এন্ডোক্রিন অরগ্যানস বা নির্নালী গ্রন্থি অসুখের
স্টেম সেল নিউট্রিশান থেরাপী-
Dr.Shebendra karmakar
Doctorate & Ph.D in Natural Medicine,USA
মানবদেহের একটি বিশেষ অতি প্রয়োজনীয় অংশ হলো
নির্ণালী গ্রন্থী বা এন্ডোক্রিন অরগ্যান্স। এদের নিঃসরন সরাসরি রক্তে মিসে যায়
বলে এদের কে নির্ণালী গ্রন্থি বলে।
এসব গ্রন্থির এক ফোঁটা নিঃসরন বলতে গেলে মানব দেহের সব কিছুকেই নিয়ন্ত্রন করে। যেমন ধরা যাক, একটি শিশুর জন্মানোর সময় বাহ্যিক লিঙ্গভেদ ছাড়া একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী শিশুতে কোন পার্থক্য দেখা যায় না। কিন্তু শিশুটির বয়স যখন ১৪/১৫ বৎসর হয় তার দেহে বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়।
পুরুষ শিশুটির কন্ঠস্বর গম্ভীর,মুখে দাড়িঁ গোঁফ ,নারীর প্রতি আর্কষন, দেহ হলো পেশী বহুল ও শক্ত। স্ত্রী শিশুটির কন্ঠ হলো সুরেলা , দেহের বিভিন্ন অংশে মেদ জমতে থাকে বক্ষ ও নিতম্ব উন্নত হয়, পুরুষের প্রতি আকর্ষন সৃষ্টি হয়।
এই যে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি হলো , এর মূলে বিভিন্ন নির্ণালী গ্রন্থির কয়েক ফোঁটা রস মাত্র।
একজন মানুষ হয় বেঁটে একজন হয় লম্বা । একজন হয় সুদৃঢ় একজন হয় দুর্বল। কেউ বেশী যৌন ক্ষমতার অধিকারী হয়্, কেউ কম ক্ষমতা পায়। কেউবা সাত ফুটের মত লম্বা কেউবা পাঁচ ফুটের ও কম।
এসব কিছুর পিছনে
রয়েছে
এন্ডোক্রিন গ্রন্থির নিঃসরন। রাসায়নিক গঠন ভেদে দুধরনের প্রায় ৬৫ ধরনের হরমোন উৎপন্ন হয়।
(১) প্রোটিন জাতীয় যা এমাইনো এসিডের একটি চেইন।
(২) স্টেরয়েড জাতীয় যা ফ্যাটি এসিডের একটি চেইন।
হরমোনদের নির্দিষ্ট কিছু গুনাগুন রয়েছে:
১) এদর নির্দিষ্ট রাসায়নিক গুনাগুন রয়েছে এবং বিশেষ ধরনের কতকগুলি কোষ
থেকে এরা উৎপন্ন হয়।
২) তারা প্রত্যক্ষভাবে রক্তে মিশে যায়।
৩) দেহের দূরবর্তী প্রান্তে ও কাজ করার ক্ষমতা রাখে।
৪) খুব কম নিঃসৃত হয় ,দেহে শক্তি যোগায় না।
৫) সহজে জলে গলে যায়।
৬) আনবিক ওজন কম হওয়ায় অতি সহজে রক্তজালিকা ও টিস্যুতে প্রবেশ করে।
মানব দেহের প্রধান প্রধান এন্ডোক্রিন গ্রন্থির কাজ বর্ননা করা হলো:
পিটুইটরিী গ্রন্থি:
এটি দেহের প্রধান নির্ণালী গ্রন্থি যা
বিশেষ ধরনের কোষ দ্বারা নির্মিত। পিটুইটারী গ্রন্থি কোষ নিঃসৃত হরমোন এর সংখ্যা অনেক এবং এর বিভিন্ন
হরমোন , দূরবর্তী ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্তির নিয়ন্ত্রন কর্তা। এর প্রত্যেকটি হরমোন প্রোটিন ধর্মী অর্থাৎ এমাইনো এসিডের চেইন। এমাইনো এসিড হচ্ছে জৈব অনূ যা উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় নিজ দেহে উৎপন্ন করে থাকে। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ও শক্তিশালী কিন্তু সবচেয়ে ছোট গ্রন্থি। পিটুইটারী গ্রন্থির দুটি অংশ থাকে। সম্মুখ অংশ ও পশ্চাত অংশ।
পিটুইটরীর সম্মুখ অংশ হতে নিঃসৃত হরমোন সমূহ:
১) সোমাটোট্রপিক হরমোন বা গ্রোথ হরমোন
(GH).
