প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ ডাক্তার,
প্রাকৃতিক খাদ্যই শ্রেষ্ঠ ঔষধ।
ড.শিবেন্দ্র কর্মকার
Doctorate & Ph.D in Natural Medicine
আজকের আধুনিক ড্রাগ ভিত্তিক চিকিৎসা সাড়া বিশ্বে জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি । এ চিকিৎসা পদ্ধতির বয়স ২৫০/৩০০ বৎসর। অথচ প্রাচীন কাল থেকে মানুষ রোগ নিরাময়ে ‘হার্বাল’ চিকিৎসার এর নির্ভর করত। এটিই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সর্ব প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রাকৃতিক গাছ গাছালী ব্যবহার করে স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতির গোড়াপত্তন হয়েছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান রুপ মূলতঃ প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির সংগ্রহ ,সংরক্ষন ও গবেষনার ফলাফল। এক কথায় বলা যায় প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিক রুপায়ন হচ্ছে “আধুানক ড্রাগ চিকিৎসা”।
তৎসময়ের চিকিৎসকরা এর গবেষনা লব্ধ ফলাফল বিভিন্ন মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সেই প্রাচীন চিকিৎসা গ্রন্থগুলিই মূলতঃ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গোড়াপত্তন করার সুযোগ করে দিয়েছে। আধুনিক চিকিৎসকগন তাদের পুর্ব সূরীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেই তারা শিক্ষা সমাপন শেষে যে শপথ নিয়ে থাকেন সেই শপথটির লেখক “হিপোক্রাটস’। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের একজন চিকিৎসক। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য তাকে “আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়’। চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের শুরুতেই একটি প্রতিক চিহৃ (Rx) থাকে । এই প্রতিকটিও অন্য একজন প্রাচীন মিশরীয় চিকিৎসক এর নামের প্রতীক ।
প্রাচীন ও আধুনিক সব সময়ের চিকিৎসা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য ছিল রোগ নিরাময়। সুতরাং রোগ, রোগের কারন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এবং সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপত্র শুধুমাত্র আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেই দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রাচীন কালের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনুমান ভিত্তিক মতামত ব্যাক্ত করেছেন ও লিপিবদ্ধ করেছেন যা আধুনিক চিকিৎসা গবেষণায় সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আধুনিক চিকিৎসা গবেষনায় এটি নিশ্চিত প্রমাণিত হয়েছে যে, দেহ রোগের কারন হচ্ছে ’কোষ’ এর অসুস্থতা। কোষ হচ্ছে এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবন। সমগ্র প্রানী (মানুষ) ও উদ্ভিদ জগৎ এককোষী ও বহুকোষী প্রানের সমষপ্রতিটি কোষের একটি নির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে এবং সেই কাঠামো নির্মিত হয়েছে সুনির্দিষ্ট জৈব উপাদান দিয়ে। আর সেই নির্দিষ্ট জৈব উপাদান গুলি প্রস্তুত করে শুধুমাত্র উদ্ভিদ কোষ। উদ্ভিদ কোষ সূর্যের আলো, পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষন (Photosynthesis) প্রক্রিয়ায় প্রতি মুহুর্তে জৈব উপাদান (Biochemical) সমূহ উৎপাদন করে চলেছে। যে কোন উদ্ভিদ দেহকে বিশ্লেষন করলে এই সুনির্দিষ্ট উপাদান সমূহ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না। সেই উপাদান সমূহ হচ্ছে, ১) এমাইনো এসিড ২) ফ্যাটি এসিড ৩) গ্লুকোজ ৪) ভিটামিনস ৫) মিনারেলস ৬) পানি। এই উপাদান সমূহ তৈরি হয়েছে ১২/১৩ টি মৌলিক উপাদান দিয়ে। সেই মৌলিক (Eliment) উপাদান সমূহ হচ্ছে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, সালফার, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, আয়রন, জিংক, ক্লোরিন, ফ্লোরিন ইত্যাদী কতিপয় মৌলিক উপাদান দিয়ে। এই মৌলিক উপাদান গুলো নানা ভাবে বিন্যস্ত হয়ে পৃথিবী ও বিশ্বের সকল জীবিত ও জড় বতুর সৃষ্টি করেছে। মৌলক পদার্থ গুলো নিজেদের সাথে বা অন্যদের সাথে বন্ধন তৈরি করে একটি অনুর (Molecule) জন্ম দেয় যেমন, অক্সিজেন (O2) ও পানি (H2O)। শুধু আক্সিজেন একটি গ্যাসিয় পদার্থ এর একটি নির্দিষ্ট ধর্ম রয়েছে। আবার পানি একটি জলীয় পদার্থ এরও নির্দিষ্ট ধর্ম রয়েছে। এই অনুগুলো নিজেদের মধ্যে বা অন্য অনুদের সাথে বন্ধন তৈরি করে একটি জৈব বা জড় বস্তুর সৃষ্টি করে। যেমন, আয়রন (Fe) অনুগুলো মিলে লৌহ পদার্থের সৃষ্টি করে। পানির অনুগুলো মিলে বিশাল পানি রাশির সৃষ্টি করে। যেমন নদী, সাগর, মহাসাগরের পানি রাশি। প্রতিটি অনুর একটি নির্দিষ্ট ধর্ম রয়েছে। বিশ্বের সকল জৈব ও অজৈব পদার্থের ধর্ম মূলতঃ ঐ পদার্থে থাকা অনু ও পরমানুর ধর্ম। প্রতিটি পরমানুর নিজেদের সাথে বা অন্য পরমানুর সাথে মিলিত হওয়ার একটি প্রাকৃতিক ধর্ম রয়েছে। আর এই আকর্ষন শক্তিই বিশ্বের সকল বস্তু কে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ রাখতে সক্ষম হচ্ছে। পৃথিবীর সাথে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের, পৃথিবীর সাথে এর বস্তু সমূহের এবং মানুষের সাথে মানুষের এবং অন্যান্য গাছপালা ও পশু পাখির সাথে আনবিক আর্কষন এর সম্পর্ক রয়েছে। এই আনবিক আকর্ষন শক্তি এত ব্যাপক ,বিস্তৃত ও প্রতি মুহুর্তের ঘটনা যার ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী,মহাপুরুষ ও পন্ডিত ব্যক্তিরা এর যৎসামান্যই উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছেন। তাতেই বিজ্ঞানীরা বড় বড় পুরুষ্কার এবং মহাপুরুষ ও পন্ডিত ব্যক্তিরা বড় বড় উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। অথচ প্রকৃতির এই পারমানবিক ধর্ম অতি সাধারন নিয়ম মেনে চলে এবং সম্পূর্ন আত্ম নিয়ন্ত্রিত। অন্য কোন বর্হি শক্তির পক্ষে এর ধ্বংশ বা সৃষ্টি কোনটিই সম্ভব নয়। কারন বস্তু গঠনের পরমানু ,তার গঠন স্তরে কোন পরিবর্তন হয় না। এটি শুধু শক্তি ভাংগা ও গড়ার মাধ্যমে শুধু নতুন রূপে আর্বিভুত হয়। বিশ্বের সব কিছুর সৃষ্টি এভাবেই হয়েছে। এই ভাংগা ও গড়ার কাজ প্রতিনিয়তই চলছে। কিছু কিছু ভাংগা গড়া দৃশ্যমান তাই পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে এর রুপাšতর জানা সম্ভব হয়েছে। যেমন আঙ্গুর পঁচে গেলে এলকোহল এ পরিনত হয়। কিন্তু অদৃশ্য রুপাšতরই বেশী যা দৃষ্টি সীমার বাইরে থাকে। এটি এত ধীর গতিতে সংগঠিত হয় যে, হাজার কোটি বৎসরেও এর সামান্য পরিবর্তন চোখে পড়ে না। তাই আমাদের দৃষ্টির মধ্যে সব কিছুই দেখতে একই রকম মনে হয়। কিন্তু শক্তির সামান্য ভাংগা গড়ার মাধ্যমেই প্রকৃতির সকল কিছুর মধ্যে আচরন গত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতিতে প্রতি সেকেন্ডে শত শত কোটি ভাংগা গড়ার কাজ সংগঠিত হয়। আমাদের দেহের আচরন ও প্রকৃতিরই ভাংগা গড়ার অংশ। অর্থাৎ দেহের পরমানু গুলোর একে অপরের সাথে আর্কষনের ফলে শক্তির স্থানান্তর ঘটে। আর শক্তির রুপান্তরের ফলে দেহের শত শত কোটি প্রান রাসায়নিক কাজ সম্পাদন হয়। এভাবেই আমাদের দেহ মৃত্যু অবধি বেঁচে থাকে।
