বন্ধ্যাত্ব দূরীকরনে
স্টেম সেল নিউট্রিশন থেরাপি Dr.Shebendra
karmakar
Doctorate & Ph.D in Natural
Medicine,USA
বন্ধ্যাত্ব হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে সন্তান ধারনে অক্ষমতা। একজন নারীর বন্ধ্যাত্ব বলতে বুঝায় সে গর্ভ সঞ্চারে (কনসীভ) অক্ষম এবং পুরো সময় গর্ভ ধরে রাখতে অক্ষমতা বুঝায়।
এই বন্ধ্যাত্বের অনেক কারন রয়েছে। প্রতি বৎসর ৪% করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারন বেশি বয়সে বিয়ে। প্রায় ৪০% পুরুষ এবং ৪০% মহিলা বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী। ২০% বন্ধ্যাত্বের জন্য নারী পুরুষ উভয়ে দায়ী।
নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সাধারন কারন সমূহঃ
১/ ডিম্ব ও শুক্র কোষের ডিএনএ (জেনিটিক্যাল কোড) নষ্ট হওয়াঃ
ধুমপান ,বিকিরন, ক্যামোথ্যারাপী, ফ্রীরেডিকেল (মুক্ত আয়ন) এর আঘাতে ডিম¦ ও শুক্র কোষের ডিএনএ ধ্বংশ প্রাপ্ত হয়। এ ছাড়া সক্রিয় অক্সিজেন মৌল,জ্বর ও অন্ড কোষের অতি তাপমাত্রা ডিএনএ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২/
জেনেটিক ফ্যাক্টরঃ
কোষ বিভাজনের সময় ‘ক্রমোজম’ স্থানান্তর কম বা বেশী হলে স্থায়ী বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি হয় এবং অনবরত গর্ভপাত হয়।
৩/
সাধারন কারনঃ
ডায়াবেটিস মেলিটাস, থাইরয়েড অকার্যকারীতা, এড্রেনাল ডিজিজ এর কারনে ও বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়।
৪/
হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটরী কারনঃ
ক) হাইপো-প্রোল্যাকটেমিয়াঃ পিটুইটরী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ‘প্রোল্যাকটিন’ হরমোন কম নিঃসৃত হলেও বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়।
খ) হাইপো-পিটুইরিজমঃ পিটুইটরী গ্রন্থির কার্যকারীতা কম হলেও বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়।
৫/
পরিবেশ গত কারনঃ
বিভিন্ন শিল্প বর্জ, রাসায়নিক চূর্ন,পেষ্টিসাইড,হার্বিসাইড প্রভৃতি বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির জন্য দায়ী। ৬০% ধুমপানপায়ীর বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কিছু ভাইরাস যেমন এডেনো ভাইরাস পুরুষ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী। কিছু ব্যাকটেরিয়া যেমন চøামাইডিয়া ও গনোরিয়া এর আক্রমনে ও বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়।
নিন্ম উল্লেখিত কারন গুলো মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে দায়ীঃ
১/ ডিম্বানুর অনুপস্থিতিতে যৌন সংযোগ ঘটলে গর্ভ সঞ্চার হয় না। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় ডিম্বানুর উপস্থিতি নিশ্চিত থাকলে গর্ভ সঞ্চারের সম্ভবনা বেড়ে যায়। ঋতু শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ গর্ভ সঞ্চারের উপযুক্ত সময়। ডিম¦ানুটির সর্বচ্চো কার্যকারীতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন “হরমোন’ যেমন ফলিকল স্টিমুলিটিং হরমোন(FSH), লিউটাইনাইজিং হরমোন (LH) এর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