২) থাইরয়েড হরমোন উদ্দিপক হরমোন (TSH)
৩) এ্যাড্রেনোপোষক হরমোন (ACTH)
৪) ফলিকল উদ্দীডপক হরমোন (FSH)
৫) লিউটনইজিং হরমোন (LH)
৬) যৈানগ্রন্থি উদ্দীপক হরমোন (GTH)
৭) প্রোল্যাকটিন হরমোন (PTH)
পিটুইটরীর মধ্যভাগ হতে মেলানোসাইট উদ্দীপক হরমোন (MSH) নিঃসৃত হয়।
পিটুউটরীর পশ্চাৎ প্রান্ত থেকে ভ্যাসোপ্রেসিন বা
মূত্র নিরোধক (ADH) যা কিডনি কে
নিয়ন্ত্রন এর মাধ্যমে দেহ হতে
অতিরিক্ত পানি বের হতে বাধা প্রদান করে
দেহে পানি ভারসাম্য রক্ষা করে । ঘুমের মধ্যে যারা প্রেস্রাব করে , বা যারা প্রেস্রাব নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা এডিএইছ হরমোন অকার্যকারীতাই এর জন্য দায়ী। এবং অক্সিটোসিন হরমোন সন্তান জন্মের কিছুক্ষন আগে জরায়ুকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ট হতে মূল ভূমিকা পালন করে। ভ্যাসোপ্রেসিন ও অক্সিটোসিন দুটা হরমোনই প্রোটিনধর্মী অর্থাৎ প্রতিটি হরমোন ৯টি এমাইনো এসিডের একটি চেইন।
থাইরয়েড গ্রন্থি:
একজোড়া থাইরয়েড গ্রন্থি যা বিশেষ ধরনের কোষ দ্বারা নির্মিত। শ্বাসনালীর উভয়
পাশে অবস্থিত। হলদে-লাল রঙ এর দুটি পিন্ড নিয়ে এটি গঠিত। এর ওজন ২০-২৫গ্রাম।
এটি থেকে ৩ ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। ১) থাইরক্সিন ২) টাই-আয়োডো থাইরোনিন ৩) থাইরো-ক্যালসোটোনিন। এ সব হরমোন প্রোটিনধর্মী অর্থাৎ এমাইনো এসিডের চেইন।
থাইরয়েড হরমোনের কাজ:
১) এনজাইমের উপর ক্রিয়া: ক্রিয়া বেশি হলে কম পক্ষে ১৩টি এনজাইম এর নিঃসরন
বেশী হয়, কম ক্রিয়া হলে এ এনজাইমের নিঃসরন কম হয়।
২) মেটাবলিজম: টিস্যু বিপাক এবং বেসাল মেটাবলিজম এর উপর বিরাট কাজ করে।
৩) হার্টের উপর ক্রিয়া: হার্টের ফ্রিকোয়েন্সি ও ফোর্স এর ফলে বেড়ে যায়,অভাবে কম হয়।
৪) অন্ত্র থেকে গ্লুকোজ শোষন বৃদ্ধি করে।
৫) ফ্যাট মেটাবলিজম: এই হরমোন বেশি হলে দেহে ফ্যাট কম জমে , কম হলে দেহে প্রচুর ফ্যাট
জমে।
৬) এই হরমোন প্রোটিন পুনরগঠন ও ভাঙ্গন বৃদ্ধি করে।
৭) আয়োডিন মেটাবলিজম: এই হরমোনের কাজ বেশি হলে দেহের
সব আয়োডিন বেড়িয়ে যায়। কম হলে দেহে আয়োডিন জমে। এই গ্রন্থি আয়োডিন দ্বারা পরিচালিত হয়। গ্রন্থির কাজ বেশি হলে আয়োডিন ক্ষয় হয় এবং গ্রন্থির আকার বৃদ্ধি করে। এটিকেই গলগন্ড রোগ বলে। আয়োডিন ্ একটি খনিজ পদার্থ যার উৎস মাটি। মাটির আয়োডিন অজৈব। এই অজৈব আয়োডিন দেহ কোষ ব্যবহার করে না। উদ্ভিদ মাটি থেকে যে আয়োডিন
নিজ দেহে সংগ্রহ করে , সেটিই দেহ কোষ ব্যবহার করে।
৮) কিডনির উপর কাজ: এ হরমোন কিডনির কাজ বৃদ্ধি করে ,ফলে প্রেসাব বেশি হয়।
৯) এটি রক্ত কোষ গুলিকে কর্মক্ষম করতে সাহায্য করে। দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ঠিক রাখে।
থাইরয়েড হরমোন কিভাবে তৈরি হয়:
থাইরয়েড গ্রন্থি কোষে থাইরোগ্লোবিন (বিশেষ ধরনের প্রোটিন ) সংশ্লেষিত হয়। এটি মুলতঃ আয়োডিন সংযুক্ত একটি প্রোটিন। ১১৫ টি টাইরোসিন (এমাইনো এসিড) রেসিডিউ যার প্রতিটি অবস্থানে আয়োডিন সংযুক্ত হতে পারে।
= থাইরয়েড হরমোন তৈরির প্রথম ধাপে ,থাইরয়েড গ্রন্থি কোষ বর্হিভূত তরল হতে
আয়োডাইড স্থানাতর করে
কোষের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। আযোডাইড জারিত হয়ে আয়োডিন এ পরিনত হয় এবং হরমোন
