ডায়বেটিস কি অনিরাময় যোগ্য রোগ? সঠিক প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনায় ডায়বেটিস নিরাময় সম্ভব!

ডায়বেটিস অনিরাময় যোগ্য রোগ এর সপক্ষে একটি প্রমান হাজির করা সম্ভব নয়। তবে কিসের যুক্তিতে আধুনিক ডাক্তার গন এটিকে অনিরাময় য়োগ্য রোগ বলেন এবং যতদিন বাঁচবেন ওরাল ড্রাগ ও ইনজেকশন ড্রাগ (ইনস্যুলিন) নিয়ে বাঁচতে হবে। সঠিক প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবস্থাপনার (স্টেমসেল নিউট্রিশন) মাধ্যমে ডায়বেটিস এর চিকিৎসা সম্ভব এ  বিষয়ে নিশ্চিত প্রমানাদি উপস্থাপন সম্ভব।

বিষয়টি উপস্থাপনার আগে ডায়বেটিস কি ধরনের রোগ সেটি জানা এবং এর চিকিৎসায় আধুনিক ড্রাগ এর সুদূর প্রসারি প্রতিক্রিয়া কি সে সম্পর্কে আলোচনা করব।

রক্তে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি গ্লুকোজের উপস্থিতিকেই ডায়বেটিস নামে আখ্যায়িত করা হয়। মানব দেহ ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ দিয়ে তৈরি। প্রতিটি কোষ এর জীবন আছে। প্রতিটি কোষ প্রতিদিন নির্দিষ্ট খাদ্য নির্দিষ্ট পরিমানে গ্রহন করে। গ্লুকোজ কোষের একটি খাবার। কোষ এটি গ্রহন করার পর অনেক গুলো রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত করার মাধ্যমে সর্বশেষে শক্তি উৎপাদন করে। দেহের মোট কার্যকরী শক্তিই মূলতঃ কোষের উৎপাদিত শক্তি। এ মূল শক্তি উৎপাদন হওয়ার পর প্রতিটি অঙ্গ (নির্দিষ্ট ধরনের কার্যকরী কোষ দিয়ে তৈরি) যেমন চোখের কোষ প্রকৃতি থেকে উৎসরিত আলো গ্রহন করে দেখার কাজটি সম্পন্ন করবে। হার্টে কোষগুলো সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমে দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াটি অটুট রাখবে এভাবে প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আগে থেকে নির্ধারিত যার যার দায়িত্ব পালন করে। সব দায়িত্ব গুলো সুচারূ রূপে করার প্রাথমিক শর্ত গ্লুকোজ ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন। সুতরাং কোষের নিরবছিন্ন শক্তি ঊৎপাদনের লক্ষ্যে রক্ত স্রোতে গ্লুকোজের উপস্থিতি অনিবার্য। গ্লুকোজ রক্ত স্রোতে আছে,থাকবে এটিই দেহ ব্যবস্থার স্বাভাবিক নিয়ম। স্বাভাবিক এর চেয়ে অধিক বা কম গ্লুকোজ এর উপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ১০০ ট্রিল্রিয়ন কোষের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়ে পুরো দেহ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিপযস্ত হতে পারে। ডায়বেটিস কোন রোগ নয় ,সকল রোগের কার্যকারন। রক্তে গ্লকোজ এর পরিমান বেড়ে গেলে এটিকেই ডায়বেটিস বলা হয়।

গ্লুকোজতো রক্তেই থাকবে। সমস্যা হচ্ছে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি গ্লুকোজের উপস্থিতি। তা হলে সমস্যাটা কোথায়। রক্তে গ্লুকোজের অধিক উপস্থিতির ৩টি কারন থাকতে পারে। ১) প্রয়োজনের চেয়ে অধিক গ্লুকোজ গ্রহন। ২) দেহ ইনস্যুলিনের কম নিঃসরন। ৩) দেহ কোষের অসুস্থতা। এর যে কোন একটির ব্যাতায় ঘটলে রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আধুনিক চিকিৎসায় কারন গুলোর উপর গুরুত্ব না দিয়ে সরাসরি ডায়বেটিস চিকিৎসার উপর গুরুত্ব দিয়ে এর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ব্যবসার সম্প্রসারন কাজে বেশী মনোনিবেশ করেছে।

আধুনিক ড্রাগ ব্যবস্থাপনায় ডায়বেটিস এর চিকিৎসার দিক গুলো আলোচনা না করলে এর পরিনতি এবং বিক্লপ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আছে কিনা তা জানা সম্ভব হবে না।

প্রচলিত ড্রাগ গুলো তিন/চার টি কৌশলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করে। কিছু ড্রাগ ইনস্যুলিন নিঃসরনে উদ্দিপনা জাগায়। কিছু ড্রাগ আছে যে রক্তের গ্লুকোজ কে কোষে প্রবেশে উদ্দিপনা যোগায়। কিছু ড্রাগ অন্ত্র থেকে গ্লুকোজ শোষন বাঁধাগ্রস্ত করে। কিছু ড্রাগ দেহের সঞ্চিত গ্লুকোজ (গ্লাইকোজেন) ভাঙ্গা  প্রতিরোধ করে। এ ভাবে বিভিন্ন কৌশলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্র নিয়ন্ত্রন করে।

