স্নায়ুর স্বাভাবিক মেরুকরনঃ
বৈদ্যুতিক বিভব (Electrical
potential) একটি প্রচ্ছন্ন শক্তি এবং নিরপেক্ষ অবস্থার তুলনায় এটা
ঋনাত্মক অথবা ধন্যাত্মক হতে পারে। অনুত্তেজিত বা স্থির অবস্থায় স্নায়ুর ভিতরের বৈদ্যুতিক বিভব বাইরের তুলনায় ঋনাত্মক (Negative) এবং ‘স্থির বিভব’ এর পরিমান -৭০মি ভোল্ট।
স্নায়ুর যে গাত্র আবরনী রয়েছে ,তা দিয়ে স্বচ্ছন্দে বৈদ্যুতিক ভারক্রান্ত রাসায়নিক অনু পরমানু বা চার্জ যুক্ত আয়ন প্রবেশ করতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে গাত্র আবরনটি স্থির অবস্থায় সম্পূর্ন অভেদ্যও নয়। ভেদ্যতা অত্যন্ত কম ও নির্বাচন মূলক।
স্থির অবস্থায় স্নায়ুর ভিতরে ,বাইরে অপেক্ষা অধিক পরিমান পটাশিয়াম (K+) অল্প পরিমান (Na) থাকে।
স্নায়ুর ভিতর অতিরিক্ত পটাশিয়াম এর ‘স্থির বিভব’র জন্য দায়ী। সুতরাং দেখা যায় যে, স্থির অবস্থায় স্নায়ু র অভ্যন্তর ভাগটি এর বাইরের তুলনায় বৈদ্যুতিক শক্তি ভারাক্রান্ত বা মেরুকৃত। একেই স্নায়ুর স্বাভাবিক মেরুকরন বলে।
বিমেরুকরন ও সক্রিয় বিভবঃ
স্নায়ুর কোন স্থানে আঘাত ,উত্তাপ ,ভেষজ বা বৈদ্যুতিক শক্তি প্রয়োগ করে স্থানটিকে উত্তেজিত করা যায়। উত্তেজনা স্নায়ুর গাত্রাবরনটিতে বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্ঠি করে। উত্তেজনার স্থানে গাত্রাবরনটি মুহূর্তের জন্য সহজভেদ্য হয়ে যায়। তখন বাইরের অতিরিক্ত চার্জকৃত (প্রধানত Na) দ্রুত স্নায়ুর ভিতরে প্রবেশ করে। এবংস্নায়ু র ভিতর থেকে অতিরিক্ত চার্জ কৃত (K+)
পটাশিয়াম আবরনীর বাইরে চলে আসে। প্রধানত বাইরের অতিরিক্ত সোডিয়াম (Na+) ভিতরে প্রবেশ করার ফলেই স্থানটির
স্থির বিভব বিনষ্ট হয়। উত্তেজনার স্থানে ‘স্থির বিভব’টির ঋনাত্মক অঙ্কমান (-70 mele volt)কমে সেখানে সৃষ্ট ধনাত্মক (+80mele volt) নতুন বৈদ্যুতিক বিভব সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় উত্তেজিত ধন্যাত্মক স্থান থেকে তড়িৎ প্রবাহ দ্রুত স্নায়ুর
ঋনাত্মক স্থান এর দিকে ধাবিত হয়। উত্তেজিত স্থান থেকে অনুত্তেজিত স্থানের দিকে ধাববান বৈদ্যুতিক শক্তি টিকে স্নায়ুর সক্রিয় বিভব বা বিমেরুকরন বলা হয়।
বাইরের তুলনায় স্থানটির মূহুর্তের জন্য বিমেরুকরন হলেও স্নায়ুর
অন্যত্র স্থির ঋনাত্মক (Negative) অংশের তুলনায় এটি বিপরীত বৈদ্যুতিক (Poitive) শক্তিভার সম্পন্ন। এই বিপরীত সম্পর্কের জন্যই বৈদ্যুতিক চাপের সৃষ্টি হয় এবং সক্রিয় বিভবটি গতিশীল হয় উঠে।
সক্রিয় বিভবটি একটি তরংগের মত ধনাত্মক (positive+) স্থান থেকে ঋনাত্মক (negative-) স্থানের দিকে ধাবিত হয় ও একটি স্নায়ুবিক উত্তেজনার রুপ পরিগ্রহ করে।
উত্তেজিত স্থানের সক্রিয় বিভব +৮০ মিলি ভোল্ট।
অনুত্তেজিত স্থানের স্থির বিভব -৭০ মিলি ভোল্ট।
এই দুই স্থানের মধ্যে বৈদ্যুতিক বিভবের পরিমান মোটা মোটি ১১০ মিলি ভোল্ট।
সম্মূখে অগ্রসরন সক্রিয় বিভব স্নায়ু তন্তুর অভ্যন্তরে একটি চলমান ‘বিমেরুকরন’ প্রবাহ সৃষ্টি করে। সক্রিয় বিভব বা বিমেরুকরন এর প্রবাহটি কোন স্থানে অধিক্ষন অপেক্ষা করে না। কোন একটি বিশেষ স্থানে এর অবস্থান ক্ষন ১ থেকে ২ মিলি সেকেন্ড (1mele sec=1/1000 sec) মাত্র।
স্নায়ুবিক উত্তেজনার প্রবাহটিকে স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে একটি অস্থায়ী বিমেরুকরন প্রবাহ বলা হয়।
