দেয়। প্রজনন ক্ষমতা কমে আসে। অপরিণত লাল রক্ত কনিকার জন্ম হয়।
খাদ্যে এটির উৎস:
প্রধান উৎস: যকৃত, স্পাইরুলিনা, মাশরুম, দূধ, ডিম, মাছ।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
৩ মাইক্রোগ্রাম।
এটির বৈশিষ্ট্য:
১/ এটি একটি লাল স্ফটিক যৌগ যা, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও কোবাল্ট ধারন করে।
২/ এটি পানি ও এলকোহলে দ্রবনীয়।
৩/ এটি তাপে স্থিতিশীল ।
৪/ এর রাসায়নিক সংকেত: ঈ৬৩ঐ৯০ঘ১৪০১৪চঈঙ
এটির শোষন:
পাকস্থলী হতে নিঃসৃত এক ধরনের প্রোটিন (ইনট্রিনজিক ফ্যাক্টর) বি১২ শোষনে সাহায্য করে।
বায়োটিন:
বায়োটিনের কাজ:
১/ এটি কার্বনডাই অক্সাইড বিচ্ছিন্ন বিক্রিয়ায় কাজ করে ।
২/ ফ্যাটি এসিড তৈরির কাজে এটি প্রয়োজন হয়।
৩/ গ্লুকোজ বিপাক এবং গ্লাইকোজেন ও এমাইনোএসিড গঠনের ব্যাপারেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন।
অভাবজনিত লক্ষন:
এর অভাবে চর্মে ও জিহ্বায় পরিবর্তন ঘটে। ক্ষুধামন্দ, ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতা, ও মাংশপেশিতে ব্যাথা হয়। ডিমের সাদা অংশের ‘এভিডিন’ নামক একটি প্রোটিন অন্ত্রে বায়োটিন শোষনে বাঁধা তৈরি করে।
এটির উৎস:
যকৃত, কিডনি, গুড়, দুধ, ডিমের কুসুম ।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
১০০-২০০ মাইক্রোগ্রাম।
এটির বৈশিষ্ট্য:
এটি পানিতে দ্রবনীয়
এবং তাপে স্থিতিশীল।
মানব দেহে মিনারেল এর প্রযোজনীয়তা এবং অভাবজনিত রোগ সমূহ:
ক্যালসিয়াম:
এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
একটি রাসায়নিক মৌলিক পদার্থ। এর প্রতীক Ca , আণবিক সংখ্যা ২০। এটি নরম ধূসর রঙের ধাতু পদার্থ যা, ভূপৃষ্টের
কঠিন অবস্থায় পাওয়া যায়।
দেহ কোষে ক্যালসিয়াম এর কাজ:
১/ ক্যালসিয়াম, ফসফরাসের সাথে একাত্রিত হয়ে দেহের হাড় ও দাঁত গঠন করে।
২/ আধান যুক্ত ক্যালসিয়াম ‘রক্তজমাট’ বাঁধার কাজ করে।
৩/ এটি কেন্দ্রিয় স্নায়ু এবং স্নায়ু তন্তুর উত্তেজনা তৈরিতে প্রয়োজন হয়।
৪/ এটির পেশির সংকোচন ক্রিয়া তৈরি করে।
৫/ ইহা কোষের ভেদ্যতা কে পরিচালিত করে।
৬/ ইহা কোষের অভ্যন্তরীন পদার্থগুলোর একত্রিত থাকতে সাহায্য করে।
৭/ অনেক এনজাইম কে সক্রিয় করার জন্য প্রয়োজন হয়।
ক্যালসিয়াম অভাবজনিত রোগ:
টিটানি:
যখন রক্তের
আয়নিত ক্যালসিয়াম এর উপস্থিতি কমে আসে তখন স্নায়ু উত্তেজিত হয়। কারণ এটি স্নায়ু কোষে সোডিয়াম আয়নের প্রবেশ বৃদ্ধি করে। প্রান্তিক স্নায়ু তন্তু বিশেষভাবে উত্তেজিত হয় এবং স্নায়ু থেকে অনবরত স্পন্দন তৈরি হয় যা প্রান্তিক কঙ্কাল পেশিতে সংকোচন তৈরি করে।
রিকেট এবং অষ্টিওপরোসিস রোগ হয়।
উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্যের এর উৎস:
১০০ গ্রাম ছোলা = ২০২ মি;গ্রাম।
১০০ গ্রাম কালো কচু শাক = ৪৬০ মি;গ্রাম।
১০০ গ্রাম মিষ্টি আলুর শাক = ৩৬০ মি:গ্রাম।
১০০ গ্রাম লাল শাক = ৩৭৪ মি:গ্রাম।
১০০ গ্রাম তিল = ১৪৫০ মি:গ্রাম।
১০০ গ্রাম কই মাছ = ৪১০ মি:গ্রাম।
১০০ গ্রাম রুই মাছ = ৬৫০ মি:গ্রাম।
১০০ গ্রাম শিং মাছ = ৬০০ মি;গ্রাম।
১০০ গ্রাম দুধ (১/২ গ্লাস) = ১০৮ মি:গ্রাম।
১০০ গ্রাম পনির = ৭৫০ মি:গ্রাম।
প্রতিদিন প্রয়োজন:
প্রাপ্ত বয়স্ক: ৮০০ মি:গ্রাম।
গর্ভাবস্থায়: ১০০০ মি:গ্রাম।
শিশু: ৪০০-৬০০ মি:গ্রাম।
ক্যালসিয়াম এর শোষন:
এটি অজৈব লবন হিসাবে ক্ষুদ্রান্তে শোষিত হয়। এর শোষনে ভিটামিন-ডি এবং প্যারাথাইরয়েড হরমোনের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। অধিক ফসফরাস যুক্ত খাদ্যের উপস্থিতিতে ক্যালসিয়াম শোষন কম হয়। কোন কোন খাদ্যের ‘ফাইটিক এসিড’ ও ‘অক্সলিক এসিড’ এটির শোষনে বাঁধা তৈরি করে।
ফাইটিক এসিড ও অক্সালিক এসিড দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ন খনিজ শোষনে বাঁধা তৈরি করে:
Phytic Acid Levels in some foods
Figures are in milligrams per 100 grams of dry weight:
Figures are in milligrams per 100 grams of dry weight:
100% Wheat bran cereal 3,290
Soy beans 1000 - 2,220
Cocoa powder 1684-1796
Oats 1370
Brown rice 1250
Oat flakes 1174
Almond 1138 - 1400
Walnut 982
Lentils 779
Peanut germinated 610
Peanut germinated 610
Hazel nuts 648 - 1000
Wild rice flour 634 - 752.5
Refried beans 622
Corn tortillas 448
Corn 367
White flour 258
White flour tortillas 123
অতিরিক্ত অক্সালিক এসিড যুক্ত খাদ্য কম খেলে ৭০-৮০% কিডনির পাথর রোগ প্রতিরোধ সম্ভব
The
Oxalate Content of Various Foods
Food
Mg of Oxalate/100g
Spinach
645 645 (100 g)
Fibre
One Cereal 142 43 (30 g)
Bran
Flakes 141 42 (30 g)