দেহ কোষ কি ভাবে কাজ করে?
দেহ কোষের জীবন রসায়ন খুব জটিল। এবং কিভাবে লক্ষ লক্ষ জীবন রসায়ন কাজ সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে সম্পন্ন করে তা কোন দিনই উদঘাটন সম্ভব নয়। তবে পরমানুর প্রাকৃতিক আচরন থেকে এটুকু জানা সম্ভব হয়েছে যে, বিশ্ব ব্রম্মন্ডের দৃশ্য অদৃশ্য যা কিছু সৃষ্টি ও রহস্য এর পেছনে রয়েছে পরমানু সমূহের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ধরনের বিন্যাস। এ বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সব কিছ’ ১২ থেকে ১৫টি পরমানু দিয়ে কৈরি।
পরমানু সমূহের পারস্পরিক আকর্ষনে বিশ্ব ব্রম্মান্ডের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্ঠি হচ্ছে কোষ। পৃথিবীর প্রানী ও উদ্ভিদ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে এ কোষ থেকে। পরমানু সমূহের পারস্পরিক ক্রিয়ায় প্রতিনিয়তই নতুন নতুন বস্তুর সৃষ্টি হয়। বস্তুটি দৃশ্যমান ও স্থায়ী রূপ পায় যখন পরমানুরা পরস্পরের মধ্যে বোঝা পড়ার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা লাভ করে। যেমন অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন দুটিই গ্যাসিয় পরমানু এবং দুটিই আলাদা আলাদা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠের অধিকারি। এ দুটি পরমানু একত্রিত হয়ে নতুন বস্তু পানি তৈরি করে। বিশ্বব্রম্মান্ডের সব কিচু এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে।
পরমানু সমূহের পারস্পরিক আকর্ষনে কোন সময়ে একটি কোষের সৃষ্টি হয় যা একটি বস্তু যার প্রান আছে। অর্থাৎ কোষ মধ্যস্থ পরমানু সমূহের অস্থিরতা স্থায়ী রুপ লাভ করে যা কোষের একটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ। কোষ মধ্যস্থ পরমানু সমূহের বিন্যাস চলতেই থাকে এবং নানা ধরনের প্রানি ও উদ্ভিদের বিকাশ ঘটতে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি চলমান এবং চলবে যতদিন না পরমানুর অস্তিত্ব ধ্বংশ হবে। তবে জেনে রাখা ভাল একটি পরমানু ধ্বংশ হলে মূহূর্তের মধ্যে বিশ্ববিশ্বব্রম্মান্ড একত্রিত হয়ে একটি পিন্ডে পরিনত হবে।
একটি আলো বা নূর থেকেই যে বিশ্বব্রম্মান্ডে এর সৃষ্টি তা পরমানুর পৃাকৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকেই প্রমানিত। প্রতিটি পরমানুর একটি নির্দিষ্ট চার্জ আছে। অর্থাৎ পরমানুরা প্রকৃতিগত ভাবে পজেটিভ, নেগেটিভ ও নিউট্রাল হয়ে থাকে। পজেটিভ, নেগেটিভ পরমানু একত্রিত হয়ে যখন অনুতে পরিনত হয় তখন সে অনুটিও পজেটিভ বা নেগেটিভ চার্জ যুক্ত হয় এবং অনুরা একত্রিত হয়ে যখন বড় বড় বস্তুতে পরিনত হয় এবং তখন ঐ বস্তুটিও পজেটিভ ব নেগেটিভ চার্জ যুক্ত হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ এর প্রাকৃতিক ধর্ম হলো এরা পরস্পরকে আকর্ষন করে। আর এ ধর্মের জন্যই বিশ্বব্রম্মান্ডের কোন বস্তই একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। মানব দেহের ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ এ প্রক্রিয়ায় পরস্পরের আর্কষনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