অগ্রসরমান বিমেরুকরন প্রবাহ স্নায়ুর যে অংশেই উপস্থাপিত হয়,সেখানেই স্নায়ু গাত্রাবরনী মুহূর্তের জন্য সহজ ভেদ্য হয়ে পড়ে এবং সেখানে বাইরের সোডিয়াম (Na+) ভিতরে প্রবেশ করে। বিমেরুকরন প্রবাহ পার হয়ে গেলে স্থানটি থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম (Na+) বের হয়ে পড়ে। তখন গাত্রাবরনী আবার বাইরের সোডিয়াম (Na+) এর প্রতি র্দুভেদ্য হয়ে পড়ে। এভাবে স্থানটির স্থিরভাব বা স্বাভাবিক মেরুকরন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
স্বাভাবিক উত্তেজনার সমগ্র ক্রিয়াটিতেই স্নায়ুতন্তুর গাত্রাবরনী সক্রিয় অংশগ্রহন করে।
স্বাভাবিক মেরুকরন,সংরক্ষন,বিমেরুকরন সৃষ্ট ও অবশেষে স্বাভাবিক মেরুকরন প্রতিষ্ঠা এ সব কাজে স্নায়ু গাত্রাবরনটি একটি সক্রিয় নির্বাচন মূলক ছাঁকনি বা পাম্পের মত কাজ করে।
সোডিয়াম (Na+) ও পটাশিয়াম (K+) আয়নের প্রতি নির্বাচন মূলক ব্যবহার স্নায়ুর গাত্রাবরনটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। গাত্রাবরনটির বৈশিষ্ট্যপূর্ন আনবিক সংগঠনই একে এসব বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে।
স্নায়ুর গাত্রাবরনি মোটামোটি ১০০এঙ্গস্ট্রম (এঙ্গস্ট্রম=১০-৭ মিলি মিটার) অর্থাৎ ১ মিলি মিটারের ১০০শত কোটি ভাগের ১ ভাগ পুরু।
গাত্রাবরনটির সক্রিয় স্থানের মধ্যবর্তী অংশে Fat জাতীয় অনুর দুইটি স্তর রয়েছে। এদেও বাইরের দিকের প্রান্ত জলকামী (Hydrophilic) বা poler ভিতরের প্রান্ত জলত্যাগী (Hydrophobic) বা Nonpoler। এর বাইরে রয়েছ আমিষ (Protein) জাতীয় পদার্থের একটি স্তর। অন্যত্র যেখানে গাত্রাবরনটি পুরু ‘মায়েলিন’ আচ্ছাদন দ্বারা আবৃত সেখানে এটি নিষ্ক্রিয়।
মায়েলিন আচ্ছাদিত স্নায়ুতে উত্তেজনা সঞ্চালনঃ
যে সব স্নায়ুতন্তুর মায়েলিন আচ্ছাদন নেই তাদের মধ্যে উত্তেজনা বা বিমেরুকরন প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। কিন্তু অধিকাংশ তন্তুরই মায়েলিন আচ্ছাদন রয়েছে। এদের মধ্যে বিমেরুকরন প্রবাহ ধাপে ধাপে লাফিয়ে অগ্রসর হয়। মায়েলিন আচ্ছাদিত স্নায়ুতে কেবল ‘র্যানভীয়ার ’ এর নোড গুলির স্থানেই গাত্রাবরনটি উন্মূক্ত ও সক্রিয়। এ ক্ষেত্রে গাত্রাবরনটি নির্বাচন মূলক ভেদ্যতা কেবল সে স্থানেই সম্ভবপর এবং উত্তেজনার সময়ে কেবল সে স্থানেই স্নায়ুর ভিতর ও বাহিরের মধ্যে আয়ন চলাচল করতে পারে। উত্তেজনার সময় নোড স্থানে বাইরে থেকে সোডিয়াম (Na+) ভিতরে প্রবেশ করে। অন্যত্র মায়েলিন এর আচ্ছাদনটি ইনস্যুলেটর এর মত কাজ করে। একটি নোডের স্থানে ‘বিমেরুকরন’ হলে এর অর্ন্তভাগ ধনাত্মক বিভব (Positive) ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন এর এবং এর সম্মূখবর্তী স্থির নোডটির মধ্যে বাইরের সাথে একটি স্থানীয় তড়িৎ প্রবাহের চক্র সৃষ্টি হয়। ফলে পরক্ষনে এই দুটি নোডের মধ্যবর্তী পুরো অংশে ও সম্মূখবর্তী নোডটিতে ‘বিমেরুকরন’ সংঘঠিত হয়। প্রতিটি পূর্ববর্তী নোড পরবর্তী নোডকে উত্তেজিত করতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় স্নায়ুকোষের মূলদেহ থেকেই বিমেরুকরন প্রবাহ জন্ম নেয় এবং তা এক্সন বেয়ে শুধু সামনের দিকে চলতে থাকে।
একস্থানে বিমেরুকরন সংঘঠিত হলে পরক্ষনে স্থানটির সংবেদনশীলতা বেশ কিছুটা কমে যায় এবং স্থানটি পূনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সামান্য বিলম্ব হয়। এ কারনেই উত্তেজনা প্রবাহ সচারচর কেবল স্নায়ুকোষের মূল দেহ থেকে এক্সন এর শেষ প্রান্তের দিকে ধাবিত হয়।