মৌলিক পরমানু সমূহ একা থাকতে পারেনা। পরমানু সমূহ নির্দিষ্ট শক্তি (বিদ্যুৎ = ইলেকট্রন প্রবাহ) গ্রহন ও বর্জনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আধান ( নেগেটিভ বা পজেটিভ) যুক্ত পরমানুতে পরিনত হয়। দুটি পজেটিভ আধান যুক্ত পরমানু পরস্পরকে দূরে ঠেলে দেয়, অন্যদিকে দুটি বিপরীত আধান যুক্ত পরমানু পরস্পরকে কাছে টেনে নেয়, বন্ধন তৈরি করে, নতুন নতুন বস্তুর সৃষ্টি করে। নেগেটিভ আধান যুক্ত পরমানু সমূহ শক্তি (ইলেকট্রন) গ্রহন করে অন্যদিকে পজেটিভ আধান যুক্ত পরমানু সমূহ শক্তি (ইলেকট্রন) বর্জন করে। এভাবে প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুতে বিদ্যুত প্রবাহ (ইলেকট্রন গ্রহন ও বর্জন) চলতে থাকে। যেমন অক্সিজেন পজেটিভ আধান যুক্ত অনু। হাইড্রোজেন নেগেটিভ আধান যুক্ত অনু। একটি পজেটিভ আধান ,নেগেটিভ আধানের চেয়ে ১৮৩৬ গুন ভারী। অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন অনু উভয়েই গ্যাসীয় পদার্থ। কিন্তু হাইড্রোজেন অনু এত হালকা যে, এটি বাতাসে থাকে না বলেলেই চলে। কিন্তুু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন ,পরমানু অবস্থাই এত সক্রিয় যে, প্রকৃতি রাজ্যের সকল বস্তুতেই এর উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্বের বিশাল জল ভান্ডার এই অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন পরমানুর বন্ধন ছাড়া অন্য কিছু নয়।
উদ্ভিদ কোষ সূর্যের আলো,কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানি ব্যবহার করে , এমাইনো এসিড, গ্লুকোজ,ফ্যাটি এসিড,ভিটামিনস ও পানি প্রস্তুত করে। মিনারেলস সমূহ মাটি থেকে উদ্ভিদ কোষে জমা হয়। উদ্ভিদ কোষে প্রস্তুতকৃত জৈব অনু সমূহ অক্সিজেন,হাইড্রোজেন,কার্বন ও নাইট্রোজেন পরমানুর সমাবেশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আবার কোষ দেহ এমাইনো এসিড,গুকোজ,ফ্যাটি এসিড,ভিটামিনস, পানি ও মিনারেলস এর সমাবেশ ব্যতিত অন্য কিছু নয়। ধারনা করা হয় সূর্যের আলোর ্উপস্থিতিতে ,সমুদ্রের পানিতে ,প্রকৃতির মুক্ত পরমানু সমূহ পরস্পর আর্কষন এ একত্রিত হয়ে প্রথম এককোষি প্রানের সঞ্চার ঘটায়। এভাবে সৃষ্ট একটি কোষ ,বহুকোষি একটি প্রানে রুপান্তরিত হয়। প্রতিটি ধাপেই পরমানু সমূহের শক্তির রুপান্তর ঘটেছে এবং নতুন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বৎসর আগে যে প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটেছে তা এখোনো চলছে। প্রতি মুহুর্তেই মুক্ত পরমানুরা নতুন নতুন প্রান ও ব¯তুর সৃষ্টি করে চলেছে। আবার এটি পরমুহুর্তেই থেমে গেছে,যখন পরমানু সমূহ একে অপরের আকর্ষনে নিরপেক্ষ হয়ে গেছে অর্থাৎ শক্তির (ইলেকট্রন) ন্থানান্তর বন্ধ হয়ে গেছে।
উদ্ভিদ ও প্রানি কোষ এর বিকাশ কবে ঘটেছে তা জানা সম্ভব না হলেও এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এরা অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন ও নাইট্রোজেনের পরমানুর সমাবেশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই পরমানুর শক্তিই উদ্ভিদ কোষকে নিজের খাদ্য নিজে তৈরির প্রক্রিয়ার ক্ষমতা দিয়েছে আবার প্রানি কোষকে দিয়েছে উদ্ভিদ কোষ কে ভেংগে নিজের খাদ্য গ্রহনের ক্ষমতা। এভাবে উদ্ভিদ ও প্রানির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা মূলতঃ পরমানু সমূহের শক্তির রুপান্তরের ভিন্ন দুটি রুপ। যেমন,হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম অনু ,দুটিই গ্যাসীয় পদার্থ এবং হালকা। অথচ হাইড্রোজেন একটি অত্যন্ত সক্রিয় গ্যাস , হিলিয়াম একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এই দুটি পরমানুর কেন্দ্রিয় স্তরে একটি মাত্র পজেটিভ আধান (প্রোটন) এর আধ্যিকের কারনে এই বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ হাইড্রোজেন এর আধান (প্রোটন) ১টি ,হিলিয়াম এর আধান (প্রোটন) ২টি। আবার কার্বন ও অক্সিজেন অনু দুটি ভিন্ন আকারের বস্তু। কার্বন কালো রঙের কঠিন বস্তু । আবার অক্সিজেন গ্যাসীয় বস্তু যার নিজস্ব দহন ক্ষমতা রয়েছে। কার্বন পরমানু স্তরে আধান ( প্রোটন) সংখ্যা ৬াট এবং অক্সিজেন পরমানু স্তরে আধান ( প্রোটন) সংখ্যা ৮াট। পরমানু স্তরে মাত্র ২াট আধান সংখ্যার পার্থক্যের কারনে ,এই দুইটি পরমানুর বর্হিপ্রকাশে বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আবার কার্বন পরমানু ,৪টি হাইড্রোজেন পরমানুর সাথে যুক্ত হয়ে ‘মিথেন’ নামে একটি গ্যাস তৈরি করে। এই গ্যাসটিই গ্যাসের চুলার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং পরমানু সমূহ যখন অন্য পরমানুর সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন পদার্থের সৃষ্টি করে তখনো নিজেদের ধর্মের বর্হিপ্রকাশ অটুট থাকে এবং সৃষ্ট পদার্থের একটি নিজস্ব কার্যকারীতা (Function) সৃষ্টি করে। ঠিক একই ভাবে মানব কোষে সৃষ্ট হরমোন, এনজাইম, প্রোটিন ও এন্টিবডি এর ভিন্ন ভিন্ন কোটি কোটি কার্যকারীতা রয়েছে। যাদের কার্যকারীতার সমন্বয়ের ফলে মানব দেহ পরিচালিত হয়। পরমানু পর্যায়েই শক্তির সৃষ্টি ও রূপান্তর ঘটে, কোন একটি নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন শেষে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। পরমানু পর্যায়ে শক্তি (ইলেকট্রন) স্থানাšতর বিঘœ হওয়ার মাধ্যমে দেহের প্রয়োজনীয় পদার্থের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এ ভাবেই দেহ ‘ভারসাম্যহীন’ হয়ে পড়ে। এই ভারসাম্যহীনতাকেই
‘রোগ’ বলে।
পরমানু পর্যায়ে শক্তি (ইলেকট্রন) স্থানান্তর বিঘœ ঘটার কিছু কারন জানা গেছে। অধিক ফ্রী রেডিক্যাল (মুক্ত ইলেকট্রন) এর জন্য দায়ী। ফ্রী রেডিক্যাল শক্তি স্থানান্তরে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কোন একটি মুক্ত ইলেকট্রন যদি পজেটিভ আধান যুক্ত পরমানুর সাথে সংযুক্ত হতে না পারে,তবে মুক্ত ভাবে ঘুরে বেড়ায়। ফ্রী রেডিক্যাল , দেহের স্থিতিশীল ব¯তু সমূহের আনবিক গঠন কে ভেঙে দিয়ে অস্থিতিশীল করে তোলে এবং নতুন মুক্ত ইলেকট্রন এর সৃষ্টি করে। ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিও থেরাপী,ক্যামোথ্যারাপী এবং রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত (সিটি স্ক্যান, পেটস্ক্যান, এম আর আই, এনজিওগ্রাম, ল্যাপোরসকপি) ত্যাজষ্ক্রিয় পদার্থের সৃষ্ট বিকিরন দেহে ‘ফ্রী রেডিক্যাল’ তৈরি করে। আর সমস্ত ঘটনার কারন হচ্ছে রোগের মহাকারন।
আধুনিক চিকিৎসায় রোগ নির্ণয় পদ্ধতি (ডায়াগনোসিস) রোগ নিরাময়ে কতটুকু সাহায্য করছে তাও ভেবে দেখার দাবী রাখে। রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত ডায়াগনোসিস ড্রাগ গুলো (ছবি তোলার জন্য যে গুলো শরীরে প্রবেশ করানো হয়) কোষ দেহের পরমানু গুলোকে উত্তেজিত করে এবং উত্তেজিত পরমানু ,শক্তি (ইলেকট্রন) বিকিরন করে। বাইরে স্থাপিত গ্রাহী যন্ত্রের ফটোফ্লিমে ছুটন্ত ইলেকট্রন আঘাত করে এবং ফ্লিমের উপর দাগ পড়ে। এভাবে ফটোফ্লিমের উপর একটি পূর্ন ছায়া পড়ে। সেই ছায়া পর্যবেক্ষন করে অভিজ্ঞ ডাক্তার দেহ অঙ্গের ত্রুটি সনাক্ত করেন।
কিছু কিছু রোগ নির্ণয়ে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার হয় যেটি কোষ দেহের পরমানুর সাথে লেগে যায় এবং সেখান থেকে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি ছুঁড়ে দেয় যা গ্রাহী যন্ত্রে ধরা পড়ে এবং ছায়া তৈরি করে।