প্রতিটি পরমানু ও অনু পরস্পরের মধ্যে চার্জ বিনিময় করে সব সময় গতিশীল থাকে। যখন একটি অনু ও পরমানু যখন নেগেটিভ চার্জ যুক্ত হয় তখনেই পজেটিভ চার্জ যুক্ত অনু ও পরমানু থেকে পজেটিভ চার্জ গ্রহন করে নিজে পজেটিভ চার্জ যুক্ত হয় এবং পজেটিভ চার্জ যুক্ত অনু বা পরমানুটি নেগেটিভ চার্জে পরিনত হয়। এভাবে প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে এবং নতুন নতুন বস্তুর সৃষ্টি হয়। মানব কোষ এ প্রক্রিয়ায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার প্রোটিন , ৬৫ হাজার এনজাইম,৬৫ ধরনের হরমোন এবং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন এন্টিবডি তৈরি করে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এ চাজের্র আধিক্য বা কমতি হলেই কোষীয় ভার সাম্য ন্ষ্ট হয় এবং দেহ রোগাক্রান্ত হয়।
পুরো ব্রম্মান্ড চার্জ আদান প্রদানের মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। এ চার্জের উৎস কি? এ চার্জের উৎস পরমানুর ঘূর্নন। প্রতিটি পরমানু ইলেকট্রন ও প্রোটন নামে দুটি মূল কনিকা দিয়ে তৈরি। পজেটিভ চার্জযুক্ত প্রোটন কে কেন্দ্র করে নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন ডান থেকে বাঁ দিকে প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে থাকে। এ ঘুর্ননের সময় পরমানুর কিছু ইলেকট্রন আলোর গতিতে ছিটকে পড়ে। নিকাটবর্তী পরমানু ইলেকট্রন গ্রহন করে নেগেটিভ চার্জযুক্ত হয় এবং পরমানুটি চার্জ ত্যাগ করে পুনরায় পজেটিভ চার্জযুক্ত হয়। এভাবে ইলেকট্রন গ্রহন ও ত্যাগের মাধ্যমে পরমানুতে প্রচন্ড চলমান শক্তির উদ্ভব হয়। আর এ শক্তিই হচ্ছে চার্জ যা ব্রম্মান্ডের সকল শক্তির উৎস। বিজ্ঞানীরা এ চার্জের একটি পরিমান নির্ধারন করেছেন ;
১.৬০২৭৬৬২*১০-১৯ কুলম্ব। (১ কুলম্ব চার্জ হচ্ছে একটি পরমানু থকে অন্য পরমানুতে প্রতি সেকেন্ডে স্থানান্তরিত চার্জের পরিমান)। একটি ইলেকট্রন কনার চার্জ -১.৬০২৭৬৬২*১০-১৯ কুলম্ব এবং প্রোটন কনার চার্জ +১.৬০২৭৬৬২*১০-১৯ কুলম্ব। এ থেকে এটি স্পষ্ট বোঝা যায় যে,কোষের ভিতরে প্রতি সেকেন্ডে কি পরিমান বিদ্যুত এর আদান প্রদান ঘটে।
উদ্ভিদ কোষ একটি বৈীষষ্ট্য লাভ করে। অর্থাৎ উদ্বিদ কোষ পরমানুর এই বিকিরন শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিবর্তন করে নিজ কোষে সংরক্ষন করে। সূর্য ক্রমাগত হাইড্রোজেন পরমানুর শক্তির বিকিরন করে যাচ্ছে এবং এ শক্তির আলোর ঝলকানীই হচ্ছে আমাদের দিনের আলো। এই আলোক শক্তির রূপান্তরিত রাসায়নিক শক্তি হচ্ছে এমাইনোএসিড, ফ্যাটিএসিড, গ্লুকোজ, ভিটামিনস, মিনারেলস ও পানি। উদ্ভিদ কেষের এই ক্ষমতা মূলত কোষ দেহের পারমানবিক গঠনের বিশেষ বৈষিষ্ঠ্য প্রকাশ করে। অর্থাৎ পরমানুগুলো এমন ভাবে সজ্জিত হয়ে নতুন শক্তি অর্জন করেছে যোতে করে সুর্য়ের আলোকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিনত করতে পারে।