উত্তেজনা প্রবাহের সময় প্রতিটি নোড স্থানে প্রায় ৬*১০৬ (ষাট লক্ষ) সোডিয়াম আয়ন (Na+) বাইরে থেকে স্নায়ুটির ভিতরে প্রবেশ করে।
স্নায়ুর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সঞ্চালিত হবার সময় সক্রিয় বিভবটির মানের কোন অবনতি ঘটে না। স্নায়ুর মধ্যে চলার পথে তা সর্বক্ষন পুনঃপূনঃ ও সক্রিয় ভাবে
পুনরাজ্জীবিত হয়ে থাকে। উত্তেজক শক্তিটি যে প্রকারই হোক না কেন স্নায়ুকোষ’ নিজস্ব সক্রিয় বিভবটি একই ভাবে সৃষ্টি ও সংরক্ষন করে। সুতরাং সক্রিয় বিভবটির গুনাগুন
মূলতঃ স্নায়ুকোষের উপরেই নির্ভর করে,উত্তেজনা শক্তিটির উপরে নয়।
সীনাপস স্থানে উত্তেজনা সঞ্চালনঃ
কয়েকটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন পরপর অবস্থিত হয়ে দীর্ঘ স্নায়ুবিক যোগাযোগ পথ সৃষ্টি করে। যে স্থানে একটি নিউরনের ‘এক্সন’ প্রান্ত অন্য একটি নিউরনের মূল দেহ বা ‘ডেনড্রাইট’ সংস্পর্শে এসে কার্যগত ভাবে সংযোগ স্থাপন করে যে স্থান গুলিই ‘সীনাপস’ স্থান।
সীনাপস স্থানে সংকেত সঞ্চালন স্নায়ুতন্তুর মত নয়। স্নায়ুতন্তুর বিমেরুকরন প্রবাহ ‘সীনাপস’ স্থানে এসে বাঁধাগ্রস্ত হয়। স্নায়ুবিক উত্তেজনা বিশেষ প্রক্রিয়ায় সীনাপস স্থান অতিক্রম করে পরবর্তী নিউরনটি উত্তেজিত করতে সক্ষম হয়। সংবেদী স্নায়ুসীনাপস প্রান্তে কিভাবে উত্তেজনা সঞ্চালিত করে তা বহুলাংশে অজ্ঞাত।
মোটর স্নায়ুগুলির শেষ প্রান্ত স্নায়ু+পেশী সংযোগ স্থল) এবং স্বায়ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্র এর ‘গ্যাংলিয়ায়’ স্নায়ু+ স্নায়ুসংযোগ স্থল) ও শেষ প্রান্তে (স্নায়ু+পেশী বা স্নায়ু+গ্রন্থি সংযোগ স্থল) সীনাপস গুলির কার্য প্রক্রিয়া সর্ম্পকে বহু তথ্য জানা গেছে।
নিউরো হরমোন বা স্নায়ু হরমোনঃ
স্নায়ুবিক উত্তেজনা যখন মোটর স্নায়ুর শেষ প্রান্তে উপস্থিত হয় ,তখন তা পেশী বা গ্রন্থী কোষ গুলিতে সরাসরি প্রবেশ করে না। উত্তেজনার ফলে স্নায়ুতন্তুটির শেষ প্রান্তে থেকে কোন একটি বৈশিষ্ট্য পূর্ন ‘রাসায়নিক রস’ নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিক বস্তু তখন পেশি বা গ্রন্থির কোষ গুলিকে সক্রিয় করে তোলে। স্নায়ুপ্রান্ত থেকে উত্তেজনার মুহূর্তে নিঃসৃত বিশেষ রাসায়নিক বস্তু কে ‘নিউরো হরমোন’বলে। স্নায়ুকোষ প্রায় ১০০ ধরনের নিউরো হরমোন উৎপাদন করে। প্রতিটি হরমোন ‘প্রোটিন’ প্রকৃতির অর্থাৎ ‘একক এমাইনোএসিড’বা এমাইনোএসিডের চেইন। হরমোন সমূহ ‘রাসায়নিক সংকেত’ হিসাবে কাজ করে। ওদের প্রত্যেকটির জন্য সীনাপস এর অপর প্রান্তে আলাদা আলাদা ‘গ্রাহীস্থান’(Receptor) রয়েছে।
সীনাপস স্থানে নিউরো হরমোন যথা সময়ে মুহূর্তের জন্য নিঃসৃত হয়। পেশী কোষ বা গ্রন্থি কোষ বা অপর একটি স্নায়ু কোষ কে উত্তেজিত বা অবনমন করার পর মুহুর্তেই ধ্বংশ হয়। সীনাপস স্থানে নিউরো হরমোন সৃষ্টি, সংরক্ষন ও ধ্বংশ করার জন্য স্থানীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
এসিটাইকোলিন (এসিটিক এসিড ও কোলিন এর এষ্টার) একটি সুপরিচিত নিউরো হরমোন। যে সব স্নায়ুতস্তুর শেষ প্রান্ত থেকে উত্তেজনার ফলে ‘এসিটাইকোলিন’ নিঃসৃত হয় ,‘কোলিনারজিক’ স্নায়ু বলা হয়। দেহের সব ‘ঐচ্ছিক পেশী কোষ গুলির’ কাছে অন্তিম মোটর স্নায়ুর শেষ প্রান্ত অবস্থিত। এচ্ছিক পেশী কোষ সংযোগ স্থলে এসিটাইকোলিন একমাত্র ‘নিউরো হরমোন’। ঐচ্ছিক পেশীর সংকোচন ও হস্ত পদাদির অঙ্গ সঞ্চালন স্নায়ুপেশী’ সংযোগ স্থলে মুহূর্তের জন্য নিঃসৃত ‘এসিটাইকোলিন’ এর জন্যই সম্ভব পর হয়ে থাকে।