আধুনিক ড্রাগ ব্যবস্থাপনায় ইনস্যুলিন একটি বড় হাতিয়ার। ইনস্যুলিন ব্যবস্থাপনায় ডায়বেটিস চিকিৎসা জনপ্রিয় পদ্ধতি। এ ইনস্যুলিন কিভাবে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করে? ইনস্যুলিন হচ্ছে একটি প্রোটিনধর্মী হরমোন যা দেহের বিটাসেল উৎপন্ন করে। দেহে ইনস্যুলিনের কাজ হচ্ছে চাবির মত। প্রতিটি কোষ এর কোষপ্রাচীরে তালার (রিসেপ্টর) মত আছে । ইনস্যুলিন প্রতিটি কোষের তালা খুলে দেয় আর গ্লুকোজ কোষ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। কোষের গ্লুকোজ চাহিদা তৈরি হলে ইনস্যুলিন এর কাছে সংবাদ পৌঁছে এবং ইনস্যুলিন এসে কাজটি সম্পন্ন করে। সুতরাং গ্লুকোজ ব্যবহারে ইনস্যুলিন এর প্রয়োজনীয়তা অনিবার্য। কিন্তু সেটি নির্ধারনের জন্য অন্ততঃ ১ বছর সময় নেয়া উচিৎ। দেহের অভ্যন্তরস্থ: ইনস্যুলিন তৈরি না হলে অবশ্যই ড্রাগ হিসাবে ইনস্যুলিন নিতে হবে। দেহ যদি পর্যাপ্ত ইনস্যুলিন তৈরি করে,এবং ড্রাগ আকারে ইনস্যুলিন নেয়া হয় তবে সেটি দেহের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। কোষের তালা (রিসেপ্টর) যদি নষ্ট থাকে ,তবে চাবি (ইনস্যুলিন)  কোন কাজে আসে না। সুতরাং ড্রাগ ব্যবস্থাপনায় ডায়বেটিস চিকিৎসা কতটুকু কার্যকর তা ডায়বেটিস রোগীদের ভাবতে হবে। কারন রোগটি হচ্ছে দেহ কোষের অসুস্থ্যতা। 

তিনটি প্রধান কারনে রক্তস্রোতে অধিক মাত্রায় গ্লুকোজ থাকতে পারে। সুতরাং এ তিনটি কারন কে সমাধান দিলে ৯৫% ডায়বেটিস সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

১) অধিক গ্লুকোজ গ্রহন বন্ধ করতে হবে:

বিজ্ঞানিরা হিসাব করে দেখিয়েছেন যে,২৪ ঘন্টায় ১০০ট্রিলিয়ন কোষের গ্লুকোজ চাহিদা মাত্র ১৮০ গ্রাম যা পেতে শর্করা (রুটি ও ভাত) জাতীয় খাদ্য খেতে হবে মাত্রে ৩০০ গ্রাম। অতিরিক্ত গ্লুকোজ ব্যবস্থাপনার জন্য বাড়তি ইনস্যুলিন এর প্রয়োজন হয়। সাড়া জীবনে কত গ্লুকোজ ব্যবহার হবে এবং এর জন্য কি পরিমান ইনস্যুলিন তৈরি হবে তা পূর্ব থেতে নির্ধারন করা আছে। সুতরাং  জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গ্লুকোজ ও ইনস্যুলিনের প্রয়োজন আছে। কোষের প্রয়োজনে গ্লুকোজ আসবেই কিন্তু প্রয়োজনীয় ইনস্যুলিন না থাকলে রক্তস্রোতে আসা গ্লুকোজ অব্যবহৃত খাকবে। এটিই ডায়বেটিস।

২) দেহ অভ্যন্তরস্থ ইনস্যুলিন উৎপাদন বাড়াতে হবে:

দেহের বিটাসেল ইনস্যুলিন উৎপাদন করে। কোষ গবেষনায় জানা গেছে, দেহের প্রায় সব কোষ নির্দিষ্ট সময় পর মৃত্যুবরন করে এবং মৃত্যুর আগে একটি নতুন কোষের জন্ম দেয়। ইনস্যুলিন উৎপাদনকারী বিটাসেল গুলোর জীবনকাল প্রায় ১ বৎসর। অর্থাৎ ১ বৎসর পর নতুন বিটাসেলের জন্ম হয়। প্রতিটি কোষ পরিমানমত নির্দিষ্ট পুষ্টি গ্রহনের মাধ্যমে তার প্রানরাসায়নিক জীবনকাল সমাপ্ত করে। সুতরাং সঠিক পুষ্টি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিটাসেলের ইনস্যুলিন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

৩) ১০০ ট্রিলিয়ন দেহ কোষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে:

সঠিক পুষ্টি,পরিমানমত অক্সিজেন,চাপমুক্ত জীবন দেহ কোষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত   করতে পারে।

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনায় এটি নির্ধিদ্বায় বলা যায় ডায়বেটিস হচ্ছে নিজ সৃষ্ট দেহের অব্যবস্থাপনা। ড্রাগের মাধ্যমে ডায়বেটিস এর অপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা দেহ ২য় মৃত্যু শিকার হতে পারে। প্রাকৃতিক খাদ্য ও প্রাকৃতিক জীবন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডায়বেটিস মুক্ত জীবন সম্ভব।

Written by

Dr.Shebendra karmakar

Ph.D in Natural Health Care,USA

Web:https://adapto-medicine.blogspot.com