আবার প্রানি কোষ ও বিশেষ বৈশিষ্ট লাভ করে। অর্থাৎ উদ্ভিদ কোষে সংরক্ষিত রাসায়নিক শক্তিকে ভেঙ্গে সংরক্ষিত চার্জ বিমুক্ত করে এবং এই বিমুক্ত চার্জকে কাজে লাগিয়ে প্রানি কোষ লক্ষ লক্ষ কার্য সম্পাদন করে।
একটি কোষের ভিতরইে ঐ প্রানি বা উদ্ভিদের পুরো পান্ডুলিপি রাসায়রিক সংকেত আকারে সংরক্ষিত থাকে। এই রাসায়নিক শক্তিই হচ্ছে পরমানু থেকে বিচ্ছুরিত আলোক শক্তি। কম্পিউটার হার্ডডিস্ক এ রাখা তথ্য (বাইট) গুলো মূলতঃ বৈদ্যুতিক শক্তিকে চুম্বকীয় শক্তিতে রুপান্তর মাত্র।
মানব দেহ কোষে সব সময়েই পজেটিভ (+) শক্তির আধিক্য থাকে এবং উদ্ভিদ কোষে সবসময় নেগেটিভ (-) শক্তির আধিক্য থাকায় উদ্ভিদ ক্যামিকেল প্রানি দেহের চার্জ ভারসাম্য রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।
প্রানিকোষ, উদ্ভিদাকোষ কে ভেঙ্গে সংরক্ষিত পারমানবিক শক্তি পুনরদ্ধার করে নিজেরা ব্যবহার করতে পারে। প্রানি কোষের এটি বিশেষ প্রাকৃতিক ক্ষমতা। প্রানি (মানুষও প্রানি) যখন কোন খাবার খায় ,প্রানির পাকস্থলি কোষ সে খাবার ভেঙ্গে উদ্ভিজ ক্যামিকেল (সংরক্ষিত পারমানবিক শক্তি) পৃথক করে ফেলে। এমাইনোএসিড, ফ্যাটিএসিড, গ্লুকোজ, ভিটামিনস, মিনারেলস ও পানি এই ৬টি প্রাকৃতিক ক্যামিক্যালস ক্ষুদ্রান্ত থেকে শোষিত হয়ে রক্ত¯্রােতে প্রবেশ করে এবং বাহিত হয়ে লিভার কোষে পৌছেঁ। লিভার কোষ ক্যামিক্যালস গুলোর কিছু নিয়ে না না ধরনের প্রোটিন, এনজাইম, হরমোন ও এন্টিবডি তৈরি করে এবং বাকী অংশ সারসরি হার্টকোষে প্রেরন করে। হার্ট সরাসরি এ গুলোকে মূল রক্তসোতে (ভাসকুলার সিসটেম) প্রেরন করে। মূল রক্ত¯্রােত থেকে এটি ১০০ ট্রিলিয়ন কোষে পৌঁছে।
কোষের প্রথম কাজ হচ্ছে কোষের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য শক্তির যোগান দেয়া। এ জন্য প্রাকৃতিক ক্যামিক্যলস গ্লুকোজ (ঈ৬ঐ১২ঙ৬) কে প্রধান জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে। কোষের ভিতর গ্লুকোজ প্রবেশের পর ২৫ ধাপে রাসায়নিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বশেষে ক্যমিকেল এনার্জি (এটিপি),পানি ও কার্বন ডইি অক্সাইড তৈরি করে। এ সবই কিন্তু পারমানবিক ক্রিয়ার ফল। এই ক্যামিকেল এনার্জি ই (উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রূপান্তরিত আনবিক শক্তি) যা কোষের লক্ষ লক্ষ প্রান রাসায়নিক কাজে ব্যবহৃত হয়। পানি একটি উৎকৃষ্ট দ্রাবক যা দেহের জন্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দ্রবীভ’ত করে কিডনি কোষের মাধ্যমে বের করে দেয়। কার্বন ডাই অক্সাইড একটি গ্যাসীয় বিষাক্ত পদার্থ যা রক্তসোতে বাহিত হয়ে ফুসফস কোষে পৌছেঁ এবং সেখান থেকে প্রশ্বাস এর মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এ প্রক্রিয়া গুলো সম্পন্ন করার জন্য প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ পারমানবিক ক্রিয়া সংগটিত হয়।
রক্ত¯্রােত থেকে এমাইনোএসিড কোষ অভ্যন্তরে প্রবেশের পর নির্দেশিকা অনুসারে প্রতি সেকেন্ডে বিলিয়ন বিলিয়ন প্রোটিন , এনজ্ইাম, হরমোন ও এন্টিবডি তৈরি করে।
কোষ দেহ ও অঙ্গানুগুলোর আবরন এর প্রধান ক্যামিক্যালস হচ্ছে ফ্যাটিএসিড। নিউরন কোষের ৭০% আবরন হচ্ছে ফ্যটিএসিডের বড় অনু। এ বিশেষ ধরনের পারমানবিক আবরন কোষের অভ্যন্তর ও বাহিরের মধ্যে সমস্ত ভারসাম্য রক্ষা করে। এ ফ্যাটিএসিড বিশেষ কিছু হরমোন (প্রজনন হরমোন, যৌন হরমোন) তৈরি করে।
কোষ এতসব কাজ করে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় থেকে ১ মিনিটের মধ্যে। একটি হিমোগ্লোবিন অনু এেক প্রকার প্রোটিন) তৈরির জন্য মেরুমজ্জা কোষ কে সময় ব্যায় করতে হয় ১ মিনিটের একটু বেশী। এ সময়ের মধ্যে মজ্জাকোষ বোনম্যারো) আয়রন দিয়ে তৈরি একটি অনু হিম এবং ২৮৭ টি নির্ধারিত এমাইনোএসিড এসিড একত্রিত করে একটি প্রোটিন অনু গ্লোবিন তৈরি করে এবং হিম ও গ্লোবিন একত্রিত করে হিমগ্লোবিন তৈরি করে মূহুর্তের মধ্যে লাল রক্তকোষ (বোনম্যারোতে তৈরি হয়) কনিকার উপর লেপে দেয়। মোট প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ১মিনিট এর একটু বেশী সময় লাগে। এটি কোষের প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ কাজের একটি মাত্র।
প্রতিটি কোষ প্রতি নিয়ত বিভাজন হয়। দেহের প্রোয়োজনে কোন কোন কোষ দ্রত বিভাজন হয়। যেমন পাকস্থলি ও ক্ষুদ্রান্তের কোষ ২/৩ দিনের মধ্যে নতুন কোষ তৈরি করতে পারে। বোনম্যারো কোষ প্রতি সেকেন্ডে ২০ লক্ষ নতুন রক্তকোষ তৈরি করে।
একটু লক্ষ করুন কোষের পারমানবিক ক্ষমতার একটু উলট পালট হলেই পুরো দেহ ব্যবস্থাায় বির্পযয় নেমে আসে। আবার পরমানুরা নিজেদের প্রাকৃতিক ধর্ম নিজেরাই স্থিতিশীল করে তোলে। এখানে ড্রাগ ভ’মিকার কোন সুযোগ নেই।
তাহলে আধুনিক ড্রাগের কাজ কি। দেহের অেিস্থতিশীলতায় ড্রাগ ব্যবহারে তাৎক্ষনিক ফলাফল পাওয়া যায়। দেহ কোষের পারমানবিক স্থিতিশীলতা যখন কোন কারনে নষ্ট হয় তখন কোষ প্রয়োজন মত প্রোটিন, এনজাইম, হরমোন ও এন্টিবডি সংশ্লেষন করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট অঙ্গ এর কার্যকরীতা কমে বা নষ্ট কয়ে যায়। এর ফলে পুরো দেহ ব্যবস্থর্াায় সাধারন বিপর্র্যয় নেমে আসে। এই বিপর্যয়ের সাধারন লক্ষন হচ্ছে জ্বর , ব্যাথা, বমি, দুর্বলতা, মাথাঘোরা ইত্যাদি। এ লক্ষন গুলোও কোন না কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল। ড্রাগ ফরমূলা (সিনথেটিক ক্যামিক্যাল) পরিক্ষীত ভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল কে বন্ধ বা খুলে দিতে পারে যা তাৎক্ষনিক ভাবে দেহের অস্বাভাবিক লক্ষন গুলোকে থামিয়ে দেয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়া দেহ কোষের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে যার ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী কোষীয় পারমানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। আর একেই বলে দূরারোগ্য রোগ। এই দূরারোগ্য রোগের অন্যতম প্রধান কারন যথেচ্ছা ড্রাগের ব্যবহার।
Dr.Shebendra karmakar
Ph.D In Naturopathy,USA
Mobile:01712393053
No comments:
Post a Comment