স্নায়ুপ্রান্তে ‘এসিটাইকোলিন’ সৃষ্টির জন্য সেখানে ‘কোলিন এসিটাইলেজ’ নামক এনজাইম রয়েছে। নিঃসৃত হবার মুহূর্ত কালের মধ্যে সীনাপস স্থানে অবস্থিত ‘কোলিন এষ্টাইরেজ’ নামক অপর একটি এনজাইম এসিটাইকোলিন কে ধ্বংশ ও নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। স্বাভাবিক অবস্থায় এসিটাইকোলিন কতক গুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনিকার মধ্যে আবদ্ধ থাকে এবং সে অবস্থায় নিষ্ক্রিয় থাকে। উত্তেজনার মুহুর্তে কনা গুলি ভেঙ্গে ‘এসিটাইকোলিন’ নিঃসৃত হয় এবং কেবল তখনেই ‘কোলিন এষ্টাইলেজ’ তাকে ধ্বংশ করতে পারে।
সীনাপস স্থানে এসিটাইকোলিন, কোলিন এষ্টাইলেজ,এদের যে কোন একটি ব্যতিক্রম হলে ‘ঐচ্ছিক পেশী ’ গুলির ক্রীয়ায় নানা প্রকার অস্বাভাবিক বিঘœ দেখা দেয়।
স্বায়ত্ব শাসিত (Autonomic
nervous system) স্নায়ুতন্ত্রের ‘সিমপ্যাথেটিক’ ও ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ উভয় বিভাগেই গ্যাংলিয়ার পূর্ববর্তী অংশের স্নায়ুকোষ’ গুলি ‘কোলিনারজিক’। গ্যাংলিয়ার পূর্ববর্তী নিউরনের শেষ প্রান্তে উত্তেজনার সময় ‘এসিটাইকোলিন’ নিঃসৃত হয় ও গ্যাংলিয়ার পরবর্তী ‘নিউরন’ কে উত্তেজিত করে। এ স্থানে স্নায়ু+স্নায়ু সংযোগ স্থলে ‘এসিটাইকোলিন’ একটি প্রকৃত ‘নিউরো হরমোন’ এর কাজ করে।
গ্যাংলিয়ার পরবর্তী স্নায়ুগুলি দুই ধরনের ‘নিউরো হরমোন’ নিঃসৃত করে। ‘প্যারাসিমপ্যাথেটিক’ বিভাগে গ্যাংলিয়ার পরবর্তী স্নায়ু গুলি সকলেই ‘কোলিনারজিক’। কিন্তু ‘সিমপ্যাথেটিক’ বিভাগে পরবর্তী স্নায়ু গুলির শেষ প্রান্ত স্নায়ু+পেশী ও স্নায়ু+গ্রন্থি) থেকে উত্তেজনার সময় ‘নরএডরেনালিন’(এমাইনোএসিড ‘ফিনাইলএলানিন’ থেকে তৈরি হয়। ফিনাইলএলানিন পর্যায়ক্রমে বিপাক হয়ে এমাইনোএসিড, টাইরোসিন ►ডোপা ►ডোপামিন ► নরএডরেনালিন ► এডরেনালিন ) নামক হরমোন নিঃসৃত হয়।
ত্বশাসিত স্নায়ুতন্ত্রের ‘গ্যাংলিয়ার’ পরবর্তী স্নায়ুগুলি যে সব দেহ যন্ত্র যেমন, হৃদপিন্ড,ধমনী,উপধমনী,অন্ত্র ইত্যাদী নিয়ন্ত্রন করে,তাদের উপর ‘এসিটাইকোলিন’ ও ‘নরএডরেনালিন’ এর প্রকট ও বিপরীত মূখী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যে সব স্নায়ুর শেষ প্রান্ত থেকে ‘নরএডরেনালিন’ নিঃসৃত হয় তাদের কে ‘এডরেনারজিক’স্নায়ু বলে। নরএডরেনালিন থেকেই সামান্য রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘এডরেনালিন’নামক হরমোন সৃষ্টি হয়।
কিডনির উপরন্থ ‘সুপ্রারেনাল গ্রন্থি’ (Edrenal gland) এর মেডুলা অংশ (ক্রোমাফিন কোষ)
থেকে হঠাৎ ভয় বা বিপদ আশংকায় ‘এডরেনালিন’ নিঃসৃত হয় এবং রক্তের সাথে মিশে সাড়া শরীরে বৈশিষ্ট্য পূর্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। হৃদপিন্ডের দ্রুততর সংকোচন,রক্তচাপ বৃদ্ধি,রক্তে অধিকতর গ্লুকোজ সরবরাহ ইত্যাদী প্রতিরক্ষা মূলক প্রতিক্রিয়া ‘এডরেনালিন’এর কাজ।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে বিশেষত ‘ব্রেইন স্টেম’ ও ‘হাইপোথ্যালামাস’ অংশে বহু ‘এডরিনারজিককোষ’ রয়েছে। এ সব কোষের শেষ প্রান্ত ‘মস্তিষ্ক’ ও ‘মেরুরজ্জুর’ বিভিন্ন স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত। ‘সেরিব্রাল কর্টেক্স’ ও ‘লিমবিক তন্ত্র’এর মাধ্যমে কেন্দ্রিয় ‘এডরিনারজিক স্নায়ুকোষ’ গুলো অনেক জটিল আচরনিক ক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