২/ ফলোপিয়ান টিউব বা জরায়ুর কাঠামো গত পরিবর্তন যেমন,এন্ডোমেটরিওসিস (ঊহফড়সবঃৎরড়ংরং)। এটি হরমোনাল ও ইমিঊন সিসটেম এর রোগ।
জরায়ু গহ্বর ‘এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ’দ্বারা তৈরি যা হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয়। জরায়ু গহ্বরের এন্ডোমেট্রিয়াল কোষের গঠন গত পরিবর্তন কে ‘এন্ডোমেট্রিওসিস’ বলে। মূলতঃ হরমোনের অস্বাভাবিক আচরনের কারনে এ রকম ঘটে। ‘এন্ডোমেট্রিওসিস’ এর কারনে ‘ফলোপিয়ান টিউবে’ ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ব্যাকটেরিয়া (চøামাইডিয়া) ,স্কার টিস্যু এর কারনে ও জরায়ু ও ফলোপিয়ান টিউবে ‘এন্ডোমেট্রিওসিস’ ঘটতে পারে। এ কারনে বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। এটি যুবতী বয়সে এবং ঋতু বন্ধ হওয়ার পর বার্ধক্য বয়সে ঘটতে পারে।
ইনফাটিলিটির বা বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারন ‘ডিম্ব ক্ষরনে অসমর্থতা। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর
কারনে ডিম্ব আংশিক পরিপক্ক এবং পুরষ হরমোন (TESTOESTERON) এর আধ্যিকের কারনে ডিম্ব ক্ষরনে ব্যার্থ হয়।
এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় FSH (Folical stimulating Hormone) ইনজেকশন বা ক্লোমিড (Clomid ; Clomiphene citrate) টেবলেট দিয়ে ফলিকল উত্তেজিত করা হয় যাতে ডিম্ব নিঃসরন ঘটতে পারে।
অতি ওজন ও স্বল্প ওজন দুটিই বন্ধ্যাত্বের কারন হতে পারে। ৩৫ বৎসরের বেশী বয়সের মেয়েদের ডিম্ব নিঃসরন ক্ষমতা কমে আসে।
এক পলকে মেয়েদের ‘বন্ধ্যাত্বের’ সাধারন কারনঃ
১/ ডিম্ব নিষিকত্ব করন সমস্যা :PCOSএর প্রধান কারনঃ
২/ ফলোপিয়ান প্রতিবন্ধকতা (Follopian tube blokage)।
৩/PID
(Pelvic inflammatory disease): জরায়ু ,ফলোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয়ের সংক্রমন।
৪/ বয়স জনিত কারন (AGE
related factor)|
৫/ জরায়ু গহ্বরের সমস্যা। (Endrometriosis)।
৬/ টিউবিউল লাইগেশন।
পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারন সমূহঃ
প্রধান কারন নিন্ম মানের “শুক্রানু” ক্ষরন। অন্যান্য কারনের মধ্যে কম সংখ্যক শূক্রানু ক্ষরন। এই সব কিছুর কারন হচ্ছে ;
ক) নির্ণালী গ্রন্থির (ঊফড়পৎরহব এষধহফ) সমস্যা।
খ) ড্রাগ, রেডিয়েশন ও সংক্রমন সমস্যা।
গ) শুক্রানুর গঠন পরিবর্তন ও শুক্রাশয় নালীর প্রতিবন্ধকতা
ঘ) Primary
cillieary diskynsia (PCD) রোগ হলে “স্পার্ম” সাঁতার কাটতে পারে না। ফলে বন্ধ্যাত্বের কারন হতে পারে।
মানসম্মত সিমেনঃ
প্রতি মিলি লিটারে নিঃসরিত সিমেন এ “শুক্রানুর’ পরিমান ৩০০ হতে ৪০০ মিলিয়ন শুক্র (Spermatozoa)। শ্বেত কনিকার পরিমান, ফ্রকটোজ এর পরিমান, pH , তারল্য সময় সব মিলেই ‘ মানসম্মত’ সিমেন (Semen)।
ক্রোমাটিন হচ্ছে ‘ক্রোমজমের’ অংশ। যা ডিএনএ (DNA) ও প্রোটিন গঠন করে। যদি শুক্রানুর ‘ক্রোমাটিন’ নষ্ট থাকে তবে গর্ভ সঞ্চারের পর গর্ভপাত ঘটে (Miscarrage) ।
মানসম্মত স্পার্ম না তৈরির কারন সমূহঃ
১/ বয়স জনিত কারনঃবয়স জনিত কারনে শুক্র কোষের নিষিক্ত করন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
২/ শুক্রাশয়ের আঘাত জনিত কারন ।
৩/ ড্রাগ,রাসায়নিক বিষ , প্রভৃতি দেহে প্রবেশের কারন।
৪/ মেইল কন্ট্রাসেপটিভস যেমন , ডিপো-প্রোভেরা (Depo-provera) ,এডজুডিন (Adjudin) ,গসিপল (Gossipol) প্রভৃতি ¯œায়ুর গতিকে কমিয়ে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে।
5/
শুক্রানু কমিয়ে দেয়।
৬/ সাইকো একটিভ যেমন, প্রশান্তিকরন ড্রাগ।
৭/ Opioid ব্যাথা প্রশমক ড্রাগ।
৮/ ক্যলসিয়মি চ্যানেল ব্লকার (CCB)ঃ উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ড্রাগ।
৯/ ফসফো-ডাইএসটারেজ (Phosphodiesterase inhibitor) ইনহিবিটর যেমন,ক্যাফেইন (Caffine),থিয়োফাইলিন (Theophyiline)।
১০/ স্ট্যাটিন্স (Statins): চর্বি প্রতিবন্ধক ড্রাগ।
১১/ ক্যালসিয়াম সেলেটর (Calcium cheletor)।যেমন,ইথাইলিন ডায়ামিন টেট্রা এসিটিক এসিড (EDTA)।
১২/ হরমোন চিকিৎসা স্পার্ম মান কমিয়ে দেয়।
খাদ্য
(Diet):
১/ প্রতিদিন ১ লিটার কোলা পান ৩০% স্পার্মমান কমিয়ে দেয়। তবে সরাসরি কোন কারন জানা যায়নি।
২/ ফোলেট (ভিটামিন ৯) স্পার্ম এর ক্রমোজম স্থানান্তরে কাজ করে। কোষ বিভাজনের সময় ক্রমোজম কম বা বেশী স্থানান্তর হলে জেনেটিক ত্রুটি হয় এবং শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম গ্রহন করে।
৩/ গসিপল (Gossiple) যুক্ত খাদ্য স্পার্ম কমিয়ে দেয়। কটন সীড ওয়েল (Cotton seed oil) এটি থাকে। যে সমস্ত পুশু এই খাদ্য ব্যবহার করে তাদের অঙ্গের মাংশে এটি থাকে। চীনে ম্ইেল কন্ট্রসেপটিভ হিসাবে ‘গসিপল’ ব্যবহার হয়।
অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থঃ
১/ প্লুটুনিয়াম (Plutonium) :
এটি পারমানবিক ক্ষেপনা¯্র পরীক্ষার ফলে ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুক্রাশয়ে জমা হয় এবং জিংক বিপাক বাধুগ্রস্ত করে ফলে জেনেটিক ক্ষতি সাধন হয়।
২/ ইথাইলিন অক্সাইড (Ethyline oxide):
ক্যামিকেল পন্যের প্রধান উপাদান ‘ই্থাইলিন অক্সাইড’। অধিকাংশ ্ইথাইলিন অক্সাইড ব্যবহৃত হয় ‘ইথাইলিন গ্লাইকল’ উৎপাদনে। ইথাইলিন গ্লাইকল ;এন্টিফ্রিজ,পলিস্টার এবং পলিইথাইলিন টেরেফথালেট(PET ) প্লাষ্টিক বোতল তৈরির কাঁচা মাল) উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
পলিইথাইলিন গ্লাইকল সুগন্ধি (Perfume) প্রসাধনী (Cosmetic) ,ফার্মাসিউটিক্যালস, লুব্রিক্যান্ট ,পেইন্ট থিনার (Paint thinner) উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এটি সোপ ও ডিটারজেন্ট তৈরিতে ব্যকহৃত হয়। ইথাইলিন গ্লাইকল একটি প্রমানিত ‘ক্যানসার’ সৃষ্টিকারী উপাদান। এটি সিমেন মান কে ন্ষ্ট করে।
ক্যডমিয়াম
(Cadmium):
এটি সারটোয়েল কোষ (Sertoil Cell) শুক্রানু উৎপানকারী কোষ) কে ধ্বংশ করে। ফলে শুক্রানু উৎপাদন ব্যহত হয়। ধুমপান হচ্ছে ‘ক্যাডমিয়াম’প্রবেশের একক উৎস। একটি সিগারেটের মাধ্যমে ১০% ক্যাডমিয়াম দেহে প্রবেশ করে। ফুসফসের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী ক্যাডমিয়াম শোষিত হয়। একজন ধুমপায়ীর ৪-৫গুন বেশী ক্যাডমিয়াম রক্তে থাকে।
ডায়াটারী খাদ্য হিসাবে কাকড়া,চিংড়ি,শামুক,ঝিনুক এক কথায় খোলস যুক্ত খাবারে ক্যাডমিয়াম থাকে। দেহে ক্যাডমিয়াম এর প্রবেশ ধমনী পথে প্লাক তৈরি করে হৃদরোগ সৃষ্টি করে।
সীসা (Lead):
শুক্র উৎপাদন ব্যহত করে এবং অনিয়মিত শুক্রানু সৃষ্টি হয়। লিড অত্যান্ত বিষাকÍ পদার্থ ।
এলোপ্যাথিক মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসাঃ
মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা
*** ডিম্ব ক্ষরন সমস্যার চিকিৎসা
= ড্রাগ ক্লোমিফেন (Clomiphen):এটি ডিম্বাশয়কে উত্তেজিত করে এবং ডিম্ব মুক্ত করে।
= ড্রাগ মেটফরমিন (Metformin): ডিম্বাশয়ের পলিসিসটিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
***কারন বিহীন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা
= ক্লোমিফেন
= হরমোন ইনজেকশন (FSH)
= ইনসেমিনেশন: শুক্রানু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গর্ভ সঞ্চার করা হয়।
***ফলোপিয়ান নালীর প্রতিবন্ধকতা
= ফলোপিয়ান নালীর প্রতি বন্ধকতা অপারেশন এর মাধ্যমে সাড়ানো হয়।
***এন্ড্রোমেট্রিয়োসিস
বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারন মনে করা হয়। সার্জারী একমাত্র চিকিৎসা।
***ইন ভিট্রো র্ফাটিলাইজেশন (IVF)
একটি নিষিক্ত ডিম্ব সারভিক্স এর মাধ্যমে সরাসরি জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
***ইন্ট্রা সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন
গবেষনাগারে একটি স্পার্ম কে একটি ডিম্বানুতে ইনজেক্ট করা হয়। যদি নিষিক্তকরন ঘটে তবে ভ্রুনটি মাতৃ জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারন সমূহঃ
১/ পুরুষের ফার্টিলিটির জন্য ‘হাইপো-থ্যালামাস, পিটুইটরী গ্ল্যান্ড’ (মস্তিষ্কে অবস্থিত হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থি) এবং শুক্রাশয়ের (অন্ডকোষ) মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক প্রয়োজন।
= ৩০-৪০ শতাংশ সমস্যা হচ্ছে শুক্রাশয়ে।
= ১০-২০ শতাংশ সমস্যা হচ্ছে শুক্রাশয় নির্গমন পথে।
= ১-২ শতাংশ হচ্ছে ‘হাইপো-থ্যালামাস,পিটুইটরী গ্ল্যান্ড’ এর।
= ৪০-৫০ শতাংশ কারন অজানা।
পুরুষ বন্ধ্যাত্বের এলোপ্যাথিক ব্যবস্থাপনাঃ
১/ রিপ্রোডাক্টটিভ ট্র্যাক এর প্রতিবন্ধকতা
শুক্রাশয় হতে শুক্র পরিবাহী নালীর প্রতিবন্ধকতার কারনে শুক্রানুর নিঃসরন ঘটে না। অপারেশন এর মাধ্যমে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করার চেষ্ট করা হয়।
২/ হাইপো-থ্যালামাস ও পিটুইটরীর ব্যবস্থাপনা
১-২ শতাংশ পুরুষ হাইপো-থ্যালামাস ও পিটুইটরী গ্ল্যান্ড এর সমস্যয় আক্রান্ত হয়। এই ক্ষেত্রে ‘গোনাডো ট্রপিন’ ব্যবস্থাপনা দেয়া হয়। হিউমেন কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন (hCG) এবং রিকমবাইনেন্ট হিউমেন ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন (rhFSH) কে ‘গোনাডোট্রপিন’ চিকিৎসা বলা হয়।
৩/ ভেরিকোসেল (Vericocele):
স্ক্রোটাম বা অন্ডথলী এর শিরা যা অস্বাভাবিক প্রসস্ত হয়। ভেরিকোসেল আক্রান্ত পুরুষ কম যা অস্বাভাবিক আকারের শুক্রানু তৈরি হয়। কোন ব্যবস্থপনা নেই।
বন্ধ্যাত্বের প্রাকৃতিক প্রতিকার সমূহঃ
১/ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের নিয়ন্ত্রনঃ
পরিবেশের রাসায়নিক
পদার্থ (ওহফঁংঃৎরধষ পযধসরপধষ) পরিহার করতে হবে। ভারী ধাতব সীসা,পারদ,ক্যাডমিয়াম,পেষ্টিসাইড যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। রাসায়নিক সুগন্ধি,প্রসাধনী ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কিছু ফার্মাসিউটিক্যল ড্রাগ যা বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে সেগুলো পরিহার করতে হবে।
২/ অপরিশোধিত ট্যাপ এর পানি :
পানি সরবরাহ পথ গুলো শিল্পবর্জ,ফার্মসিউটিক্যালস ড্রাগস,হার্বিসাউড,পেষ্টিসাইড দ্বারা আক্রান্ত। ফলে অনবরত এই পানি পান করার কারনে বন্ধ্যাত্ব হওয়ার কারন রয়েছে।
৩/ সর্বচ্চো পুষ্টি খাদ্য গ্রহনঃ
প্রথম ৪ মাসে ভ্রুন ২০ মিলিয়ন গুন বৃদ্ধি পায়। প্রথম ৮ মাসে ভ্রƒনের অর্গানস হাত,পা,মাথা, চোখ,নাক,কান গঠিত হয়। শিশুর অঙ্গ গঠনের এই পর্যায়ে অপরিহার্য পুষ্টি (এমাইনোএসিড,ফ্যাটিএসিড,গ্লুকোজ,ভিটামিনস,মিনারেলস ও পানি) নিশ্চিত করতে হবে। প্রধান পুষ্টি মান সম্পন্ন প্রোটিন (এমাইনোএসিডের শিকল) যা উদ্ভিদ উৎস হলে সবচেয়ে ভাল হয়।
কি খাওয়া উচিত?
ক) অর্গানিক মাংশ স্বল্প পরিমান,গভীর সামুদ্রিক মাছ,অর্গানিক ডাল খেতে হবে।
খ) সম্পূর্ন শস্য,বাদাম,সবজি এবং ফল যথা সম্ভব অর্গানিক হতে হবে।
গ) ভাল চর্বি অর্থাৎ অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন অলিভ ওয়েল,বাদাম তেল,নারিকেল তেল।
ঘ) রান্নার জন্য ঘী বা কোকোনাট বাটার ব্যবহার করা।
ঙ) নন-হিটেড তৈল (অলিভ ওয়েল,তিসির তৈল,বাদাম তৈল) সালাডের সাথে ব্যবহার করা।
৪/
মারাত্মক চর্বি বর্জনঃ
ট্রান্স ফ্যাট যেমন যুক্ত খাবার যেমন,ডগহাটস,বিস্কুট,ক্যান্ডি,চকলেট,চিপস,ফ্রাইস এ ধরনের হাজার হাজার খাবার বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায় ৭০% শতাংশের ও বেশী।
হার্ভাট ইফনিভারসিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর বিজ্ঞানীগন উপদেশ দিয়েছেন যে,যারা গর্ভধারন করতে চান তাদের কে উপরিউক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।
৫/
প্রানি উৎস হতে এসট্রোজেন নিয়ন্ত্রনঃ
অতিরিক্ত ডেয়রী দূধ ব্যবহার কিছু বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত এসট্রোজেন এবং পেষ্টিসাইড গ্রহন পলিসিসটিক ওভারি ও এন্ডোমেট্রিওাসস রোগ তৈরি করে। ডেয়রী পন্য উচ্চ মাত্রায় এসট্রোজেন,পেষ্টিসাইড এবং হার্বিসাইড ধারন করে যা ‘এন্ডোক্রাইন’ গ্ল্যান্ডের হরমোন উৎপাদন ব্যহত করে।
গবেষনায় দেখা গেছে যে স্ত্রী লোকটি ‘মাল্টিপল এর্লাজী’ এবং ‘ফুড ইনটলারেন্স’ রয়েছে তার গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা বেশী। এই দুটি প্রধান খাদ্য “গ্লুটেন” এবং “ডেয়রী” খাবার। গর্ভসঞ্চার ও প্রসবকালীন সময়ে এটি বর্জন করা উচিত। গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে গম জাত খাবার,বার্লি ইত্যাদী।
6/ যৌন সংক্রমন হতে বিরত থাকাঃ
সেক্সউয়াল
ট্র্যন্সমিটেড
ডিজিজ (STD) সাধারন ভাবে ভেজাইনাল সেক্স (Veginal sex),এনাল সেক্স(Anal sex),ওরাল সেক্স (Oral sex) মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
প্রায় ৩০ ধরনের ব্যকটেরিয়া,ভাইরাস,ফাংগাস, Sexual
transmitted disease এর জন্য দায়ী।
ব্যকটেরিয়া দ্বারা সংগঠিত রোগ হচ্ছে চøামাইডিয়া(Chlamydia),গনোরিয়া( Gonorrhea),সিফিলিস (Syphilis)।
ভাইরাস দ্বারা সংগঠিত রোগ হচ্ছে জেনিটাল হারপেস Genital
herpes),HIV/AIDS, Genital Warts|
জেনিটাল হারপেস রোগটি Herpes simplex virus (HSV) সংগঠিত রোগ যা ভেজাইনা ও লিঙ্গের চর্তুদিকে রসপূর্ন
থলির সৃষ্টি হয়। এটি যৌন মিলনের ফলে দেহ থেকে দেহে সংক্রমিত হয়। এ সংক্রমনের কারনে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হতে পারে।
জেনিটাল ওয়ার্ট Genital
wart) রোগটি Human papilloma virus (HPV) দ্বারা সংক্রমিত হয়। ছোট অমসৃন শক্ত গোটার মত দেখতে চর্মের সর্বত্র দেখা যায়। এটির কারনে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হতে পারে।
৮/
গভর্ ধারনের জন্য ১২০দিন পুর্বের প্রস্তুতিঃ
একটি ডিম্ব কোষ ও শুক্র কোষ পরিপক্কতার জন্য ১২০ দিন সময় প্রয়োজন হয়।এ সময়ের মধ্যে এর পরিপক্কতার জন্য যা ক্ষতিকর তা বর্জন যা হিতকর তা গ্রহন করতে হবে। এই ডিম্ব ও শুক্র এর মিলনের ফলেই ‘ভ্রুন’ এর সৃষ্টি হবে। এই ভ্রুনই পর্যায়ক্রমে মানব শিশুতে পরিনত হবে।সুতরাং ডিম্ব ও শুক্র কোষের সঠিক পুষ্টি ও পরিচর্যা একটি নিরোগ সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করে।
৯/
কফি,ধুমপান ও এলকোহল পরিহার করুনঃ
কফি বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির জন্য দায়ী। প্রতিদিন ১ কাপ কপি ৫৫ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে।২-৩ কাপ কপি ১০০ ভাগ বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে। এলকোহল ও ধুমপান একই ভাবে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে।
১০/
অর্গানিক খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহন করতে হবে সাধারনের চেয়ে বেশী। কারন শিশুর পরিবৃদ্ধির জন্য এটি প্রয়োজন হয়। প্রধান পুষ্টিগুলোহলোজিংক,সেলেনিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম,বি১২,বি৬,ফলিক এসিড,ভিটামিন সি, এমাইনো ্এসিড, গ্লুকোজ।
স্টেম সেল নিউট্রিশান থেরাপী
স্টেম সেল কি?
স্টেম সেল হচ্ছে দেহের বিশেষ ধরনের কোষ যা মেরু মজ্জা (Bone Marrow) সহ দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে সুপ্ত অবস্থায় ভ্রুনের জন্ম থেকে অবস্থান নেয়। এ কোষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এটি দেহের যে কোন অঙ্গের কোষে পরিনত হতে পারে। যেমন একটি স্টেম সেল চর্মে পৌঁছে চর্ম গঠন করে আবার হৃদপিন্ডে গিয়ে হৃদপেশি
তৈরি করে।এটা অনেকটা ইটের মত । যেমন একটি ইট ইমারতের দরজা,জানালা,মেঝ,সহ সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। স্টেম সেল হচ্ছে দেহের ইট। দেহের সর্বত্র পরিগঠনে এটি ব্যবহৃত হয়।
স্টেম সেল দু’ধরনের হয়।
১) এমব্রায়োনিক স্টেম সেল:
এটি ভ্রনের ভিতরের দিকের
কোষ স্তর। যেটি থেকে মূলত: ভ্রনের ভিতর ও বাহিরের অঙ্গগুলোর আকৃতি লাভ করে। মানুষের এমব্রায়োনিক কোষের আয়তন .৬ মাইক্রোন (১মাইক্রোন ১মিটারের ১০লক্ষ ভাগের ১ভাগ)। এমব্রায়োনিক স্টেম সেল কে বলা হয় প্লুরিপটেন্ট (plurip otent) স্টেম সেল। এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ “অনেক ক্ষমতাপন্ন”। এই ধরনের কোষ হতে “কোষের প্রাথমিক তিন স্তর”Three
Germ Layer তৈরি হয়।
ক) এন্ডোডার্ম (Endodrm)): কোষের এই স্তর হতে পাকস্থলীর ভিতরের আবরনী স্তর, পরিপাক , অন্ত্রনালী ও ফুসফুস তৈরি হায়।
খ) মেসোডার্ম (Mesoderm):পেশি ,হাড়, রক্ত ও জননতন্ত্র তৈরি হয়।
গ) এক্টোডার্ম (Ectoderm): চর্মের বহিঃস্তর এবং স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয়।
প্লুরিপটেন্ট কোষ থেকে ২২০ ধরনের দেহ কোষ তৈরি হয়। প্øুরিপটেন্ট কোষের এই ক্ষমতার জন্য এটি এখন “বিভিন্ন জটিল রোগ ” নিরাময়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পদ্ধতির এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসাকে বলা হয় “স্টেম সেল থেরাপী”।
স্টেম সেল থেরাপী হচ্ছে জটিল রোগ নিরাময়ের একটি আধুনিক চিকিৎসা। চিকিৎসা বিজ্ঞান দাবী করছে যে, স্টেম সেল পুনরজাগরন (Regeneration)এবং Culture এর মাধ্যমে দেহের যে কোন অঙ্গের পুনরগঠন, পুনরস্থাপন এবং মেরামত করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়া এখনো পরীক্ষাধীন। তবে কিছু কিছু জটিল রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কম সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। এবং এই পদ্ধতির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয় বহুল ও ঝুঁকিপূর্ন। অপর পক্ষে স্টেম সেল নিউট্রিশান থেরাপী সম্পূর্ন নিরাপদ। এ বিষয়ে আলাদা ভাবে আলোচন করা হবে
২)
এডাল্ট স্টেম সেল (Adult
Stem Cell):
এ ধরনের স্টেম সেল দেহের সর্বত্র পাওয়া যায়। এবং কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় এরা বৃদ্ধি পায়। এরা মৃত কোষের স্থান পূরন করে, ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে নতনু কোষ তৈরিতে সাড়া জাগায়। এডাল্ট স্টেম সেল এর অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত বিভাজন বা নিজস্ব নবায়ন ক্ষমতা রয়েছে। এরা সকল ধরনের দেহ কোষ কে নতুন কোষ তৈরিতে সাড়া জাগায়।
প্রত্যেক স্টেম সেল সাধারন দু’টি বৈশিষ্ট্য ধারন করে।
১) কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় অনবরত নিজস্ব নবায়ন করতে সক্ষম।
২) সব ধরনের দেহ কোষের ,ক্ষতিগ্রস্ত কোষের নবায়ন এবং মৃত কোষের স্থান পূরন এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
বিভিন্ন ধরনের “স্টেম সেল” এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল:
এটি মেরুমজ্জায় থাকে এবং সব ধরনের রক্ত কোষ এ কোষ থেকেই তৈরি হয়।
ম্যামারী স্টেম সেল:
এটি ম্যামারী গ্ল্যান্ড (দুগ্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি ) এর বৃদ্ধি ঘটায়। বিশেষ করে বয়সন্ধি ও প্রসূতী অবস্থায়।
ইনটেসটাইনাল স্টেম সেল:
এটি সাড়া জীবন ব্যাপী অনরবরত বিভাজিত হয়। একটি
জটিল “জেনেটিক প্রোগ্রাম” ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্তের আবরনী কোষ স্তর উৎপন্ন করে।
এন্ডোথেলিয়াম স্টেম সেল:
এই ধরনের কোষ বোন ম্যারোতে পাওয়া যায়। রক্ত নালীর ভিতরের স্তর এই কোষ দিয়ে তৈরি হয়।
নিউরাল স্টেম সেল:
মস্তিস্কের বিশেষ দু’টি স্থান ব্যতিত অন্যান্য স্থানে নতুন নিউরাল সেল উৎপন্ন হয়। একটি ‘সাবভেন্টিকুলার জোন’ অপরটি ‘ডেনটেন্ট জাইরাস’।
মেসেনসাইমাল স্টেম সেলঃ
এই স্টেম সেল মেরুমজ্জার স্ট্রোমাল সেল থেকে উদ্ভুত হয়। এই কোষ অমরা (প্লাসেন্টা) চর্বি কোষ (এডিপোসাইট) ,ফুসফুস,মেরুমজ্জা (বোনম্যারো) এবং রক্ত কনিকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ডেন্টাল পাল্প,পেরিডেন্টাল লিগামেন্ট,আমবিলিক্যাল কর্ড এর কোষ হচ্ছে “মেসেন সাইমাল স্টেম সেল”।
অলফ্যাক্টরী স্টেম সেলঃ
নাকের ভিতরের স্তরের কোষ স্তর “অলফ্যাক্টরী স্টেম সেল”দিয়ে তৈরি।এই কোষ গন্ধ নেয়ার কাজ করে।
টেষ্টিকিউলার স্টেম সেলঃ
এই স্টেম সেল হতে “পুঃজনন কোষ ” তৈরি হয়।
নিউরাল ক্রেষ্ট স্টেম সেলঃ
চুলের ফলিকল দুই ধরনের স্টেম সেল ধারন করে। এই সেল নিউরন,স্কিন সেল, মাইওফাইব্রোব্লাস্ট,কনড্রোসাইট এবং ম্যালানোসাইট কোষের জেনারেইট করে।
স্টেম সেল এর জীবন প্রক্রিয়া ও ‘জেনিটিক্যাল ডিজিজ’:
প্রত্যেক ‘স্টেম সেল’ মাইটোসিস (দেহ কোষ বিভাজন) প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয় এবং নতুন পুর্নাঙ্গ কোষ সৃষ্টি করে। স্টেম সেল এর এই বিভাজন ক্ষমতা অনির্দিষ্ট কাল ধরে চলে। ফলে মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্বÍ দেহের পুনরগঠন প্রক্রিয়া অব্যহত থাকে। ত্রুটিপূর্ন বিভাজনের ফলে কোষ
দেহে যে রোগের সৃষ্টি হয়, এটিকেই ‘জেনিটিক্যাল ডিজিজ’ বলে। অথবা অন্য কারনে , রেডিয়েশান, স্টেরেয়েড ড্রাগ, ক্যামোথ্যারাপী, টক্সিন, ডায়াগনোসষ্টিক এজেন্ট) কোষ দেহের ‘জেনিটিক্যাল কোড (DNA)’ এর কোন পরিবর্তন
হলেও ‘জেনিটিক্যাল ডিজিজ’ হতে পারে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান স্টেম সেল থেরাপী এর মাধ্যমে এই রোগের সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছে। বাস্তবিক পক্ষে
আধুনিক চিকিৎসায় এর
সমাধান সম্ভব নয়।
continue----------------------------------------------------------------------------------------