তৈরির অপরিহার্য প্রক্রিয়া কোষের মধ্যে সম্পন্ন
হয়। এর জন্য পার-অক্সিলেট নামক একটি এনজাইম প্রয়োজন হয়।
= আয়োডিন ,থাইরো গ্লোবিউলিন এর প্রতিটি এমাইনো এসিড (টাইরোসিন)
এর সাথে ক্রিয়া করে পর্যায়ক্রমে মনো-আয়োডো-টাইরোসিন (MIT)এবং ডাই-আয়োডো-টাইরোসিন (DIT) উৎপন্ন
করে।
= দুটি DIT অনু মিলে একটি T4 হরমোন এবং একটি MIT এবং একটি DIT মিলে T3 হরমোন উৎপন্ন হয়।
থাইরয়েড হরমোন রক্ত স্রোতে কিভাবে মিশে:
থাইরয়েড কোষ প্রাচীর এ এমিবয়িক পা এর মত বের হয় এবং কোষ সংলগ্ন
তরল কে ঘিরে ফেলে
থলি (Pinocytic
vesicles)
তৈরি করে। মুহূর্তের মধ্যে লাইসোসোমস ( কোষের একটি অঙ্গ যা বিভিন্ন হজমী এনজাইম ধারনকারী থলি)
পিনোসনাইটিক থলি কে ছিদ্র করে দেয় এবং হজমী রসের সাথে মিশে হজমী থলি (Digestive vesicles) তৈরি করে। প্রোটিন হজমকারী এনজাইম (Protenases) ,থাইরো
গ্লোবিউলিন কে হজম করে এবং থাইরোক্সিন
(T4) এবং ট্রাই-আয়োডো- থাইরোনিন (T3) হরমোন দ্বয়
কোষ সংলগ্ন রক্ত জালিকায় মুক্ত হয়। এ ভাবে থায়রয়েড হরমোন রক্তে উন্মুক্ত হয়।
থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH):
এটি গ্লাইকো প্রোটিন হরমোন। এটি মস্তিষ্কের পিটুইটরী গ্রন্থির সম্মূখ অংশ হতে উৎপন্ন ও নিঃসৃত হয়।
থাইরয়েড গ্রন্থির উপর এর অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি T3 ও T4 সংশ্লেষনে , আয়োডিন ট্র্যাপিং ও ,থাইরো গ্লোবিউলিন
সংযুক্তকর এবং
পৃথকীকরন।
থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমান (TRH):
মস্তিষ্কের হাইপো-থ্যালামাস অংশে এই হরমোন উৎপন্ন ও নিঃসৃত হয়। এই হরমোন
TSH এর
নিঃসরন কে নিয়ন্ত্রন করে। মস্তিষ্ক উত্তেজিত হলে হাইপো-থ্যালামাস উত্তেজিত হয় ফলে TRH এর নিঃসরন বৃদ্ধি পায়। ফলে TSH এর নিঃসরন বৃদ্ধি ঘটে এবং থাইরয়েড গ্রন্থির সক্রিয়তা বেড়ে যায়।
থাইরয়েড হরমোন নিঃসরন ও নিয়ন্ত্রন এর প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা:
যখন দেহে থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধি পায় , তখন TSH এর নিঃসরন ক্ষমতা কমে আসে। T3 হরমোন হাইপো-থ্যালামাস এর TRH কে নিঃসরনে বাঁধা দেয়। এ ভাবে দেহে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরন ও নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
হাইাপার-থাইরোডিজম (অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরন) জনিত একটি রোগ হচ্ছে গ্রেভস ডিজিজ।
গ্রেভস ডিজিজের লক্ষন:
১) চর্ম চকচকে, ভেজা ভেজা এবং সবসময় বর্তমান থাকে।
২) চোখ বড় বড় হয়।
৩) দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয,ফলে পেশিতে মৃদু কম্পন হয়।
৪) ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় দূর্বল হয়।
৫) হার্ট বিট বৃদ্ধি পায়।
৬) প্রস্রাব ঘন ঘন হয় ও মাত্রা বেড়ে যায়।
৭) ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
৮) ফ্যাট সঞ্চয় কমে যায়।
৯) রক্তে কোলেস্টরল কমে যায়,আয়োডিন বৃদ্ধি পায়।
১০) পুরুষের যৌন ক্ষমতা কমে,নারীদের ঋতু স্রাব কমে।
১১) হঠাৎ খুব বেশি রেগে উঠে।
হাইপো-থাইরোডিজম (অল্প হরমোন নিঃসরন) জনিত রোগ হচ্ছে মিক্সিডিমা ও ক্রিটিনিজম
মিক্সিডিমা রোগের লক্ষন:
১) দেহ ফ্যাকাশে হলুদ ও মোটা।
২) চর্ম হয় মোটা ও খসখসে ধরনের ।
৩) মুখ হয় মোটা ও থলথলে।
৪) ঘাড়ে মেদ জমতে থাকে।
৫) চুল উঠতে থাকে।
৬) যৌন বিরক্তি আসে।
ক্রিটিনিজম রোগের লক্ষন:
১) বেঁটে আকৃতি হয়।
২) হাড় গুলো মোটা হয় ,লম্বা হয় না।
৩) চর্ম খসখসে ও মোটা ধরনের।
৪) পেশির ক্ষমতা কমে যায়।
৫) পেট হয় মোটা।
৬) ব্লাড সুগার কমে যায় , বয়স অনুযায়ী দেহ গঠিত হয় না।
গয়েটার রোগ:
থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয় থাকলে , অতিরিক্ত আয়োডিনের প্রয়োজন হয়। আয়োডিন এর অভাব থাকলে সক্রিয় গ্রন্থি কোষ আকার পবির্তন করে ফুলে উঠে। একেই গয়েটার রোগ বলে।
থাইরয়েড গ্রন্থি রোগের এ্যালোপ্যাথিক ব্যাবস্থাপনা:
এন্টি-থাইরক্সিন ড্রাগ (হাইপার-থাইরোডিজম):
কার্বাইমাজল (Carbimazole
C7H10N2O2S) এটি এনজইম থাইরয়েড পার-অক্সিডেজ কে বাঁধা দেয়। যাতে থাইরোগ্লোবিউলিন এর টাইরোসিন (এমাইনো এসিড) এর
সাথে আয়োডিনের সংযোগ না ঘটে। এ ভাবে T3 ও T4 হরমোন দ্বয়ের উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
এ গ্রুপের অন্য দুটি ড্রাগ থাইরোপারঅক্সিডেজ ও মেথইমাজল।
থাইরক্সিন
(হাইপো-থাইরোডিজম):
এল-থাইরক্সিন ( L-Thyroxin) একটি সিনথেটিক থাইরয়েড হরমোন যা রাসায়নিক ভাবে T4 এর মত। T3 ও T4 দেহ কোষের থাইরয়েড রিসেপ্টর প্রোটিন এর সাথে বন্ধন তৈরি করে এবং নিউক্লিয়াস এর ডিএনএ কে সাড়া জাগানোর মাধ্যমে প্রোটিন সংশ্লেষন স্বাভাবিক রাখে।
প্যারা-থাইরয়েড গ্রন্থি:
দু-জোড়া প্যারা-থাইরয়েড গ্রন্থি যা বিশেষ ধরনের কোষ দ্বারা নির্মিত,থাইরয়েঢড গ্রন্থির
পেছনে এবং আংশিক ভাবে থাইরয়েড এর মধ্যে অবস্থিত । এই গ্রন্থি হতে প্যারা-থরমোন নামে একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এ হরমোন প্রোটিনধর্মী অর্থাৎ এমাইনো এসিডের চেইন। এর ওজন ১১০মিগ্রা:। এই
হরমোন এর প্রধান কাজ হলো, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর বিপাক করা।
হাইপো-প্যারাথাইরোডিজম (কম হরমোন তৈরি হলে):
১) রক্তে ক্যালসিয়াম কমে যায়।
২) প্রস্রাব এ স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক বেশি পরিমান ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়।
৩) নার্ভ ও পেশির উত্তেজনা বেশী হয়।
৪) সব জয়েন্ট সংকোচিত হয়।
হাইপার-প্যারাথাইরোডিজম (বেশি হরমোন তৈরি হলে):
১) রক্তে ক্যালসিয়াম বেড়ে যায় ,ফসফরাস কমে যায়।
২) প্রস্রাবে ফসফরাস বেশী নিঃসৃত হয়।
৩) হাড়ের ক্যালসিয়াম সঞ্চয় হয় না ফলে প্রচুর গর্ত হয়।
৪) পেশি ও স্নায়ুর উত্তেজনা বৃদ্ধি করে।
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের উপরে প্যারা-থরমোন এর কাজ:
১) দেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর কাজে ভারসাম্য রক্ষ করে এই হরমোন:
২) এর কাজ
বেশি হলে
হাড় থেকে ক্যালসিয়াম বেড়িয়ে যায়। কম হলে ফসফরাস বেড়িয়ে যায়। ফলে হাড় গঠন ঠিক মত হয় না।
দেহে ফসফরাস কম হলে,ক্যালসিয়াম কাজ করতে পারে না। আবার ক্যালসিয়াম কম হলে ফসফরাস কাজ করতে পারে না।
এড্রেনাল বা সুপ্রানেলাল গ্ল্যান্ড :
প্রতিটি বৃক্কের মাথায় টুপির মত একটি করে মোট দুটি এ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থাকে। প্রতিটি গ্রন্থির বাইরের হলুদ অংশকে “কর্টেক্স’
এবং ভিতরের পিঙ্গল বর্ণের অংশকে “মেডুলা” বলে। প্রতিটি গ্ল্যান্ড এর ওজন ১০গ্রাম। এই গ্রন্থির উভয় অংশ হতে হরমোন নিঃসৃত হয়।
কর্টেক্স এর তিনটি স্তর থাকেঃ
১)
জোনা গ্লুমেরুলেসা (Zona glumerulesa): বাইরের আবরন গঠন করে।
২)
জোনা ফেসিকিউলোটা (Zona
Faciculata) সবচেয়ে মোটা আবরন এবং সবচেয়ে বেশি হরমোন নিঃসরন করে।
৩)
জোনা রেটিকিউলারিস (Zona
Raticuleris)অভ্যন্তরীন স্তর।
কর্টেক্স হতে নিঃসৃত হরমোন সমূহ এবং এর কাজঃ
১)
শর্করা কর্টিকয়েড (glucoorticoid) কর্টিসোল।
২)
মিনারাল কর্টিকয়েডস Minerlocorticoid) এলডোসটেরন।
৩)
এন্ড্রোজেন বা সেক্স কর্টিকয়েড (Sex
corticoid) টেসটোসটেরন।
কর্টিসোল এর কাজঃ
এড্রেনাল গ্রন্থির ‘জোনা ফেসিকিউলাটা’ কোষ হতে এই হরমোন নিঃসৃত হয়।
শর্করা বিপাকে ‘কর্টিসল; এর কাজঃ
১) লিভারে গ্ল্রকোজ উৎপাদনে ‘কটিসল’ কাজ করে।
২) নন কার্বহাইড্রেড উপাদান (এমিনোএসিড,ফ্যাটি এসিড) হতে ‘গ্লুকোজ’ উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
৩) দেহের প্রোটিন ভেঙ্গে ‘এমাইনো এসিড’ উৎপাদন করে।
৪) দেহ কোষে ‘গ্ল্রকোজ’ব্যবহার কমিয়ে দেয়।
প্রোটিন বিপাকে ‘কর্টিসোলঃ
১) লিভারে প্রোটিন এবং RNA সংশ্লেষন উৎসাহিত করে।
২) পেশি কোষ ,লিম্ফয়েড কোষ,চর্বি কোষ,চর্ম ও হাড় কোষে প্রোটিন ও জঘঅ সংশ্লেষন কমিয়ে দেয়। এবং ভাঙ্গন বৃদ্ধি করে।
৩) প্লাজমা প্রোটিন (লিভারে উৎপন্ন হয়) বৃদ্ধি করে।
চর্বি বিপাকে ‘কর্টিসল’
১) অতিরিক্ত ‘কর্টিসল’দেহের কিভিন্ন অংশে চর্বি জমাতে সাহায্য করে।
২) রক্তরসে মুক্ত ফ্যাটি এসিড বৃদ্ধি করে এবং তা দেহের শক্তি তৈরিতে ব্যয় হয়। এতে দেহ কোষে ‘গ্ল্রকোজ” এর ব্যবহার কমে আসে।
৩) এই হরমোন কোষে ফ্যাটি এসিডের জারন (অক্সিডেশন) বৃদ্ধি করে।ফলে দেহ কোষে ফ্রীরেডিকেল (মুকÍ আয়ন) তৈরি হয়। অধিক মুক্ত আয়ন কোষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৪) এটি হৃদপিন্ডের গতি বৃদ্ধি করে।
৫) ফুসফুসের পেশী গুলোকে ঢিলে করে ফলে শ্বাস গ্রহনে সুবিধা হয়।
কর্টিসল এর প্রদাহ বিরোধী ক্ষমতাঃ
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রদাহ
(Inflammation) প্রতিরোধে কর্টিসল নিন্ম উল্লোখত উপায়ে কাজ করে।
১) কোষ এর ‘লাইসোসোম’ (কোষের ভিতরে একটি অঙ্গানু যা বিভিন্ন ধরনের হজমকারী এনজাইম ধারন করে) কে ভাংতে বাধা দেয় ফলে কোষ দেহ ক্ষতি গ্রস্থ হয় না।
২) রক্ত জালিকার ভেদ্যতা কমিয়ে দেয় ফলে টিস্যুতে ররÍরস এর প্রবেশ কমে আসে এবং শ্বেত কনিকার গমন হ্রাস করে। ফলে প্রদাহ কমে আসে।
৩) শ্বেত রক্ত কনিকার (Immune Cell) ক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার ফলে দেহের জীবানু বিরোধী ক্ষমতা কমে আসে। ফলে অতি সহজেই জীবানু দ্বারা
আক্রান্ত হয়।
৪) প্রদাহ এর ফ্যাক্টর গুলোতে বাধা প্রদান করে দ্রুত গতিতে প্রদাহ কমিয়ে আনে।
৫) অতিরিক্ত ‘কর্টিসল’দেহে যে রোগ তৈরি করে একে ‘কাশিংসিনড্রম”বলে।
৬) কর্টিসল “অনুপস্থিতি” দেহে “এডিসনস’ রোগ হয়।
প্রদাহ বিরোধী ড্রাগ হিসাবে ‘কটিসোর্ল’ব্যপক ভাবে ব্যবহৃত হয়।
অতিরিক্ত ‘এন্ড্রোজেন’ ভিরিলিজম (Virilism) রোগ তৈরি করে।
ভিরিলিজমঃ ছেলেকে মেয়ে বৈশিষ্ট্য , মেয়েকে ছেলে বৈশিষ্ট্য প্রদান কে ‘ভিরিলিজম বলে।
এলডোসটেরন হরমোনের কাজঃ
১/ কিডনির বিভিন্ন অংশের ‘এপিথেলিয়াম কোষে’ সোডিয়াম আয়ন (Na) শোষন বৃদ্ধি করে।
২/ কিডনির বিভিন্ন অংশের ‘এপিথেলিয়াম কোষে’ পটাসিয়াম আয়ন (K) নিঃসরন করে এবং মুত্র দিয়ে বের করে দেয়।
= হাইপো-কেলেমিয়া (Hypo-kelemia) কোষ বহিস্তঃ স্তরে ‘পটাশিয়াম আয়ন’ কমে গেলে মারাত্মক পেশী দুর্বলতা তৈরি হয়।
= হাইপার-কেলেমিয়া (Hyper-kelemia): কোষ বহিস্তঃ স্তরে ‘পটাশিয়াম আয়ন’ বেড়ে গেলে হৃদ পেশির মারাত্মক সংকোচন অবস্থা সৃষ্টি হয়।
৪/ এলডোসটেরন এর প্রভাবে কোষ বহিস্তঃ স্তরে ১০%-২০% তরল বৃদ্ধি পায়। এর অনুপস্থিতিতে বিপরীত প্রক্রিয়া ঘটে।
= অতিরিক্ত ‘এলডোসটেরন’ মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ এর কারন হয়।
= ‘এলডোসটেরন’ চর্মের ঘাম গ্রন্থিতে সোডিয়াম ক্লোরাইড (Nacl) শোষন বৃদ্ধি করে এবং পটাশিয়াম বের করে দেয়।
= ‘এলডোসটেরন’ ক্ষুদ্রান্তে সোডিয়াম শোষন বৃদ্ধি করে। ফলে দেহে সোডিয়াম এর ভারসাম্য ঠিক থাকে।
এড্রেনাল মেডুলার হরমোনের কাজঃ
এড্রেনাল গ্ল্যান্ডের মেডুলা অংশে দুই ধরনের হরমোন তৈরি হয়। মেডুলার ‘ক্রোমাফিন কোষে’ এই হরমোন দ্বয় তৈরি হয়। এমাইনোএসিড ‘ফিনাইলএলানিন” হতে এই হরমোন দ¦য় (Epinephrine
or Adrenaline,Nor-epinephrine or Nor-adrenaline)
তৈরি হয়।
Epinephrine or Adrenaline এর কাজঃ
*** মানুষ হঠাৎ যত দুঃসাহসিক কাজ করে , এর পেছনে এই হরমোনের ভূমিকা বিরাট।
*** চোখের পিউপিল প্রসারিত হয়।
*** লিভারের সঞ্চিত ‘গ্লুকোজ’ (গ্লাইকোজেন) কে ভেঙ্গে সাধারন গ্লুকোজে পরিনত করে।
*** এটি র্হ্টা ও পেশি ধমনী ছাড়া অন্য সব ধমনী কে সংকোচিত করে।
*** এটি হার্ট এর গতি (Force)বৃদ্ধি করে।
*** ফুসফুসের শ্বাসনালীর পেশী গুলো কে ঢিলে করে ফলে শ্বাস গ্রহনে সুবিধা হয়।
*** হাঁপানিতে (ব্রঙ্কিয়াল) এটি ড্রাগ হিসাবে ব্যকহৃত হয়।
থাইমাস গ্রন্থিঃ
গলার নীচে বুকের মধ্যে অবস্থিত ‘গোলাপী’ বর্ণের একজোড়া গ্রন্থিকে থাইমাস গ্রন্থি বলে। এই গ্রন্থি ‘ইমিউন কোষ’ টি-সেল কে পরিপক্ক করে। টি-সেল দেহের ফরেইন ম্যাটার (এন্টিজেন) কে সনাক্ত করে এবং হত্যা করে। বার্ধক্যে ‘থাইমাস গ্রন্থি’ (৫গ্রাম) সংকীর্ণ হয়ে আসে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বয়সন্ধি (Puberty) কালে এটি সবচেয়ে বড় (৩৫গ্রাম) থাকে।
আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সঃ
অগ্ল্যাশয় এর বহিঃক্ষরা অংশের মধ্যে কিছু কোষ ্একত্রিত হয়ে
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের মত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি সৃষ্টি করে। এ সব গ্রন্থি কোষের সম্মিলিত আয়তন মোট অগ্ন্যাশয়ের ১%-২%। প্রতিটি দ্বীপ গ্রন্থির কোষ দানাদার ,বহূ ভূজাকৃতির ও রক্ত বাহিকা সম্মিলিত। দ্বীপগ্রন্থি বিভিন্ন কোষে গঠিত যেমন,আলফা,বিটা,ডেল্টা ও গামা কোষ। এই গ্রন্থি থেকে ইনসূলিন,গ্লুকাগন,গ্যাস্ট্রিন,সোমাটোস্ট্যটিন প্রভৃতি হরমোন নিঃসৃত হয়।
ইনস্যুলিনঃ
প্যাংক্রিয়াসের ‘বিটাসেল’ এটি উৎপাদন ও নিঃসরন করে। এটি একটি প্রোটিন যা ৫১ টি এমাইনোএসিডের একটি চেইন। প্যাংক্রিয়াসের ৭০% বিটাসেল দিয়ে তৈরি।
ইনস্যুলিন নিঃসরন বৃদ্ধি করেঃ
১/ রক্তে ‘গ্লুকোজ’ বৃদ্ধি পেলে ইনস্যুলিন নিঃসরন বৃদ্ধি পায়। গ্লুকোজ ‘বিটাসেল রিস্পেটরে ’ বন্ধন তৈরি করে এবং ইনস্যুলিন নিঃসরন ঘটায়।
২/ এমাইনোএসিড বিশেষ করে ‘আরজিনিন’ এবং ‘লাইসিন’
‘ইনস্যুলিন’ নিঃসরন কে শক্তিশালী করে।
৩/ অনেক গুলো অন্ত্রীয় হরমোন ইনস্যুলিন নিঃসরন বৃদ্ধি করে।
৪/ প্যাংক্রিয়াসের ‘অটোনমিক নার্ভাস সিসটেম’ ইনস্যুলিন নিঃসরন বৃদ্ধি ঘটায়।
ইনস্যুলিন এর কাজঃ
১/ ইনস্যুলিন দেহ কোষে ‘গ্লুকোজ’ প্রবেশে সাহায্য করে।
২/ ইনস্যুলিন লিভারে ‘গ্লুকোজ’ সঞ্চয়ে কাজ করে।
৩/ ইনস্যুলিন পেশিতে ‘গ্লুকোজ’ সঞ্চয়ে কাজ করে।
৪/ ইনস্যুলিন দেহে ‘চর্বি’ সঞ্চয়ে কাজ করে।
৫/ ইনস্যুলিন দেহে ‘চর্বি’ ভাংতে বাঁধা প্রদান করে।
৬/ ইনস্যুলিন, গ্লুকোজ থেকে ‘ট্রাইগ্লিসারইড’ সংশ্লেষনে কাজ করে। ট্রাইগ্লিসারাইড হচ্ছে কোষে চর্বির সঞিÍত রুপ।
৭/ ইনস্যুলিন, প্রোটিন সংশ্লেষনে কাজ করে, দেহে প্রোটিন ভাংগন রোধ করে।
৮/ ইনস্যুলিন বেশ কিছু এমাইনোএসিড’যেমন,ভ্যালিন,লিউসিন,আইসোলিউসিন,
টাইরোসিন এবং ফিনাইএলানিন এর কোষ মধ্যে পরিবহনে কাজ করে।
৯/ ম্যাসেনজার (সজঘঅ) আর এন এ এর উপর সরাসরি প্রভাব রয়েছে।
১০/ কোষের নতুন
mRNA গঠন এবং কোষ ্উৎপাদনে ইনস্যুলিন কাজ করে।
গ্লুকাগন :
প্যাংক্রিয়াসের ‘আলফাসেল’গ্লুকাগন উৎপন্ন ও নিঃসরন করে। গ্লুকাগন ২৯ টি এমাইনোএসিডের একটি চেইন। প্যাংক্রিয়াসের ২৫% ‘আলফাকোষ’ দিয়ে তৈরি।
গ্লুকাগন নিঃসরনঃ
১/ রক্তে গ্লুকোজ কম থাকলে গ্লুকাগন’এর নিঃসরন ঘটে এবং গ্লুকোজ তৈরির মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
২/ আরজিনিন ও এলানিন এই দুটি এমাইনোএসিড এর উপস্থিতি ‘গ্লুকাগন’নিঃসরন বাড়ায়।
৩/ ব্যায়াম ‘গ্লুকাগন’ নিঃসরন ঘটায়।
গ্লুকাগন এর কাজঃ
১/ নন-কার্বহাইড্রেট উপাদান হতে ‘গ্লুকোজ’ তৈরি বৃদ্ধি করে।
২/ গ্লুকাগন দেহের চর্বি ভাংতে শক্তিশালী ভুমিকা পালন করে। চর্বি ভাঙ্গার পর তৈরিকৃত ‘ফ্যাটি এসিড’ শক্তিতে রুপান্তরিত হয় অথবা কিটোন বডিস যেমন, এসিটোএসিটেট এবং বিটা-হাইড্রোক্সি-বিউটাইরেট এ দুটি শক্তিশালী এসিডে পরিনত হয়।
৩/ গ্লুকোজ তৈরির মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
সোমাটোস্ট্যাটিনঃ
প্যাংক্রিয়াসের ‘ডেলটা কোষ’ এই হরমোন উৎপাদন ও নিঃসরন ঘটায়। এটি ১৪ টি এমাইনোএসিডের একটি চেইন। প্যাংক্রিয়াসের ৫% এর কম এ কোষ দিয়ে তৈরি।
এর কাজঃ
১/ ইনস্যুলিন এবং গ্লুকাগন উভয় হরমোন এর উৎপাদন কে কমিয়ে দেয়।
২/ পাকস্থলী,ডিউডেনাম এবং পিত্তথলীর গতিকে কমিয়ে দেয়।
৩/ অন্ত্রীয় অংশের নিঃসরন ও শোষন ব্যবস্থাকে কমিয়ে দেয়।
পিনিয়াল গ্রন্থিঃ
পিনিয়াল গ্রন্থি একটি ক্ষুদ্র ডিম্বাকার গ্রন্থি। এটি মস্তিষ্কের তৃতীয় প্রকোষ্ঠের শীর্ষ দেশ থেকে উঠে কর্পাস কলোসামের পেছন দিকের প্রান্ত সীমার তল দেশে অবস্থান করে। পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে ‘মেলাটনিন’ হরমোন নিঃসৃত হয়। এসেনসিয়াল এমাইনোএসিড “ট্রিপটোফেন’
হতে এই হরমোন তৈরি হয়। সাধরন ভাবে মধ্য রাত থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত এ হরমোন সক্রিয় থাকে। তরুন বয়সে এবং বার্ধ্যক্যে এ হরমোন নিঃসরন কমে আসে। এ হরমোন ‘ঘুম’ নিয়ন্ত্রনে কাজ করে।
শুক্রাশয় এর অন্তঃক্ষরা কলাঃ
শুক্রাশয় দুটি অন্ডথলির মধ্যে অবস্থিত। শুক্রাশয়ের ‘সেমিনিফেরাস নালিকা গুলোর অন্তবর্তী অঞ্চলে লেডিগ এর ‘ইন্ট্যারষ্টিশিয়াল কোষ’গুলো অন্তক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে কাজ করে।
শুক্রাশয় হতে ‘টেষ্টোস্টেরন’ এবং সামান্য পরিমান ‘ইস্ট্রোজেন’ হরমোন নিঃসৃত হয়।
ডিম্বাশয়ের অন্তঃক্ষরা কলাঃ
স্ত্রীদেহে ডিম্বাশয় দুটি শ্রোণী গহ্বরের পশ্চাৎ প্রাচীরের দিকে জরায়ুর উভয় পাশে অবস্থিত। ডিম্বাশয়ের পরিনত ‘গ্রাফিয়ান ফলিকল,মেমব্রেনা গ্র্যানুলোসা, কর্পাস লুটিয়ামের কোষ গুলো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে কাজ করে।
ডিম্বাশয় হতে ‘ইষ্ট্রোজেন, প্রোজেসটেরন এবং রিলাক্সিন হরমোন ক্ষরিত হয়।
অন্যান্য স্থানিক হরমোনঃ
বিভিন্ন অঙ্গে অবস্থিত বিশেষায়িত কোষ গুলো থেকেও অনেক স্থানিক হরমোন নিঃসৃত হয়। এ হরমোন গুলো স্থানীয় ভাবে কাজ করে।
পাকস্থলী ও ডিওডেনাম এর অন্তপ্রাচীর ,বৃক্ক,ত্বক,লালা গ্রন্থি,ফুসফুস,হৃদপিন্ড প্রভৃতি অঙ্গে ‘হরমোন ক্ষরনকারী ’ বিশেষায়িত কোষ থাকে।
ক্যালসিটোনিনঃ
এই হরমোন দেহের ‘ক্যালসিয়াম’ বিপাকে কাজ করে। মানব দেহে প্রায় ১ কেজি ক্যালসিয়াম থাকে। এর ৯৯% রয়েছে হাড়ে। হাড়ে এটি ফসফেট এর সাথে ‘হাইড্রক্সিএপাটাইট ক্রিষ্টাল’ তৈরি করে। দেহের রক্ত রসে ক্যালসিয়াম এর পরিমান ৯.৪মিগ্রা/ডেসিলি। রক্ত রসে ক্যালসিয়াম তিনটি পর্যায়ে থাকে। ১) আয়নিত ক্যালসিয়াম ৫০% ২) প্রভেদ্য কিন্তু অ-আয়নিত ক্যালসিয়াম ৯%। ৩) প্রোটিন সংযুক্ত ক্যালসিয়াম ৪১%।
আয়নিত ক্যালসিয়ামঃ
এটি সহজে রক্ত জালিকা অতিক্রম করতে পারে। এটি ‘হৃদপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারন’, স্নায়ুর উত্তেজনা প্রবাহে এবং হাড় গঠনে কাজ করে।
অ-আয়নিত ক্যালসিয়ামঃ
এটি সহজে রক্ত জালিকা অতিক্রম করতে পারে এবং কোষ বর্হিভ’ত তরলে বিভিন্ন জৈব পদার্থের সাথে একত্রিত হয়ে নতুন জৈব পদার্থ উৎপন্ন করে। যেমন,ক্যালসিয়াম সাইট্রেট,ক্যালসিয়াম ফসফেট।
প্রোটিন সংযুক্ত ক্যালসিয়ামঃ
প্রোটিন সংযুক্ত ক্যালসিয়াম রক্ত জালিকা অতিক্রম করে না।
রক্ত রসে ক্যালসিয়াম ভারসাম্য রক্ষায় ফ্যাক্টর সমূহঃ
ক্যালসিয়াম শোষন বৃদ্ধির কারণ
ক) প্যারাথাইরয়েড হরমোন নিঃসরন বৃদ্ধি পেলে।
খ) ভিটামিন-ডি বেশি খেলে।
গ) গ্রোথ হরমোন বেশি নিঃসরন হলে।
ঘ) উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে।
ঙ) রক্তে ক্যালসিয়াম কম থাকলে।
চ) ফসফেট কম থাকলে।
ক্যালসিয়াম শোষন কম হওয়ার কারনঃ
ক) ক্ষারের উপস্থিতিতে যেমন, এন্টাসিড উপাদান।
খ) খাদ্যের ‘ফাইটিক এসিড’ ক্যালসিয়াম শোষনে বাঁধা দেয়।
গ) অশোষিত ফ্যাটি এসিড ক্যালসিয়াম শোষনে বাঁধা দেয়।
ঘ) অতিরিক্ত ফসফেট বা অক্সালেট যুক্ত খাবার ক্যালসিয়াম শোষনে বাঁধা দেয়।
continue------------------------------------------------------------------------------------
continue------------------------------------------------------------------------------------