নরএডরেনালিন ও এডরোলিন মানুষের ভাবাবেগের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। বিপদাশংকার সময় এর প্রভাব অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠে।
মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক বিভব রের্কড করে,মস্তিষ্কের নানা অসংগতি জানা যায়। বৈদ্যুতিক বিভব রের্কড করার প্রক্রিয়াকে ECG (ইলেকট্রো এনকেফালোগ্রাম) ও কর্টিও গ্রাফ বলে। গভীর অচেতন অবস্থায় মস্তিষ্কের ‘বৈদ্যুতিক বিভব’ যন্ত্রে ধরা পড়ে না। জাগ্রত অবস্থায় ‘বৈদ্যুতিক বিভবটি’ কম বেশী হয়ে তরঙ্গের মত স্পন্দন এর নির্দেশ করে। করোটির বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রোড স্থাপন করলে এনকেফালো গ্রাফে নানান আকৃতি ও স্পন্দন ধরা পরে। মানসিক সর্তকতা,ভাবাবেগ ও দৈহিক পরিবর্তনের সাথে এনকেফালোগ্রাফের যথেষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। এর সাহায্যে মস্তিষ্কের আলফা (α), বিটা (β) , ডেল্টা (€) তরঙ্গ পরিমাপ বিশ্লেষন করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অসংগতি নির্ণয় করা যায়।
স্নায়ু রোগে ব্যবহৃত বিভিন্ন এলোপ্যাথিক ড্রাগ সমূহঃ
এমিট্রিপটাইলিন (Amitriptyline):
১/ এটি নিউরো হরমোন ‘সেরোটোনিন’ এবং ‘নরএড্রেনালিন’ কে কোষে যেতে বাঁধা প্রদান করে এবং এ ভাবে হতাশা কমিয়ে আনে,সতেজতা বৃদ্ধি করে।
২/ এটি হিষ্টামিন রিস্পেটর এর সাথে বন্ধন তৈরি করে ঘুম ভাব তৈরি করে।
৩/ এটি মূত্র থলির স্ফিংটার কে টাইট করে, মূত্র নিয়ন্ত্রন করে।
GABA (Gama aminobyturic acid) receptor agonist drug
:
এই গ্রুপের ড্রাগ গুলি হচ্ছে; ক্লোনাজেপাম, এলপ্রাজোলাম, ব্রোমাজেপাম, ক্লোবাজাম, ডায়াজেপাম, নাইট্রোজেপাম। এই ধরনের ড্রাগ গুলি নিউরো হরমোন GABA
receptor
এর সাথে বন্ধন তৈরি করে এবং এঅইঅ এর প্রবেশ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে কোষের অভ্যন্তরে ক্লোরাইড আয়ন (cl-) এর প্রবেশ বৃদ্ধি পায় এবং কোষ ঋনাত্মক (Negative) আধান লাভ করে যা কোষের উত্তেজনা কমিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ বাঁধা গ্রস্ত করে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নিস্তেজতা, অজ্ঞান, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, মাথাঘোরা, আত্মহত্যা, শ্বাসকষ্ট, কনফিউশন, কম্পন, হতাশা, লালাঝরা, শ্লেষা নিঃসরন, বুক ধরপর, মুত্রজমা, বমিভাব, পেশীর দুর্বলতা, চর্মে ফুসকুড়ি, জ্বর, রক্তশূন্যতা, শ্বেতকনিকা, প্লাটিলেট কমে যাওয়া।
নিন্মের উল্লেখিত ড্রাগ গুলো নিউরো হরমোন; ডোপামিন, হিষ্টামিন, সেরোটোনিন, মাসকারনিন, আলফা-এড্রেনো প্রভৃতি কে কোষে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা (Inhibit) তৈরি করে। উল্লেখিত ড্রাগ গুলো হলো; হ্যালোপিরিডল, ক্লোরপ্রমাজিন।
সিনারজিন (Cinerzine):
এটি ধমনীর মসৃন পেশীতে ক্যালসিয়াম প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এটি হিস্টামিন-১ কে ও বাঁধা প্রদান করে। এই ড্রাগটি বমিভাব, মাথাঘোরা চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। প্রান্তীয় ধমনীর প্রসারনে এ ড্রাগ ব্যবহার হয়।
ফ্লুপেনটিক্সল (Flupentixol):
নিউরো হরমোন ডোপামিন-২ এর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
মেলিট্রাসেন (Melitracen):