এক্স-রে দেহের হালকা পরমানু অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন কে সহজে অতিক্রম করে অপর প্রান্তে রাখা ফটোফ্লিমে আঘাত করে এবং কালো দাগ পড়ে। অপেক্ষাকৃত ভারী পরমানু ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস (হাড়ের প্রধান উপাদান) এর বাধা অতিক্রম করতে পারে না। ফলে ফটোফ্লিমে সাদা দাগ পড়ে। এভাবে ছবি পর্যবেক্ষন করে দেহের ত্রুটি নির্ধারন করা হয়।
দেহের পরমানু কেন্দ্রে আঘাত করার কারনে কিছু পরমানু ফ্রী রেডিক্যাল এ পরিনত হয় যা দূরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টির জন্য দায়ী।
উদ্ভিদ কোষে জৈব রাসায়নিক উপাদান গুলোর উৎপাদন ও সংরক্ষন করার পারমানবিক ক্রিয়া চলে। অপর পক্ষে প্রানি কোষ, উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত জৈব রাসায়নিক উপাদান সমূহ ব্যবহার করে, প্রথমে শক্তি উৎপাদন এবং সেই উৎপাদিত শক্তি কোষের বিভিন্ন কাজে ব্যয় করে। যেমন হরমোন,এন্টিবডি, এনজাইম ও প্রোটিন তৈরি সহ কোষের লক্ষ লক্ষ প্রান রাসায়নিক কাজ পরিচালনা করা। প্রতিটি পদক্ষেপই পরিচালিত হয় কোষের পরমানু সমূহের পারস্পরিক অংশগ্রহনের মাধ্যমে।
প্রতিটি কোষ সুনির্দিষ্ট ও সুশৃংখল ভাবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যšত ঁেবচে থাকে। এর কারন পরমানুর গঠন সুনির্দিষ্ট ও সুশৃংখল। কিন্তু পরমানুরা অস্থির। স্থিরতা ফিরে পাওয়া পর্যন্ত এরা ছুটাছুটি করে। তাই পরমানুরা যখন কোন কারনে অস্থির হয়ে পড়ে, তখনেই কোষের শৃংখলা নষ্ট হয়। কোষ তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। এভাবে কোন একটি অঙ্গের বেশীর ভাগ কোষ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললে অঙ্গটির সিসটেমিক কাজের বিঘœ ঘটে। যেমন হৃদপিন্ডের কাজ হচ্ছে, সংকোচন ও প্রসারন এর মাধ্যমে দেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ঠিক রাখা। হদপেশী কোষ গুলোর পারমানবিক অস্থিরতা শুরু হলেই ,হদপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারন ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটে।
মানুষের হৃদপিন্ড প্রতি মিনিটে ৭০/৭২ বার সংকোচিত ও প্রসারিত হয়। প্রতি সংকোচনে ৭০মিলি রক্ত দেহের দিকে ঠেলে দেয়। এভাবে ১ মিনিটে ৫/৬ লিটার রক্ত পাম্প করে দেহে পাঠায়। আবার ১ মিনিট সময়ের মধ্যেই রক্ত প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার পথ পরিভ্রমন করে হৃদপিন্ডে প্রবেশ করে। এ সময়ের মধ্যে রক্ত ১০০ ট্রিলিয়ন কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয় এবং একই সময়ে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের বর্জ কার্বন-ডাই- অক্সাইড গ্রহন করে , ফুসফসে পৌঁছে দেয়। প্রতিটি প্রশ্বাষ এর সময় (প্রতিমিনিটে ২০/২২ বার) এই কার্বন-ডাই- অক্সাইড দেহ থেকে বেরিয়ে যায়।
হৃদপিন্ডের এই অলৌকিক ক্ষমতার পেছনের শক্তির কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে পরমানু সমূহের প্রাকৃতিক ক্ষমতা। পরমানু সমূহ শক্তি (ইলেকট্রন) ভাগাভাগি করার সময় যে গতির সৃষ্টি করে তা প্রায় আলোর গতির সমান (প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল)। একজন ‘কার্ডিওলজিষ্ট’ হদপিন্ডের কলাকৌশল নিয়ে জানা একজন অভিজ্ঞ ব্যাক্তি। পরমানু সমূহের প্রাকৃতিক ক্ষমতার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কার্ডিওলজিষ্টদের কোন ক্ষমতা নেই। পরমানু সমূহের অস্থিরতার কারন দূর হলে , হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক কাজ ফিরে পায়।
দেহের ‘হিমোগ্লোবিন’ তৈরির কৌশল পরমানু সমূহের এক অলৌকিক খেলা। এই ‘হিমোগ্লোবিন’ তৈরি হয় হাড়ের ভিতর। হাড়ের ভিতর বিশেষ ধরনের ‘কোষ’, রক্ত ও ‘হিমোগ্লোবিন’ তৈরি করে। কোষের ভিতর ‘হিম’ (একটি আয়রন সংযুক্ত প্রোটিন অনু) এবং ‘গ্লোবিন’ (Globin) একটি প্রোটিন অনু যা ২৮৭টি এমাইনো এসিডের চেইন) আলাদা আলাদা তৈরি হয়। মহূর্তের মধ্যে ’হিম’ ও ’গ্লোবিন’ জুড়ে গিয়ে ’হিমোগ্লোবিন’ তৈরি হয়ে যায়।
দেহকে সকল ধরনের বিপদ থেকে প্রতি মুহুর্তে রক্ষা করার ক্ষমতা ও দেহকে রোগমুক্ত করে স্বুস্থ্য জীবন ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা শুধু মাত্র প্রকৃতিরই আছে।
এটিও সত্য যে, আধুনিক ড্রাগ খুব দ্রুত সাড়া দেয়। যার কারনে রোগ নিরাময় প্রার্থী প্রথমেই ড্রাগের সাহায্য নেয়। কিন্তু কোন ড্রাগের রোগ নিরাময়ী ক্ষমতা নেই।
দেহে দীর্ঘ দিন ধরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলার কারনেই দেহ রোগগ্রস্ত হয়েছে। রোগের শুরুতে প্রাকৃতিক পরিচর্যা অর্থাৎ হার্বাল ফুড এবং হার্বাল মেডিসিন দিয়ে শুরু করার পরামর্শ চিকিৎসা বিজ্ঞানাই দিচ্ছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে ড্রাগের প্রয়োজন থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ড্রাগ ব্যবস্থাপনা চালালে,ড্রাগ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে দেহকে নিরাপদ রাখতে পারে। দ্রুত ড্রাগ নির্ভরশীলতা কমে আসে এবং আরোগ্যের পথ সুগম হয়।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞনীগন.উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষনার মাধ্যমে মনুষ্য দেহের প্রানরাসায়নিক উপাদান সমূহের রাসায়নিক গঠন এবং দেহ ব্যবস্থায় এর কাজ সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে দেহ কোষ সুনির্দিষ্ট কোন প্রোটিন, হরমোন, এনজাইম, এন্টিবডি, তৈরি না কনতে পারলে গবেষনার মাধ্যমে এটি চিহিৃত ও ল্যাবে কৃত্রিম সংযোজন বা টিস্যু কালচার এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট হরমোন, এনজাইম, প্রোটিন, এন্টিবডি উৎপন্ন করা কিছুটা সম্ভব হয়েছে। দেহ কোষের সামর্থ্যরে তুলনায় ,বিজ্ঞাণিদের সার্মথ্য খুবই নগন্য। দেহ কোষ ১,৪০,০০০ হাজার প্রোটিন ,৬৫ হাজার এনজাইম, ৬৫ ধরনের হরমোন, ৩০ বিলিয়ন এন্টিবডি প্রতি মুহুর্তেই তৈরি করে চলেছে।
প্রতিটি কোষের প্রান রাসায়নিক কাজ পরিচালনার জন্য কোষের মধ্যেই নির্দেশনা দেয়া আছে। এই নির্দেশনাকেই বলা হয় ‘জেনিটিক্যল কোড’। প্রতিটি কোষের একটি প্রান কেন্দ্র রয়েছে। এটিকেই বলা হয় ‘নিউক্লিয়াস’। এর মধ্যে ২৩ জোড়া ‘ক্রমোজম’ রয়েছে। ২৩ টি এসেছে ‘ডিম্বানু’ থেকে এবং ২৩ টি এসেছে ‘ শুক্রানু’ থেকে। প্রতিটি ক্রমোজম অসংখ্য ‘জীন’ এর সমষ্টি। প্রতিটি জীন অসংখ্য ‘ ডিএনএ’এর সমষ্টি। প্রতিটি ডিএনএ অসংখ্য ‘নিউক্লিওটাইড’ এর সমষ্টি। প্রতিটি নিউক্লিওটাইড তৈরি হয়েছে একটি ‘রিবোস সুগার’ একটি ‘ পিউরিন বা পাইরিমিডিন’ (একটি প্রোটিন অনু যা এমাইনো এসিডের চেইন)) ও একটি ‘ ফসফরিক এসিড’ এর সমন্বয়ে। প্রতিটি কোষে এই নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা প্রায় ৩ বিলিয়ন।
নিউক্লিওটাইড পর্যায়ে সব সময় ভাংগা গড়ার কাজ চলে। ত্রুটি পূর্ন বা অপযাপ্ত নিউক্লিওটাইড , ত্রুটি পূর্ন ডিএনএ সৃষ্টি করে। এভাবে ত্রুটি পূর্ন জীন এর সৃষ্টি হয়। প্রতিটি জীন একটি নির্দিষ্ট কাজের গোপন সংকেত ধারন করে। অর্থাৎ একটি জীন একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন ,নির্দিষ্ট হরমোন, নির্দিষ্ট এনজাইম, নির্দিষ্ট এন্টিবডি এর গোপন সংকেত বহন করে। সুতরাং নির্দিষ্ট জীনটি ক্ষতিগ্র¯ত হলে ,এর সাথে সংশিলষ্ট প্রোটিন, হরমোন,এনজাইম, এন্টিবডি উৎপন্ন ব্যহত হয়।