এটি নিউরো হরমোন ‘নরএডরেনালিন’ প্রতিবন্ধক এবং ‘সেরিটোনিন’ পুনঃগ্রহনে বাঁধা দেয়। অতি উদ্বেগ ও হতাশাগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
ফ্লুফেনাজিন (Fluphenazine):
এটি ডোপামিন-২ রিসেপ্টর বল্ক করে।
নরট্রিপটাইলিন (Nortriptyline):‘
নরএডরেনালিন’এবং ‘সেরোটোনিন’ পুনঃগ্রহনে বাঁধা দেয়।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
এলোপ্যাথিক ড্রাগ কোন একটি নির্দিষ্ট নিউরো হরমোন কে বাঁধা (Inhibit) বা উত্তেজনা (Excitement) তৈরি করে স্নায়ুকোষের প্রান রাসায়নিক কাজে বিঘœ ঘটায়। নিউরো হরমোন সমূহের স্বাভাবিক কাজ ব্যহত হয় বলে,দীর্ঘ দিন এই ড্রাগ
ব্যবহারে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
স্নায়ুকোষের রোগ নিরাময়ে প্রাকৃতিক প্রতিকারঃ
কোষ জীব বিজ্ঞান (Cell Biology) তত্ব অনুযায়ী প্রত্যেক কোষ একটি ক্ষুদ্র জীবন। প্রকৃতির সকল প্রানি ও উদ্ভিদ এই ক্ষুদ্র কোষ দিয়ে তৈরি। জীবন ধারনের জন্য প্রতিটি কোষে খাদ্য গ্রহন, রেচন, শ্বসন ও বংশ বিস্তার এর সব কাজ সংগঠিত হয়। প্রতিটি কোষ নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘ফাইটোক্যমিকেল’ ধারন ও ব্যবহার করে সকল জৈবিক কাজ সম্পাদন করে। সেই নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘ফাইটোক্যামিকেল’ বা ‘প্ল্যান্ট ক্যামিকেল’ গুলো হলো; (১) এমাইনোএসিড (২) গ্লুকোজ (৩) ফ্যাটি এসিড (৪) ভিটামিনস (৫) মিনারেলস (৬) পানি। এই ফাইটোক্যামিকেল গুলোর যকোন
একটি বা কয়েকটি বা সব কয়টির অভাব হলেই দেহ কোষ অসুস্থ হয় এবং মৃত্যুবরন করে। গবেষনায় জানা গেছে ফাইটোক্যামিকেল এর অভাবে মানব দেহে ১ লক্ষ রোগ হয়।
মানব দেহে ২২০ ধরনের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ বিলিয়ন হচ্ছে ‘নিউরোন সেল’ বা স্নায়ুকোষ’। দেহের প্রত্যেকটি কোষ এরই প্রতিদিন ,নির্দিষ্ট পরিমান ‘ফাইটোক্যামিকেল’ প্রয়োজন হয়।
স্নায়ুকোষ’ বিশেষ ধরনের ‘জীবকোষ’। এক সময় ধারনা করা হতো, স্নায়ুকোষ থেকে নতুন কোষের সৃষ্টি হয় না। কিন্তু গবেষনায় জানা গেছে,মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট দুটি অংশ ছাড়া অন্যান্য অংশের স্নায়ু কোষ এর বিভাজন ঘটে।
স্নায়ুকোষ বিশেষ ধরনের বেশ কিছু ‘নিউরোহরমোন’ উৎপন্ন করে। এই হরমোন গুলো ‘প্রোটিন’ ধর্মী। আর প্রোটিন হচ্ছে ‘এমাইনোএসিডের চেইন’। প্রতিটি স্নায়ুকোষের স্নায়ুতন্তু’ গুলো ‘চর্বি (Fat)ও প্রোটিন (Protein)) আবরনী স্তর দ্বারা গঠিত। এই আবরনী স্তরকেই ‘মায়েলিন’ বলা হয়। এই মায়েলিন স্তর নষ্ট হলে; স্নায়ু+ কোষ, স্নায়ু+স্নায়ু পেশীকোষ, স্নায়ু+গ্ল্যান্ডকোষ এর মধ্যে যোগাযোগ ব্যহত হয়। সমগ্র দেহ ব্যবস্থার যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারন ‘মস্তিষ্ক’ ও ‘মেরুরজ্জুর’ স্নায়ুকোষ এর নির্দেশেই দেহের ভিতর ও বাহিরের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর স্নায়ুকোষ , তন্তুর (Nerve fiber) মাধ্যমেই এই যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন করে থাকে।
স্নায়ুকোষ কতৃক উৎপাদিত কতিপয় নিউরোহরমোন এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হলো ঃ
এসিটাইকোলিনঃ
এটি দেহের প্রধান একটি নিউরো-হরমোন। এর আনবিক গঠন C7H16NO2+ । এটি ‘এসিটিক এসিড’ ও ‘কোলিন’ এর এস্টার। কোলিন হচ্ছে ভিটামিন-বি। কোলিনারজিক স্নায়ুকোষ ‘এসিটাইকোলিন’ উৎপন্ন করে, কোলিন এবং এসিটাইল-কোয়া যৌগ হতে।
এনজাইম ‘এসিটাইলকোলন এস্টারেজ’ এসিটাইকেলিন কে ভেঙ্গে ,কোলিন ও এসিটেট এ পরিনত করে। এই এনজাইম ‘সীনাপস’ সংযোগে প্রচুর পরিমানে থাকে সীনাপস থেকে দ্রুত গতিতে ‘এসিটাইকোলিন’ নিষ্ক্রিয় না হলে, পেশীর কার্যকারীতায় বিঘœ ঘটে। কিছু ‘নিউরো টক্সিন’ এনজাইম ‘এসিটাইলকোলিন এস্টারেইজ’ কে বল্ক করে। ফলে পেশীর ‘প্যরালাইসিস’ হয়, শ্বাস এবং হৃদ স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।
ডোপাপিন(C8H11NO2):ডোপানারজিক স্নায়ুকোষ, এসেনসিয়াল এমাইনোএসিড ‘টাইরোসিন’ থেকে পর্যায়ক্রমে ডোপা ► ডোপামিন ► নরএডরেনালিন ► এডরেনালিন তৈরি হয়। এই নিউরোহরমোন এর মাধ্যমে +স্নায়ু কোষ,স্নায়ু +পেশী কোষস্নায়ু,+গ্ল্যান্ড,স্নায়ু +আন্তর যন্ত্র যোগাযোগ এবং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। মস্তিষ্ক
স্নায়ুকোষ গুলির যোগাযোগের প্রধান নিউরোহরমোন হচ্ছে ‘ডোপামিন’। ডোপানারজিক স্নায়ু (প্রায় ৪লক্ষ) নষ্ট হলে ‘পার্কিনসন্স’ ও ‘সিজোফ্রেনিয়া’ রোগ দেখা দেয়। স্বাভাবিক ডোপামিন হরমোন Reward motivated behavior’ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। Addictive drug ডোপামিন বৃদ্ধি করে। ADHD (এটেনশান ডিফিসিট হাইপারএকটিভিটি ডিসঅর্ডার) এবং জখঝ (রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম) রোগ হয় ‘ডোপামিন’ কমে যাওয়ার কারনে।
স্নায়ুতন্ত্রের বাইরে ‘ডোপামিন’ স্থানীয় রাসায়নিক বার্তা বাহক’ হিসাবে কাজ করে। ধমনীর প্রসারন ঘটায় ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন হয়। কিডনিতে ‘সোডিয়াম’ নিষ্কাষন বাড়ায় ফলে ইউরিন এর পরিমান বাড়ে। প্যানক্রিয়াসের ‘ইনস্যুলিন’ তৈরি কমায়। পরিপাক তন্ত্রের গতি কমায়। লিম্পোসাইট (বি-সেল ও টি-সেল) এর কার্যকারীতা কমায়।
ড্রাগ হিসাবে ‘ডোপামিন’ এর ব্যবহারঃ
হার্ট ফেইলিউর বা শক হলে ‘ডোপামিন’ ইনট্রাভেনাস ইরজেকশান হিসাবে দেয়া হয়। L-DOPA, ড্রাগ হিসাবে ‘পার্কিনসন্স’ রোগে ব্যবহার হয়।
হিস্টামিন (Histamin C5H2N3):
এটি একটি যৌগ যা এমাইনোএসিড ‘হিস্টিডিন’ থেকে উৎপন্ন হয়। এটি দেহের সকল কোষে পাওয়া যায়। তবে ‘মাষ্টসেল’ গুলি এর নিঃসরনের বিশেষ ভাবে জড়িত। হিস্টামিন দেহের রক্ত নালী প্রসারন এবং মসৃন পেশীর সংকোচনে কাজ করে। যে কোন ‘ইনফ্লামমেশন’ এ এটি নিঃসৃত হয়। তবে বেশী নিঃসৃত হয় চর্মের ক্ষতে। ‘এনাফাইল্যাকটিক’ ক্রিয়ায় (বিশেষ কোন ‘এন্টিজেন’ এর প্রতি অতিক্রিয়া) এবং যে কোন এলার্জি অবস্থায় ‘হিস্টামিন’ নিঃসৃত হয়।
মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষেও ‘হিস্টামিন’ এর কার্যকরীতা জানা যায়। হিস্টামিনারজিক স্নায়ুকোষ, হিস্টামিন নিঃসরন করে। এটি দেহকে ‘জাগ্রত’ রাখা ও ‘ঘুম’ কে বাঁধা দেয়ার কাজ করে। এ জন্য ‘এন্টিহিস্টামিন ড্রাগ’ গ্রহন করলে ঘুম আসে। হিস্টামিনারজিক স্নায়ুকোষ ধ্বংশ হলে বা হিস্টামিন সংশ্লেষন বন্ধ হলে দেহের সর্তকতা (Alertness) কমে যায়।
সেরোটনিন (Serotonine C10H12N2O) :
সেরোটোনিন একটি মনোএমাইন ‘নিউরোহরমোন’। এই সেরোটনিন তৈরি হয় ‘ট্রিপটোপেন’ নামক এমাইনোএসিড হতে। ‘এনটেরোক্রোমাফিন কোষ’ এই সেরোটনিন উৎপন্ন করে। ৯০% এনটেরোক্রোমাফিন কোষ অন্ত্রনালীতে থাকে। সেখানে এটি অন্ত্রীয় গতী ঠিক রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। বাকী সেরোটোনিন উৎপন্ন হয় ‘সেরোটোনারজিক স্নায়ুকোষে। মস্তিস্কে এটি আবেগ অনুভূতি ক্ষুধা এবং ঘুম ব্যবস্থাপনায় কাজ করে। সেরোটোনিন স্মরন এবং শিখার কাজে মস্তিষ্ক কোষে ব্যবহৃত হয়।