একটি নিউক্লিওটাইড এর রাসায়রিক সংকেত (C5H4N4 purin+C4H10O5 Ribose
sugar+H3PO4 phosphoric acid )) পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,এটি কার্বন (C), হাইড্রোজেন(H), অক্সিজেন(O), নাইট্রোজেন(N), ফসফরাস (P) পরমানুর সমষ্টি ছাড়া অন্য কিছু নয়। মূলতঃ পরমানুগুলোর নিজস্ব আচররেই নির্দেশ করে ,পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ কি হবে।
পরমানু সমূহের অতিরিক্ত উত্তেজনার কারনে ,কোষ দেহে অস্বাভাবিক আচরন করে।
এর ফলে কোষ প্রয়োজনের তুলনায় কম বা বেশী হরমোন, এনজাইম, প্রোটিন ও এন্টিবডি তৈরি করে। যা দেহে নানা অসংগতি দেখা দেয়। আর এটিই রোগ বা রোগের উপসর্গ। যেমন ইনস্যুলিন (একটি প্রোটিন) তৈরি না হলে,দেহে ‘ডায়বেটিস’ হয়। থাইরক্সিন (একটি প্রোটিন) তৈরি না হলে ‘হাইপোথাইরয়েড’ রোগ হয়। দেহে ঠিকমত ‘এন্টিবডি’ তৈরি না হলে ‘সংক্রমক রোগ’ হয়। এই ক্ষেত্রে কিছু ‘ড্রাগ’ (সিনথেটিক ক্যামিকেল অনু যার সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক ক্রিয়া রয়েছে) দেহের রোগ উপসর্গ প্রশমন করে। এটি কোথাও জৈব রাসায়নিক কাজে প্রতিবন্ধকতা (এন্টাগনিষ্ট) আবার অন্য কোথাও কার্যকরীতা বৃদ্ধি (এগনিষ্ট) এর মাধ্যমে দেহ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
আবার কিছু কিছু ড্রাগ দেহের জৈব অনু সমূহের অনুরুপ (এনালগ) তৈরি করে প্রয়োগ করা হয়। যেমন ইনসুলিন , থাইরক্সিন,বিাভন্ন এনজাইম,হরমোন, ভিটামিন, মিনারেলস ইত্যাদী। এধরনের এনালগ ড্রাগগুলো ট্যাবলেট,ক্যাপসুল ও ইনজেকশন আকারে তৈরি হয়।
আধুনিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি সুনিপুন ভাবে কতিপয় দেহ কোষের রোগ সনাক্ত করতে পারলেও , অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেহ কোষ কে রোগগ্রস্ত করে তোলে। কারন আধুনিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে এমন সব বিকিরন যন্ত্র ও তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার হয় যা,অসুস্থ্য কোষ কে আরও অসুস্থ্য করে তোলে।
একটি বিষয় বিজ্ঞানিরা নিশ্চিত করেছেন যে, প্রানি কোষ, প্রকৃতির উদ্ভিদে প্রস্তুতকৃত জৈব অনু ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রানরাসায়নিক কাজ চালায় না। প্রকৃতির জৈব অনু গুলু কিভাবে কোষ দেহে কাজ করে তা অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে। আর এ ধরনের অনেক জৈব অনুর এনালগ ড্রাগ হিসাবে ব্যবহার
নিন্মে কিছু ড্রাগ ও রোগ প্রশমনে এর কলাকৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো:
এন্টিবায়োটিকস (সংক্রমন বিরোধী ড্রাগ):
দেহ কোষের ৯৫ ভাগ এর বেশী রোগের কারন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমন। সুতরাং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশ করতে পারলেই কোষ সংক্রমন মুক্ত হয়। সুতরাং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংশকারী রাসায়রিক উপাদানটির নাম ‘প্যানিসিলিনিক এসিড (C8H11NO3S) ’। এই রাসায়নিক উপাদানটিই সাড়া বিশ্বে ‘এন্টিবায়োটিক’ নামে পরচিত। ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ‘পেনিসেলিয়াম নোটানাম’ নামক ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ হতে এটি আবিষ্কার করেন। অন্য আরেকটি এন্টিবায়োটিক এজেন্ট ‘সেফালোসফ্যারিনিক
এসিড (C10H12N2O5S)’। এটি আবিষ্কৃত (১৯৪০) হয়েছে ‘সেফালোসফোরিন’ নামক সামুদ্রিক ছত্রাক হতে। সুতরাং দেখা যায় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সংক্রমন বিরোধী রোগে কার্যকরী ড্রাগের উৎস ‘উদ্ভিদ’। এই এজেন্ট গুলি ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর গঠন বাধাগ্রস্ত করে ব্যকটেরিয়ার মৃত্যু ঘটায়। পেনিসিলিন ও সেফালোসফোরিন (জেনেরিক নাম) এই দুইটি এন্টিবায়োটিক এখনো সাড়া বিশ্বে বহূল ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক ড্রাগ। ঔষধ
বিজ্ঞানীগন
এটির সিনথেটিক আবিষ্কার
করেছেন এবং বানিজ্যিক
ভাবে হাজারো
নামে (ব্র্যান্ড) বাজারজাত করছেন।
দেহে ব্যাকটেরিয়া বিধ্বংশী প্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে। রক্তের শ্বেত রক্ত কোষ (White blood cell )
দেহকে সব ধরনের জীবানু (ব্যকটেরিয়া,ভাইরাস, ফাংগাস) সহ সকল জীবানু কে ধ্বংশ করার ক্ষমতা রাখে। সুতরাং সঠিক উদ্ভিদ জাত খাবার দেহ কোষকে শক্তিশালী করে এবং কিছু ঔষধী উদ্ভিদ (গার্লিক, মাশরুম, জিনজার, স্পাইরুলিনা) সরাসরি ব্যাকটেরিয়া নিধনে কাজ করে। এটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, দেহের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাপনা নষ্ট হলে শুধুমাত্র ‘এন্টিবায়োটিক ড্রাগ’ দিয়ে দেহকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
জ্বরবিরোধী ড্রাগ (এন্টিপাইরেটিক):
দেহ জীবানু বা অন্য কোন টক্সিন দ্বারা আক্রান্ত হলে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এটিকেই জ্বর বলে। দেহ কোষ জীবানু বা অন্য কোন টক্সিন দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রস্টাগ্ল্যানডিন
ই-২ (এক ধরনের প্রোটিন) বৃদ্ধি পায় যা ম¯িতষ্কের একটি অংশকে (হাইপোথ্যালামাস) উত্তেজিত করে। মস্তিষ্কের এ অংশে রয়েছে জ্বর নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র।
জ্বর নিরোধক ড্রাগ গুলো প্রোস্টাগ্ল্যানডিন ই-২ তৈরিতে বাধা দেয় এবং হাইপোথ্যালামাস উত্তেজিত হয় না ফলে জ্বর কমে আসে। একটি এনজাইম COX-২ , এই Prostaglandin E-২ সংশ্লেষন করতে সাড়া জাগায়। প্যারাসিটামল (C8H9NO2) ,এসপেরিন (C7H6O3) ,ডাইক্লোফেনাক C14H11Cl2NO2 প্রভৃতি ড্রাগ, COX-2 কে বাধা প্রদান করে।
এসপেরিন ড্রাগটির উপাদান স্যালিসাইলিক এসিড। উইলো গাছের ছাল থেকে সর্বপ্রথম এটি পৃথক করা হয়। প্রাচীন চিকিৎসকগন জ¦র ও ব্যথা নিবারনের জন্য উইলো গাছের ছাল ব্যবহার করতেন। ১৮৯৯ সালে স্যালিসাইলিক এসিড ,এসপাইরিন নামে ড্রাগ হিসাবে অনুমোদন পায়। বর্তমানে এটি রক্ত পাতলা করন এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় ও অনুমোদিত ড্রাগ। তীব্র ব্যথ্যা নিবারনে প্যাথেডিন (C15H21NO2), মরফিন (C17H19NO3) ড্রাগ হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা, পপি গাছ থেকে আবিষ্কৃত হয়। প্রাচীন কালে নিস্তেজ , অবসাদ ও ঘুম এর ঔষধ হিসাবে পপি গাছের পাতা ব্যবহার হতো। বর্তমানে সিনথেটিক প্যাথেডিন ও মরফিন তৈরি হয়েছে ।
প্যাথেডিন ও মরফিন একটি শক্তিশালী Anticholinergic । এই ড্রাগ কেন্দ্রিয় ও প্রান্তিক ¯œায়ু তন্ত্রের উপর ক্রিয়া করে। এটি ¯œায়ু কোষের এসিটাইকোলিন রিসেপ্টর এ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এসিটাইকোলিন (C7H16NO2) একটি প্রোটিন যা নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে ¯œায়ু কোষ গুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। মাংশ পেশীর সংকোচন ও প্রসারন এই হরমোন এর মাধ্যমেই সংগঠিত হয়। দেহের তীব্র ব্যাথা প্রশমনের জন্য এটি ‘ইনজেকশন’ আকারে ও দেয়া হয়।
এট্রোপা বেলেডোনা গাছ থেকে আবিষ্কৃত ড্রাগ Atropine (C17H23NO3)
এর কাজ ,মরফিন ও প্যাথেডিন এর মত একই ভাবে কাজ করে। হোমিও,আয়ুরবেধ ও ইউনানি ঔষধে এই গাছ গুলোর ব্যপক ব্যবহার রয়েছে।
রক্তপাত বিরোধী ড্রাগ (Antifibrolytic drug):
ট্রানেক্সামিক এসিড Tranexamic acid ( C8H15NO2) একটি রক্তপাত বিরোধী ড্রাগ। প্রচন্ড রক্তপাত ব›দ্ধ করার জন্য এটি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও ইনজেকশন আকারে দেয়া হয়। সার্জনগন অপারেশন এর পূর্বে এই ড্রাগ ব্যবহার করেন।
প্লাজমিন একটি প্রোটিন যা রক্তকে দলা বাঁধতে বাধাঁ দেয় এবং ধমণী ও শিরা পথে রক্তের চলাচল কে নিরবছিন্ন করে। রক্তনালী অভ্যন্তরের কোষ স্তর ‘এন্ডোথেলিয়াম কোষ’ দিয়ে তৈরি। এই কোষ আহত হলে প্লাজমিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে আহত এন্ডোথেলিয়াম স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধা দেয় এবং রক্ত চলাচল ব্যবস্থার সুরক্ষা করে। দেহের ভিতর ও বাহির এর রক্তনালী ছিড়ে গেলে প্লাজমিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিাষ্ক্রয় হয়ে পড়ে এবং রক্তপাত বন্ধ করে দেয়। এন্ডোথেলিয়াম কোষে এটি নিািষ্ক্রয় ‘প্লাজমিনোজেন’ রূপে থাকে। Tranexamic
acid ( C8H15NO2) মূলতঃ পালাজমিনোজেন সক্রিয়কারী ড্রাগ। এটি প্লাজমিনোজেন কে প্লাজমিন এ রূপান্তরকারী ‘এনজাইম’কে প্রতিরোধ করে।
Tranexamic acid ( C8H15NO2) একটি সিনথেটিক ড্রাগ যা, এমাইনো এসিড ‘লাইসিন’ এর অনুরূপ।
এমাইনো এসিড
‘লাইসিন’, প্রোটিন খাদ্যের
একটি অপরিহার্য উপাদান।
সুতরাং লাইসিন সমৃদ্ধ
প্রোটিন খাদ্য গ্রহনে
দেহের রক্তপাত প্রবনতা
নিয়ন্ত্রন সম্ভব। স্পাইরুলিনা,সয়াপ্রোটিন প্রভৃতি
প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহারে
দেহে রক্তপাত বিরোধী
ব্যবস্থাপনা নেয়া যায়।
ট্যানিক এসিড (Tannic
acid C76H52O45) ও দেহে রক্তপাত বন্ধ করে। তবে এটি এসট্রিনজেন্ট (Astringent) অর্থাৎ রক্তনালী সংকোচন করে , রক্ত বন্ধ করে। বিভিন্ন গাছ যেমন, ওক গাছের ছাল, কোয়ারকাস ইনফেকটোরিয়া প্রভৃতি হার্বে এটি বেশী পরিমানে থাকে। তাই ক্ষত স্থানে দূর্বাঘাস বেটে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়। ট্যানিক এসিড রক্তপাত বিরোধী ড্রাগ হিসাবে বিক্রি হয়।
বমি বিরোধী ড্রাগ ( Antiemetic drug):
5-HT3 antagonist serotonin প্রতি বন্ধককারী ড্রাগ। সেরেটোনিন একটি প্রোটিন যা নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে। এমাইনোএসিড ‘ট্রিপটোপেন’ থেকে এটি তৈরি হয়ে। এটি দেহের পরিপাক তন্ত্রে , রক্তের প্লাটিলেট এবং কেন্দ্রিয় ¯œায়ুতন্ত্রে পাওয়া যায়। ৯০% সেরোটোনিন অবস্থান করে পরিপাকতন্ত্রের ভিতরের আস্তরনে যা, এন্টারোক্রোমাফিন কোষ দিয়ে তৈরি। পরিপাকতন্ত্রে এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের গতিকে নিয়ন্ত্রন করে। বাকী সেরোটোনিন অবস্থান করে কেন্দ্রিয় ¯œায়ুতন্ত্রে। ভেগাস নার্ভ (মস্তি ষ্ক থেকে উত্থিত স্নায়ু যা দেহের প্রধান অঙ্গ গুলোর সঞ্চালন নিয়ন্ত্রন করে) এবং ম¯িতষ্ক ¯œায়ুকোষে সেরোটোনিন রিসেপ্টর থাকে। সেরোটোনিন রিসেপ্টর ইনহিবিটর ড্রাগ (5-Ht3 Antagonist) যেমন ঝবঃৎড়হ নামক ড্রাগ সমূহ ভেগাস ও কেন্দ্রিয় ¯œায়ুতন্ত্রের সেরোটোনিন রিসেপ্টর বল্ক করে দেয়।
দেহে স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশী সেরোটোনিন উৎপন্ন হলে বা উত্তেজিত হলে বমি ও মাথাঘোরা সৃষ্টি হয়। Setron (যেমন,Ondansetron C18H19N3O) সেরোটোনিন রিসেপ্টর বল্ক করে বমি ও মাথাঘোরা নিয়ন্ত্রন করে।
রক্তের প্লাটিলেট সরাসরি সেরোটোনিন জমা করে। যখন প্লাটিলেট একত্রিত হয়ে জমাট বাঁধে , তখন সেরোটোনিন মুক্ত হয় এবং রক্তনালীর সংকোচন ঘটায় এবং রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করে। কিছু ড্রাগ যেমন, ক্যামোথ্যারাপী ,উত্তেজক খাদ্য, টক্সিন প্রভৃতি সেরোটোনিন উৎপাদনে উত্তেজনা তৈরি করে। ফলে মাথাঘোরা ও বমি হয়।
বমি বিরোধী ড্রাগ Dopamin Antagonist :
Dopamin ( C8H11NO2) একটি প্রোটিন যা, দেহে নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে কাজ করে। এমাইনোএসিড ‘ফিননাইলএলালিন’ ও ‘টাইরোসিন’ এর বিপাকের ফলে বিশেষ ধরনের ¯œায়ুকোষ ডোপামিন তৈরি করে। মস্তিষ্ক ¯œায়ুকোষে উৎপাদিত ডোপামিন ‘পুরুষ্কার’ ও ‘উদ্দিপনার’ কাজ করে। উত্তেজক ড্রাগ গুলো ডোপামিন উৎপাদনকারী কোষ কে উত্তেজিত করে। মস্তিষ্কের ডোপামিন সিসটেম দেহের মোটর নার্ভ এর কাজ এবং কিছু হরমোন নি:সরন নিয়ন্ত্রন করে। ডোপামিন সিসটেম নষ্ট হলে ‘পার্কিনসন্স’ (হাত, পা কাঁপা) রোগ হয়। ADHD , RLS এই রোগ দুটির কারন ও ডোপামিন সিসটেমের অকার্যকারীতা।
¯œায়ুকোষের বাহিরে এই ডোপামিন দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রন করে। রক্তনালীর সম্প্রসারন ঘটায়, কিডনিতে সোডিয়াম নিঃসরন বেশী ঘটায়, ফলে বেশী মূত্র নিঃসরন ঘটে। প্যাংক্রিয়াসের ইনস্যুলিন নিঃসরন কমিয়ে দেয়। পরিপাকতন্ত্রের গতিকে কমিয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাশ করে।
ডোপামিন প্রিপারেশন ড্রাগ (ইনট্রোপিন) হার্টফ্যাইলুর , কিডনিফ্যাইলুর, মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ও সেপটিক শক এ ব্যবহৃত হয়।
ডোপামিন ইনহিবিটর ড্রাগ যেমন, ডমপেরিডন উড়সঢ়বৎবফড়হ ঈ২২ঐ২৪ঈষঘ৫ঙ২ সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজিজ, মাথা ঘোরা ও বমি রোধের জন্য ব্যবহার হয়। এটি স্তন এর দুধ নিঃসরন বৃদ্ধি করে। ম¯িতষ্কের ডোপামিন নিঃসরন , ম¯িতষ্কের প্রোল্যাকটিন (একটি প্রোটিনধর্মী হরমোন যা,¯তন দুধের নিঃসরন ঘটায়) নিঃসরন কে বন্ধ রাখে।
Domperedon C22H24ClN5O2 বমি বিরোধী হার্বাল ঔষধ। হোমিও মেডিসিন ‘ইপিকাক’ বমিরোধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। Carapicho Ipecacuarha (Ipecac Root) বমি রোধক আরেকটি ড্রাগ ,যেটি ইপিকাক গাছ থেকে পৃথক করা হয়েছে।
এর্লাজী বিরোধী ড্রাগ Emetine (C29H40N2O4)
এর্লাজী হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল একটি অব্যবস্থাপনা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার চামড়া ফুলে যাওয়া এবং হাঁপানীর আক্রমন হতে পারে। এর্লাজী প্রতিক্রিয়া তখনেই ঘটে, যখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক নিয়মে বাইরের কোন পদার্থের সাথে ক্রিয়া করে দ্রুত শাšত হয়ে পড়ে। এভাবে ৪টি প্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে ‘এর্লাজী’। মাষ্টসেল, ব্যাসোফিল সেল এবং এন্টিবডি ‘ইমিউগেলাবিন-ই এর অতিরিক্ত সক্রিয়তার কারনে, কিছু এর্লাজী সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রকাশ পায়।
এর্লাজীর শুরুতে,এর্লারজেন (এর্লাজী সৃষ্টিকারী পদার্থ),এন্টিজেন-প্রেজেনটিং সেল (Th C-T helper cell) মুখোমোখি হয়। এই টি-সেল , ইন্টারলিউকিন-৪ নামে প্রোটিন তৈরি করে। এই ইন্টারলিউকিন-৪ , বি-সেল সাথে ক্রিয়া করে, ফলে এন্টিবডি ওম-ঊ উৎপন্ন হয়। এই নিঃসৃত এন্টিবডি Ig-E রক্ত ¯্রােতে প্রবাহিত হয়। মাষ্টসেল ও ব্যাসোফিল সেল এ Ig-E
Receptor রয়েছে। এই কোষ গুলো প্রথমে এর্লাজেন এর বিরুদ্ধে সাড়া জাগায় এবং নিজ দেহে প্রস্তুতকৃত ও সংরক্ষিত ‘হিস্টামিন Histamin
(C5H9N3 নিঃসরন ঘটায়। এমাইনো এসিড ‘হিস্টিডিন’ এর বিপাকের ফলে, হিস্টামিন উৎপন্ন হয়। হিস্টামিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রথম সাড়া জাগায়। এটি রক্ত জালিকার ভেদ্যতা বাড়িয়ে দেয়,ফলে শ্বেত রক্ত কোষ অতি সহজে রক্ত ¯্রােত থেকে বেরিয়ে জীবানু কে আক্রমন করে এবং হত্যা করে। হিস্টামিন নিঃসরনের ফলে চর্তুপাশ্বের টিস্যুর রক্ত জালিকা প্রসারিত হয়। মিউকাস নিঃসরন গঠে, নার্ভ এর উত্তেজনা তৈরি হয়, মসৃন পেশীর সংকোচন অবস্থা তৈরি হয়।
এন্টি হিস্টামিন ড্রাগ যেমন ক্লোরফিনামিন Chlorphenamine (C16H19ClN2 ) মাষ্টসেল ও ব্যাসোফিল সেল এর হিস্টামিন কে রিসেপ্টরে যুক্ত হতে বাঁধা দেয়।
হিস্টামিন, প্যাথোজেন বা এর্লাজেন এর বিরুদ্ধে দেহের প্রথম প্রতিরক্ষা সর্তকতা। বিভিন্ন প্রতিরক্ষা কোষ এমাইনো এসিড হিস্টিডিন থেকে এই হিস্টামিন প্রস্তুত করে। হিস্টামিন মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার
হিসাবে কাজ করে। নাক, মুখ, পায়ের পাতা, অভ্যন্তরীন অঙ্গের দেহ পৃষ্ট ও রক্ত নালিতে বেশী মাষ্টসেল থাকে। তাই এর্লাজী বা প্যাথোজেন এর আক্রমনে প্রথমেই এই অঙ্গ গুলো সাড়া দেয়।
এন্টিক্যান্সার ড্রাগ Chamotherapy:
অনিয়মিত বিভাজন, পার্শ্ববর্তী টিস্যুকোষ কে আক্রমন, একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিভ্রমন এবং সেই স্থানে পুনরায় অনিয়মিত বিভাজন ও আক্রমন এ ক্ষমতা সম্পন্ন দেহ কোষ কে ‘ক্যান্সার কোষ’ বলে। ক্যান্সার কোষ অনির্দিষ্ট কাল দেহে ঁেবচে থাকে।
স্বাভাবিক দেহ কোষের, উপরে উক্ত কোন ক্ষমতা নেই। ক্যান্সার আক্রাšত স্থানে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারেনে, ঐ অঙ্গটির আকৃতির পরিবর্তন ঘটে এবং ক্ষত সৃষ্টির কারনে ধীরে ধীরে বা দ্রুত গতিতে অঙ্গটির কার্যকারীত হারায়। এভাবে একটি অঙ্গের কার্যকারীতা নষ্ট হওয়ার কারনে , দেহের মৃত্যু ঘটে।
আধুনিক চিকিৎসায়,ক্যান্সার ব্যবস্থাপনায় সার্জারী, রেডিয়েশন থেরাপী ও ক্যামোথ্যারাপী ব্যবহার হয়।
দেহের বিভিন্ন স্থানে ‘ক্যান্সার কোষ’ এর অবস্থান অনুসারে এর নামকরন করা হয়:
কারসিনোমা: দেহ আবরনী কোষ (Epithelial Cell) এর যে কোন ক্যান্সার কোষ কে ‘কারসিনোমা’ বলে।
সারকোমা:
সংযোজনী টিস্যু যেমন, রক্ত, কার্টিলেজ, চর্বি ও ¯œায়ুকেষের ক্যান্সার কে ‘সারকোমা’ বলে।
লিউকেমিয়া ও
লিম্ফোমা হচ্ছে যথাক্রমে রক্ত কোষ ও লিম্ফ কোষের ক্যান্সার।
ক্যামোথেরাপী:
ক্যান্সার ব্যবস্থাপনায় ক্যামোথেরাপীর কাজ হচ্ছে, দেহের কোষ বিভাজন (Mitosis) ক্ষমতা কে থামিয়ে দেয়। এই থেরাপী কোষের DNA এর ক্ষতি করার মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। এটি শুধু ‘ক্যান্সার কোষ’ এর ডিএনএ কে ধ্বংশ করে না , দেহের সব কোষের ডিএনএ কে ধ্বংশ করে দেয়। কি পরিমান কোষ কে ক্ষতিগ্র¯ত করা হবে এটি নির্ভর করে ক্যামোথেরাপী ডোজের উপর। ক্যামোথেরাপী হচ্ছে অনেক গুলো সিনথেটিক ক্যামিকেল এর সম্বনয়ে, প্রতিষ্ঠিত ডোজেজ যেটি কে কেমোথেরাপিষ্ট গন ‘প্রোটোকল’ বলে অভিহিত করেন।
ক্যামোথেরাপী দুই প্রক্রিয়ায় কোষের ডিএনএ এর ক্ষতি সাধন করে:
এ্যালকাইলেটিং এজেন্ট:
এটি কোষের ডিএনএ এর সাথে ‘এলকাইল গ্রুপ’ কে সংযোগ করে দেয়। এ এজেন্ট ‘নেগেটিভ’ ও ‘পজেটিভ’ চার্জ যুক্ত হয়। নেগেটিভ এ্যালকাইলেটিং এজেন্ট, ডিএনএ এর পজেটিভ চার্জ কে গিলে ফেলে ,ফলে পারমানবিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় এবং ডিএনএ গঠন ব্যাহত হয়। একই ভাবে পজেটিভ এ্যালকাইলেটিং এজেন্ট বিপরীত প্রক্রিয়ায় ডিএনএ এর ভাঙ্গন সৃষ্টি এর।
এ্যালকাইলেটিং এজেন্ট যেমন মাষ্টার্ড গ্যাস (Mustard Gas C4H8CL2S) যুদ্ধক্ষেত্রে ক্যামিকেল মারনাস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হতো। এই যৌগটি ‘ক্লোরাইড আয়ন’ কে মুক্ত করে দেয়। ফলে ‘সালফোনিয়াম আয়ন’ তৈরি হয় যেটি পজেটিভ চার্জযুক্ত শক্তিশালী এজেন্ট। এটি ডিএনএ এর সাথে মিথাইল (এলকাইল গ্রুপ) এর স্থায়ী সংযোগ ঘটিয়ে দেয়। এভাবে ডিএনএ এর ভাঙ্গন ঘটায়। ১৯১৯
সালে গবেষনায় জানা
গেছে এটি ‘বোনম্যারো’
টিস্যুর রক্ত উৎপাদন
ব্যহত করে। ক্যান্সার ব্যবস্থাপনায় এই এজেন্ট টি ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।
এন্টিমেটাবোলাইট এজেন্ট:
এটি এক ধরনের ক্যামিকেল এজেন্ট যা, কোষের বিপাকীয় কাজ কে বাঁধা গ্র¯ত করে। যেমন, এন্টিফোলেইট ড্রাগ মেেেথাট্রেক্সইট (MTX C20H12N8O5) এই ড্রাগ ভিটামিন বি-৯ (Folic acid C19H29N7O6) কে বাঁধাগ্র¯ত করার মাধ্যমে কোষের মৃত্যু ঘটায়। কোষের ডিএনএ এ তৈরির জন্য ‘পিউরিন’ ও ‘পাইরিমিডিন’ নামক দুটি যৌগ প্রয়োজন। এই যৌগ দুটি প্রস্তুতির জন্য ফলিক এসিড প্রয়োজন। এন্টিফোলেইট ড্রাগ, ফলিক এসিডের কাজ কে ব্যহত করে ফলে ডিএনএ তৈরি ব্যহত হয়। ডিএনএ তৈরি ব্যহত হওয়ায় কোষের মৃত্যু ঘঠে।
কার্ডিয়াক ড্রাগ :
হৃদপিন্ডের ইংরেজী নাম হার্ট এবং ল্যাটিন শব্দ ‘কার্র্ডিয়াক’। এটি দেহের সেচযন্ত্র (Pump machine) হিসাবে কাজ করে। হৃদপিন্ড ধমনী, উপধমনী ও ধমনী রক্ত জালিকার মাধ্যমে সমগ্র দেহ কোষে জন্য অক্সিজেন ও পুষ্টি পাঠানোর দায়িত্ব পালন করে। শিরা রক্ত জালিকা, উপশিরা ও শিরার মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষের বর্জ পদার্থ (কার্বন ডাই অক্সাইড) বহন করে পুনরায় হৃদপিন্ডে নিয়ে আসে। হৃদপিন্ড, কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত কে ফুসফুসে প্রেরন করে। ফুসফুসে, কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের বিনিময় ঘটে। শ্বাস গ্রহনের ফলে অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং ত্যাগের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড দেহ থেকে বের হয়। দেহের রক্ত সঞ্চালন পথ প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার। ১ মিনিটের একটু বেশী সময়ের মধ্যে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বহন করে ফুসফুসে নিয়ে আসে। সুতরাং হৃদপিন্ডের কাজ ব্যাহত হলে , দেহে প্রধান দুটি আঘাত আসে। এক সমগ্র দেহ কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ বিঘœ ঘটে, দুই কার্বন ডাই অক্সাইড জমে গিয়ে দেহ কোষ ‘টক্সিন’ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। হৃদপিন্ডের কাজ বন্ধ হলে ,তাৎক্ষনিক মৃত্যু ঘটে।
হৃদপিন্ডের অনেক রোগ হতে পরে। একটি প্রধান রোগ ‘করোনারী আর্টারী
ডিজিজ’। করোনারী ল্যাটিন শব্দ অর্থাৎ হৃদপিন্ড। আর্টারী ও ল্যাটিন শব্দ অর্থাৎ রক্তবাহী নালী। করোনারী আর্টারী বলতে বুঝায় ,যে রক্তবাহী নালী হৃদপিন্ডের টিস্যুকোষে রক্ত সরবরাহ করে। আমরা জানি অক্সিজেন ও পুষ্টি ছাড়া কোষ বাঁচে না। তাই হৃদপিন্ডের রক্তবাহী নালিতে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে,হৃদপেশী কোষে রক্ত সরবরাহে বিঘœ ঘটে। হৃদপিন্ডের যে অংশে এটি শুরু হয় সেই অংশের টিস্যুকোষ অসুস্ব্য হয়। হৃদপিন্ডের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন কাজ রয়েছে। যে অংশে রক্ত সরবরাহ বিঘœ ঘটে সেই অংশের কাজ ব্যহত হয়। যেমন ডান অলিন্দের পেশী কোষে রক্ত সরবরাহ বিঘœ ঘটলে, মহাধমনী পথে রক্ত সরবরাহে বিঘœ ঘটে। ডান অলিন্দের (Left Ventrical) কার্যকারীতা হারালে মানুষের মৃত্যু ঘটে। আবার বাম অলিন্দের কার্যকারীতা হারালে, ফুসফুসে রক্ত প্রেরন ব্যহত হয় ফলে রক্তের অক্সিজেন সংযুক্তি এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এর বিমুক্তি ঘটে না। হৃদপিন্ডের কার্যাবলী সম্পর্কে অভিজ্ঞ ডাক্তার কে ‘কার্ডিওলজিষ্ট’ বলে।
হৃদরোগ ব্যবস্থাপনাকারী ড্র্াগ সমূহ:
এসিই ইনহিবিটর:(ACE Inhibitor) :
Ramipril (C23H32N2O) একটি বহুল ব্যবহৃত এনজিওটেনসিন কনভাটার এনজাইম ইনহিবিটর ড্রাগ। এনজিওটেনসিনোজেন একটি প্রোটিন যা লিভারে তৈরি হয়। রেনিন একটি এনজাইম যা কিডনিতে তৈরি হয়। এনজিওটেনসিনোজেন ও রেনিন মিলিত হয়ে এনজিওটেনসিন-১ তৈরি হয়। এনজিওটেনসিন-১, ফুসফুস এর একটি এনজাইমের সাথে ক্রিয়া করে এনজিওটেনসিন-২ তৈরি করে। এনজিওটেনসিন-২, কিডনির ‘এড্রেনাল গ্রন্থির’ হরমোন ‘এলডোসটেরন’
এর কাজ নিয়ন্ত্রন করে। ‘এলডোসটেরন’ দেহের পানি সাম্য ঠিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনায় ‘কাডিওলজিষ্টগন’ এই ড্রাগটি ব্যবহার করেন। এই ড্রাগ ‘এলডোসটেরন’ এর কাজকে প্রতিহত করে, ফলে দেহ থেকে পানি বের হয়ে যায়। পানি বের করার মাধ্যমে ‘হৃদপিন্ডের ’ কাজকে চাপমুক্ত রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন হয়।
Angiotensin-2 rceptor
blocking drug ( Losartan potassium C22H23ClN6O ) :এই ড্রাগ টি ,এনজিওটেনসিন-২ ( একটি প্রোটিন যা লিভার, কিডনি ও ফুসফুস এর সম্মিলিত অংশ গ্রহনের মাধ্যমে প্রস্তুত হয় ) কে এন্ডোক্রাইনাল গ্রন্থির এলডোসটেরন হরমোন এর সাথে যুক্ত হতে বিরত রাখে। এলডোসটেরন এর কাজ বন্ধ থাকে ফলে দেহ থেকে পানি বেরিয়ে যায়। উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে এই ড্রাগটি ব্যবহৃত হয়।
রক্ত জমাট বিরোধী ড্রাগ ( এন্টিকোয়াগুলেন্ট ) :
হেপারিন(Heparin C12H19NO20S3), ওয়ারফেরিন ( Warferin C19H16O4 ) বহুল ব্যবহিৃত এন্টিকোয়াগুলেন্ট। হেপারিন ,এন্টিথ্রোম্বিন (একটি প্রোটিন যা লিভার প্রস্তুত করে ৪৩২ টি এমাইনো এসিডের সমন্বয়ে ) এর সংগে বন্ধন তৈরি করে রক্তকে জমাট বাঁধতে বাঁধা দান করে। এন্টিথ্রোম্বিন দেহের একটি স্বাভাবিক প্রোটিন যেটি দেহের অভ্যন্তরস্থ ও বহিস্থঃ রক্তপাত বন্ধ করে দেহকে বিপদ মুক্ত রাখে। এন্ডোথেলিয়াম কোষ (ধমনী ও শিরা রক্তনালী পথের অভ্যন্তরস্থঃ কোষ ¯তর) হেপারিন প্রস্তুত করে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রাক্রিয়াকে বাঁধা বিঘœহীন রাখে। বর্তমানে জিন প্রোকৌশল ব্যবহার করে প্রানিজ হেপারিন ড্রাগ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন Enoxoparin শুকরের অন্ত্রের মিউকাস হতে তৈরি হয়েছে।
ওয়ারফেরিন এই ড্রাগটি প্রথমে পেষ্টিসাইড হিসাবে ব্যবহার শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। এখনো এটি কীটনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৫০ সালের দিকে লক্ষ্য করা যায় যে, এটির রক্ত জমাট ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৫৪ সালে এটি ড্রাগ হিসাবে ব্যবহারের অনুমোদন লাভ করে। এই ড্রাগটি ভিটামিন -কে কে বাঁধা প্রদান করে রক্ত জমাট বিরোধী কাজ করে। দেহের কোথাও রক্তপাত শুরু হলে ভিটামিন-কে এর উপস্থিতিতেই রক্তপাত বন্ধ হয়। Warfarin কে বলা হয়Vitamin k
inhibitor drug । দেহে ভিটামিন কে এর ঘাটতি থাকলে রক্ত পাত শুরু হয়।
বিভিন্ন উদ্ভিদে রক্ত জমাট বিরোধী উপাদান তৈরি হয়। যেমন ডাইকোমেরল (Dicomerol C19H12O6) যেটি প্রাকৃতিক
ফরমালডিহাইড এর উপস্থিতিতে উদ্ভিদ দেহে তৈরি হয়। ১৯৪০ সালে এটি উদ্ভিদ দেহে সনাক্ত হয় এবং ড্রাগ হিসাবে অনুমোদন পায়।
ওয়ারফেরিন মূলতঃ কিউমরিন (coumain) এর বাজার নাম। এই নামটি এসেছে Toka Bean এক ধরনের গাছের বীজ থেকে। ১৮২০ সালে এই বীজ থেকেই coumain পৃথক করা হয়। এখন সেটিই Warferin নামে ১৯৫০ সাল থেকে Anticoagulant drug হিসাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত ড্রাগ।
Clopidogrel ( C16H16ClNO2S)
: ADP receptor
inhibitor drug: রক্ত জমাট বিরোধী এই ড্রাগটি কার্ডিয়াক ডক্টরদের একটি পছন্দের ড্রাগ। এই ড্রাগটি রক্তের প্লাটিলেট (platelet) এর সাথে ADP (Adinosin di phosphate) কে যুক্ত হতে বাঁধা দেয়। ফলে platelet জমাট বদ্ধ হতে পারেনা এবং রক্ত জমাট বিরোধী ভূমিকা পালন করে।
এসপাইরিন Aspirin
(C9H8O4):
এন্টিপালাটি ড্রাগ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই ড্রাগটি Cyclo-Oxygenese
(COX-1,COX-2) Enzyme ২) ঊহুুসব কে প্রতিহত করে। ফলে Prostaglandin
C20H32O5 (এক ধরনের চর্বি) সংশ্লেষন হতে পারে না। Prostaglandin রক্তের platelet কে দলাবদ্ধ হতে বাঁধা দেয়। রক্ত জালিকায় ( এন্ডোথেলিয়াম কোষ) এটি সংষেলষিত হয় এবং রক্ত স্রোতে রক্ত জমাট প্রতিরোধ করে।
ফ্যাট জারনের ফলে Prostaglandin তৈরি হয়। Prostaglandin ভেংগে আর্কিওডোনিক এসিড ( Archidonic acid C20H32O2
or Omega 6) তৈরি হয়। আর্কিওডোনিক এসিড, একটি পলিস্যাচুরেটেড এসিড যা প্রতিটি দেহ কোষ প্রাচীরে থাকে। ম¯িতষ্ক, পেশী, যকৃত, অস্থিপেশী হচ্ছে অত্যšত সক্রিয় স্থান যেখানে এটি বেশী তৈরি হয়। এটি একটি প্রধান উদ্দিপনাকারী উপাদান যা রক্তনালী সম্প্রসারন ঘটায়।
ফসফোলাইফেজ-এ২ (একটি এনজাইম) যা প্রতিটি মানব কোষে থাকে। এটি ফসফোলিপিড (কোষ প্রাচীর স্তর) ভেঙ্গে আর্কিওডোনিক এসিড তৈরি করে। যা থেকে পরবর্তীতে Prostaglandin & Thromboxine নামে চর্বি জাত দুটি পদার্থ তৈরি হয়। Prostaglandin রক্ত নালীর সম্প্রসারন এবং Thromboxine রক্তনালীর
সংকোচন ঘটায়। এই দুটি পদার্থ পরস্পর বিপরীত মূখী কাজের মাধ্যমে দেহের সাম্য অবস্থা ঠিক রাখে।
এসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড, অক্সিজেন এবং ফ্রীরেডিক্যাল এর উপস্থিতিতে দ্রুত জারিত হয় এবং Prostaglandin & Thromboxine নামক উদ্দিপনাকারী সমূহ তৈরি করে। এটি কোষের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে কোষ বর্হিঃ শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেহ ব্যবস্থাকে সত্রিয় করে তোলে। দেহ যখন অতিমাত্রায় টক্সিন (ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, সিনথেটিক ক্যামিকেল) দ্বারা আক্রাšত হয় ,উক্ত পদার্থ গুলিও বেশী মাত্রায় তৈরি হয়। দেহে যুদ্ধ অবস্থা তৈরি হয়। এটিই রোগ লক্ষন। টক্সিন মুক্ত হওয়ার পর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
দেহকে টক্সিন
মুক্ত না করে,
শুধু Anti
prostraglandin (Aspirin, peracetamol, Diclofenac, Ibrofen, Indomethacin etc)
Anti thombroxine (Aspirin, Montileucast), Anti leucoitrine (Montileucast) drug ব্যবহার
যে ব্যবস্থাপনা দেয়া
হয় যা দেহ
কে ধীরে ধীরে
ভয়ংকর পরিনতির দিকে
ধাবিত করে।
চর্বি কমানোর ড্রাগ Statin: Atorvastatin (C33H35FN2O5), Lovastatin (C26H36O5):
একটি বহূল প্রচলিত চর্বি কমানোর ড্রাগ। কার্ডিয়াক ডিজিজ এর অন্যতম কারন রক্তে মাত্রারিক্ত চর্বির উপস্থিতি। মাত্রারিক্ত চর্বি রক্ত সঞ্চালন নালিতে জমে গিয়ে রক্ত সরবরাহ বিঘœ ঘটায়। ফলে দেহ টিস্যু কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ ব্যহত হয়। এবং ধীরে ধীরে দহ টিস্যু কোষের কার্য ক্ষমতা লোপ পায়।
করোনারী আর্টারী বন্ধ হওয়ার কারনে, হৃদপেশী কোষে রক্ত সরবরাহ ব্যহত হয়। অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে হৃদপেশী কোষের সংকোচন ও প্রসারন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে সঠিক নিয়মে রক্ত পাম্প করতে পারেনা। যার কারনে সাড়া দেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বিঘœ ঘটে। হৃদপিন্ড নিজের রক্ত নিজে ব্যবহার করতে পারে না। করোনারী আর্টারী দিয়ে হৃদপেশী কোষে রক্ত সরবরাহ হয়।
এন্টি কোলেষ্টরল (রক্ত চর্বি) ড্রাগ এই ড্রাগটি HMG-CoA enzyme inhibitor
হিসাবে কাজ করে। এই এনজাইমটি লিভারে কোলেষ্টরল উৎপাদন এর সর্বশেষ প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহন করে। ড্রাগটি এই এনজাইম কে প্রতিরোধের মাধ্যমে কোলেষ্টরল উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। লিভার দেহের প্রয়োজনের ৯০% কোলেষ্টরল উৎপাদন করে থাকে।
১৯৭১ সালে জাপানী বায়োক্যামিষ্ট আকিরা এনডো কোলেষ্টরল কমানোর ড্রাগ স্ট্যাটিন আবিষ্কার করেন। এনডো এবং তার গবেষক দল লক্ষ্য করেন যে, কিছু ক্ষুদ্র জীব HMG-CoA
enzyme inhibitor তৈরি করে যা তাদের অন্য প্রানির হাত থেকে রক্ষা করে। মেভেলোনিক এসিড (Mevelonic acid C6H12O4)থেকে সর্বশেষ ধাপে HMG-CoA enzyme কোলেষ্টরল উৎপাদন করে। মেভেলোনিক এসিড ক্ষুদ্রজীব (ব্যাকটেরিয়া,ফ্যাঙ্গাস) এর কোষ প্রাচীর তৈরিতে (Ergosterol) ব্যবহার হয়। মানব কোষ প্রাচীর তৈরি হয় কোলেষ্টরল দিয়ে যা একই ভাবে কোষ কে বর্হিশত্রুর (টক্সিন) হাত থেকে রক্ষা করে। দেহের ¯œায়ু কোষ ও তন্তু গুলোর প্রধান উপাদান কোলেষ্টরল। কোলেষ্টরল এর অভাব ঘটলে কোষ প্রাচীর গঠন মারাত্মক ভাবে ব্যহত হয়। বিশেষ করে ¯œায়ুর উপর মারাত্মক আঘাত আসে।
লিভার দেহের প্রয়োজনে কোলেষ্টরল উৎপাদন করে থাকে। প্রয়োজন ছাড়া লিভার কোলেষ্টরল উৎপাদন করে না। খাদ্য উৎস থেকে কোলেষ্টরল কম হলে লিভার উৎপাদনের মাধ্যমে তা ঠিক রাখে। আবার অধিক কোলেষ্টরল যুক্ত খাদ্য খেলে ,লিভার উৎপাদন বন্ধ রেখে এর মাত্রা ঠিক রাখে। অর্থাৎ কম বা বেশী কোলেষ্টরল দুটিই লিভার এর কাজকে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। সুতরাং এন্টিকোলেষ্টরল ড্রাগ দিয়ে কোলেষ্টরল ব্যবস্থাপনা দেহ কে ভয়ংকর বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।
ওয়েষ্টার মাশরুমে (Oyester
Mushroom) প্রাকৃতিক স্ট্যাটিন রয়েছে। লোভাস্ট্যাটিন Oyester Mushroom থেকে ১৯৭০ সালে আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮৭ সালে FDA এটিকে ড্রাগ হিসাবে অনুমোদন দেয়।
বিটা বলকার ড্রাগ ( Beta Bloker Drug) : Metoprolol (C15H25NO3): এই ড্রাগটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত একটি ড্রাগ। এটি Beta1 adrenergic
inhibitor drug হিসাবে পরিচিত। এই ড্রাগটি Adrenaline (C9H13NO3) & Noradrenaline (C9H11NO3) এই দুটি হরমোন কে কোষের সাথে যুক্ত হতে দেয় না। এই হরমোন দ্বয় প্রস্তুত হয় কিডনির Adrenal gland এ এবং মস্তিষ্কের কিছু কোষে। দেহের অনেক কোষ পৃষ্টে এই হরমোন গ্রাহী (Receptor) রয়েছে। কিডনির এড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত এই হরমোন বিভিন্ন কোষে যুক্ত হওয়ার ফলে , সিমপ্যাথেটিক ¯œায়ু উত্তেজিত হয়। এই ¯œায়ু উত্তেজনা মুহুর্তের মধ্যে ম¯িতষ্কে পৌঁছে যায় এবং ম¯িতষ্ক দ্রত গতিতে দেহের সব অঙ্গ গুলিকে সর্তক ও প্রস্তুত করে দেয়। যাতে করে দেহ আসন্ন ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারে।
এড্রেনাল রিসেপ্টর খুব বেশী পরিমানে থাকে হৃদপেশী কোষে। দেহকে সর্তক অবস্থায় প্রস্তুত হওয়ার জন্য সব চেয়ে আগে প্রয়োজন রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি। এর কারন প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি না পৌঁছালে দেহ বিপদ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হতে পারে না। দেহে যে কোন বিপদ আশংকায় এই হরমোন নিঃসরন হয়। এড্রেনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়ে রক্ত স্রোতে মিশে এবং দ্রত গতিতে হৃদপেশী কোষের রিসেপ্টর এর সাথে যুক্ত হয়। মুহুর্তের মধ্যে হৃদপেশী কোষের ¯œায়ু তন্তু উত্তেজিত হয় এবং মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। মস্তিষ্ক বিপরীত সংকেতে হার্ট বিট বাড়িয়ে দেয় যাতে অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহ সৃষ্টি হয় যাতে দেহের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বাড়তি অক্সিজেন ও পুষ্টি পেয়ে অধিকতর সক্রিয় হয়ে বিপদ মোকাবেলা করতে পারে। এ জন্যই দেদে রক্ত চাপ বৃদ্ধি পায়। এটি একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। দেহ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটি করে থাকে।
Beta Bloker Drug : Metoprolol হৃদপেশীর এড্রেনাল হরমোন রিসেপ্টর কে বল্ক করে দেয়। ফলে হরমোন যুক্ত হতে পারে না বলে হৃদপেশীর ¯œায়ু উত্তেজিত হতে পারে না। এ ড্রাগ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন এর মাধ্যমে দেহকে ভয়ংকর বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। কারন দেহে অনাহুত টক্সিন কে (ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, সিনথেটিক ক্যামিক্যল, মানসিক চাপ) প্রতিহত না করে Beta Bloker Drug ব্যবহার করে লক্ষন নিরাময়ের যে প্রচেষ্টা কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখতে হবে।
প্রাকৃতিক খাদ্যের ব্যবহার, মানসিক চাপ যুক্ত জীবন পরিহার করে রক্তচাপ ও হৃদরোগ মুক্ত জীবন যাপন সম্ভব।
ক্যালসিয়াম চ্যানেল বলকার ড্রাগ :
Amlodipine( C20H25CN2O5 )
:
একটি Calcium chanel Bloker ড্রাগ, যেটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে ব্যবহৃত হয়। পূর্বের আলোচনায় দেখেছি, দেহের বিপদ মোকাবেলায় হৃদপেশীর কম্পন (হার্টবিট) বেড়ে যায়। তৎসংগে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। সে সময়ে হৃদপেশী কোষে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম প্রবেশ করে। কোষের অভ্যšতরে ক্যালসিয়াম প্রবেশের পর হৃদপেশীর সংকোচন অবস্থা তৈরি হয়। বেশী ক্যালসিয়াম প্রবেশের ফলে বেশী সংকোচন তৈরি হয় যা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশী হার্ট বিট তৈরি করে। এর ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। হৃদপেশী কোষে ক্যালসিয়াম রিসেপ্টর রয়েছে। Calcium chanel Bloker ড্রাগ এমলোডিপিন, কোষের ক্যালসিয়াম রিসেপ্টর বলক করে দেয়। ফলে ক্যালসিয়াম প্রবেশ সম্ভব হয় না। হৃদপেশীর সংকোচন কমে আসে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন হয়। এটি কিডনি হরমোন এলডোসটেরন উৎপাদন কমিয়ে দেয় ফলে দেহ থেকে পানি বেড়িয়ে যেতে কাজ করে।
দেহের পেশীর সংকোচন ও প্রসারন, ¯œায়ুর সংকেত প্রেরন ও গ্রহন কাজে ক্যালসিয়াম মূখ্য ভ’মিকা পালন করে। কোষের মধ্যে ক্যালসিয়াম প্রবেশ ও বের হওয়ার মাধ্যমেই প্রতিটি অঙ্গের প্রতি মূহুর্তের ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
Calcium chanel Bloker উপাদান পাইরাইডিন দেহেই প্রস্তুত হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস হতেও দেহে আসে। বেলেডোনা গাছে এটি ভাল পরিমানে পাওয়া যায়। সুতরাং উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে Amlodipine এর ব্যবহার কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখা দরকার।
Click part-2: Read more
Click part-2: Read more