GABA (Gama
Amino butyric acid C4H9NO2):
এটি একটি এমাইনোএসিড। কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি প্রধান প্রতিরোধী ‘নিউরোহরমোন’। এটি স্নায়ু কোষের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রন করে। GABAA Receptor হলো ‘ক্লোরাইড’ গ্রাহী রিসেপ্টর। যখন গাবা ক্রিয়াশীল থাকে ক্লোরাইড আয়ন কে কোষের ভিতর ও বাইরে যাতায়তের ব্যবস্থা করে থাকে।
যখন ক্লোরাইড, স্নায়ুকোষ অভ্যন্তর হতে বাহিরে আসে,তখন গাবা উত্তেজক (Excitatory) হিসাবে কাজ করে। আবার যখন ক্লোরাইড,কোষ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে,গাবা তখন প্রতিরোধী (Inhibitor) হিসাবে কাজ করে। গাবারনাজিক স্নায়ু কোষ, গাবা উৎপন্ন করে।
যেহেতু সকল স্নায়ু কোষের পুষ্টি গ্রহন,শক্তি তৈরি প্রক্রিয়া অভিন্ন, শুধু ভিন্ন ভিন্ন কোষ ভিন্ন নিউরোহরমোন তৈরি প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। প্রতিটি নিউরোহরমোন তৈরির জন্য কোষের ‘নিউক্লিয়াসে’ একটি নির্দেশকারী ‘জিন’ রয়েছে। এই জিন ‘ডিএনএ’ দ্বারা গঠিত হয়। প্রতিটি ‘ডিএনএ’ গঠিত হয় অনেক গুলো ‘নিউক্লিওটাইড’ দ্বারা।
প্রতিটি নিউক্লিওটাইড ,একটি ‘রিবোজ সুগার’, পিউরিন বা পাইরিমিডিন নামক প্রোটিন অনু এবং একটি ফসফরিক এসিডের অনু।
রিবোজ সুগারঃ
একটি কার্বহাইড্রেট বা শর্করা ,যা উদ্ভিদ দেহে ‘গ্লুকোজ’ হিসাবে তৈরি হয়। মানব কোষ গ্লুকোজকে ‘রিবোজ সুগার’ এ পরিনত করে। এটি ‘ডিএনএ’ গঠনের অপরিহার্য উপাদান।
পিউরিন বা পাইরিমিডিনঃ
একটি প্রোটিন অনু । প্রতিটি ‘উদ্ভিদ’ ও ‘প্রানি’ দেহে এই প্রোটিন তৈরি হয়। এটি ‘ডিএনএ’ গঠনের অপরিহার্য উপাদান।
ফসফরিক এসিডঃ
ফসফরাস এক ধরনের সক্রিয় প্রাকৃতিক খনিজ মৌল। প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে এই ফসফরাস হতে ‘ফসফরিক এসিড’ তৈরি হয়। এটি ‘ডিএনএ’ গঠনের অপরিহার্য উপাদান।
প্রকৃতিতে উদ্ভিদ কোষ ,সূর্যালোক, পানি ও কার্বনডাই অক্সাইড ব্যবহার করে; এমাইনোএসিড, গ্লুকোজ, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিনস প্রস্তুত এবং মাটি থেকে মূলের সাহয্যে পানি ও মিনারেলস সংগ্রহ করে, উদ্ভিদ দেহ গঠন করে।
প্রানি কোষ ,উদ্ভিদ কোষ কে ভেঙ্গে ,কোষের অভ্যন্তরস্থ
এমাইনোএসিড, গ্লুকোজ, ফ্যাটি এসিড, ভিটামিনস ,পানি ও
মিনারেলস কে আলাদা করে ফেলে এবং পুনরায় গ্রহন করে, প্রানি কোষ পুনঃগঠন করে। প্রানি কোষ জীবন ধারনের জন্য উক্ত জৈব অনু সমূহ ব্যবহার করে, প্রয়োজনীয় বিলিয়ন বিলিয়ন জৈব অনু ( যেমন,১লক্ষ৪০হাজার প্রোটিন,প্রায় ৬৫হাজার এনজাইম, প্রায় ৬৫ ধরনের হরমোন এবং বিলিয়ন বিলিয়ন এন্টিবডি) তৈরি করে। স্নায়ু কোষের নিউরোহরমোন একই প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত হয়।
প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি মূলতঃ সঠিক খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে
কোষীয় পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। কোষের ‘ডিএনএ’ পর্যায়ে ধ্বংশ না হলে কোষের সঠিক পুষ্টি পরিচর্যার মাধ্যমে “সকল রোগ নিরাময় সম্ভব’ করে তোলে।
---------------------------------------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment